সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
বিশ্ব রক্তদাতা দিবস আজ

প্রয়োজনে মেলে না নেগেটিভ রক্ত

রেজা মাহমুদ
  ১৪ জুন ২০২৩, ০০:০০

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ৩ দিন ধরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি মো. রাকিব। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রক্তের পস্নাটিলেট প্রতিনিয়ত কমে যাওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু ৩১ বছরের রাকিবের রক্তের গ্রম্নপ ও নেগেটিভ। হাসপাতালের বস্নাড ব্যাংকসহ আশপাশের কোথাও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত গ্রম্নপ। অনেকেই ডোনারের সন্ধান দিলেও যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন স্বজনরা।

একই হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি ওয়ার্ডে ভর্তি এবি নেগেটিভ গ্রম্নপের রক্তধারী ফরিদপুরের সুলতানা বেগম। মাত্র ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা তিনি। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে রক্ত ক্ষরণের ফলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে তাকে। এ মুহূর্তে অপারেশন করার কোনো সুযোগ নেই, তাই চিকিৎসকরা জরুরি ভিত্তিতে রক্ত প্রদানের পরামর্শ দিয়েছেন। অনেক খোঁজাখুঁজি করে এক ব্যাগ রক্ত দেওয়া হলেও নিয়মিত বিরতিতে আরও রক্তের প্রয়োজন হবে। কিন্তু সহসাই মিলছে না এই গ্রম্নপের রক্ত কিংবা রক্তদাতার সন্ধান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রয়োজনে রক্ত পায় না দেশের অধিকাংশ নেগেটিভ গ্রম্নপের রক্তধারীরা। কোনো মতে দু-এক ব্যাগ রক্তের সন্ধান মিললেও ক্যান্সার, থ্যালাসেমিয়া, এনিমিয়া, হিমোফিলিয়া ও ডেঙ্গুসহ জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি প্রয়োজনে রক্তদাতা পাওয়া যায় না। ফলে রোগীর জীবন রক্ষায় অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েন চিকিৎসকরা।

এমনিতেই চাহিদার তুলনায় দেশে রক্তের সংকট রয়েছে। বছরে প্রায় ১৪ লাখ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু পাওয়া যায় ৭ থেকে ৮ লাখ ইউনিট। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংকট নেগেটিভ গ্রম্নপের রক্তের। এমন বাস্তবতায় আজ বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে 'বিশ্ব রক্তদাতা দিবস'। বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে- 'রক্ত দান করুন,

দান করুন পস্নাজমা, যতবার সম্ভব গ্রহণ করুন জীবন বাঁচানোর এ অনন্য সুযোগ'।

দেশের সবচেয়ে বড় বস্নাড ব্যাংক রয়েছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের। তাদের তথ্যানুযায়ী এ দেশের রক্ত চাহিদার একটা বড় অংশ প্রয়োজন হয় থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্যে। তবে নেগেটিভ রক্তধারী এই রোগে আক্রান্তরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চাহিদা অনুযায়ী রক্ত পায় না। ফলে অসহায় অবস্থা তৈরি হয় রোগী ও স্বজনদের।

হেমাটোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ সূত্রে জানা যায়, দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। থ্যালাসেমিয়ার বাহক রয়েছে এক কোটি ৭০ লাখেরও অধিক মানুষ। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে। একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর প্রতি মাসে ১ থেকে ৩ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। থ্যালাসেমিয়া ছাড়াও প্রসূতির রক্তক্ষরণ, অগ্নিদগ্ধ রোগী, দুর্ঘটনা ও ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে রয়েছে রক্তের চাহিদা। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনে রক্তের সংকটে ভোগেন রোগীরা।

দেশের বিভিন্ন বস্নাড ব্যাংকের স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতি ১শ' জন দাতার মধ্যে ৪ থেকে ৫ শতাংশেরও কম নেগেটিভ গ্রম্নপধারী দাতা। ফলে প্রয়োজনে ব্যক্তিগত ডোনারের ওপর নির্ভর করতে হয় রোগীদের। বিভিন্ন রোগীদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক ব্যাগ রক্তের জন্য এক মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের।

এদিকে দেশে প্রাপ্ত রক্তের ১ লাখ ইউনিটের উৎস কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। ৪ লাখেরও বেশি নিয়মিত রক্তদাতা রয়েছে তাদের। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ১৯২২০ জন নেগেটিভ গ্রম্নপের রক্তধারী। এর মধ্যে ও নেগেটিভ ডোনারের সংখ্যা ৬ হাজার ৪৯৩ জন, বি নেগেটিভ ৬ হাজার ৪১৯ জন, এ নেগেটিভ ৪ হাজার ৭০০ জন এবং এবি নেগেটিভ দাতার সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ৭০৮ জন। সে হিসাবে মাত্র ৪.৭৫ শতাংশ নেগেটিভ রক্তদাতা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নেগেটিভ গ্রম্নপধারী মানুষের সংখ্যা অনেক থাকলেও রক্ত প্রদান করেন খুব কমসংখ্যক মানুষ। এর জন্য মূলত দুটি কারণ রয়েছে, প্রথমত, রক্তধারীর ভুল ধারণা এবং অসচেতনতা। সেক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আরও বেশি প্রচার-প্রচারণা ও নেগেটিভ গ্রম্নপধারীদের রক্ত প্রদানে উৎসাহ দেওয়া। প্রয়োজনে ক্যাম্পেইন করে এসব মানুষদের ডাটা বেজে নিয়ে আসা। এছাড়া সরকারি যেসব ডাটা বেজে সবার রক্তের গ্রম্নপ উলেস্নখ করা থাকে, প্রয়োজনে সেখান থেকে ডাটা নিয়ে রক্তদাতাদের পরিচিতিসহ জাতীয় ডাটা বেজ তৈরি করা প্রয়োজন।

\হ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে