বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
সুইস প্রেসিডেন্টকে শেখ হাসিনা

বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করুন

নির্বাচনের উচ্চ মানদন্ড স্থাপন করতে পেরেছি জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী
যাযাদি ডেস্ক
  ১৫ জুন ২০২৩, ০০:০০
সুইজারল্যান্ড সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জেনেভায় প্রেসিডেন্ট হোটেলে বুধবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন -ফোকাস বাংলা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে সুইস কনফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অ্যালেন বেরেস্টকে অনুরোধ করেছেন। বুধবার জেনেভায় প্যালাইস ডেস ন্যাশন্স-এ তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে শেখ হাসিনা এই অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সুইস প্রেসিডেন্টের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে 'জ্ঞানের অংশীদারিত্ব এবং দক্ষতা বৃদ্ধি' শীর্ষক একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সফরকালীন আবাসস্থল 'প্রেসিডেন্ট হোটেলে' সাংবাদিকদের কাছে বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হচ্ছে। প্রায় ১ বিলিয়নের ওপর ব্যবসা হচ্ছে। আমরা যথেষ্ট রপ্তানি করছি, মূলত গার্মেন্টস রপ্তানি করি। নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুইস প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, আমাদের দেশে আপনারা আরও বিনিয়োগ করুন। বাংলাদেশে যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশকে অতিরিক্ত তিন বছর সহায়তা করতে সুইজারল্যান্ডকে অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুইস প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি বাংলাদেশ আসবেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রোহিঙ্গা ইসু্যতে আলাপের কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'সুইস প্রেসিডেন্ট ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সফর এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের কথা স্মরণ করেন। সুইজারল্যান্ড রোহিঙ্গা ইসু্যতে বাংলাদেশকে সহায়তা করে যাচ্ছে। তারা সেই সহায়তা অব্যাহত রাখবে।' আমেরিকার এক লাখ রোহিঙ্গা নেওয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমেরিকা বলেছিল, ১ লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের দেশে নেবে, এখন পর্যন্ত মাত্র ৬২ জন নিয়েছে। বলছে, তারা এক লাখ নেবে, প্রসেসিংয়ে আছে। কবে প্রসেস হবে সৃষ্টিকর্তা জানে।' দক্ষ কর্মী তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'এর ফলে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী রপ্তানির সুযোগ বাড়বে। বিশেষ করে চিকিৎসা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সম্ভাবনা আরও প্রশস্ত হবে। এই সমঝোতা দুই দেশের মধ্যে প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান বিনিময়ের অংশীদারিত্বের পথ প্রশস্ত করবে।' এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সফরকালীন আবাসস্থল 'প্রেসিডেন্ট হোটেলে' সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যেতে চায়। সম্প্রতি কিছু রোহিঙ্গা ওখানে গিয়েছিল দেখতে তারাও সন্তুষ্ট, তারা ফিরে যেতে চায়। তো প্রক্রিয়াটা শুরু হওয়া উচিত। মোমেন আরও বলেন, ফিলিপো গ্র্যান্ডিকে বলা হয়েছে, তারা যাতে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করে, যাতে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, '১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর ৬ বছর নির্বাসিত জীবন কাটানো এবং পরে দেশে ফিরে গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য যে সংগ্রাম করেছেন তা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তার পিতার যে স্বপ্ন ছিল সেটি বাস্তবায়নের কাজটাই তিনি এখন করে যাচ্ছেন।' ফিলিপো গ্র্যান্ডি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের মিয়ানমারে প্রবেশের সুযোগ আছে, তবে আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। এরপর 'প্রেসিডেন্ট হোটেলে' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রিন্স রহিম আগা খান সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। নির্বাচনের উচ্চ মানদন্ড স্থাপন করতে পেরেছি এদিকে, জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি উচ্চ মানদন্ড স্থাপন করতে পেরেছে দাবি করে জাতীয় সংসদে উলেস্নখ করে তার সরকারের সময়ে কোনো নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। নির্বাচনে জনগণ যাকে ভোট দিয়েছে সেই নির্বাচিত হয়েছে। বুধবার আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ এ প্রশ্ন করেছেন। এর আগে স্পিকার ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে রাষ্ট্রীয় সফরে সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করছেন। সংসদের বৈঠকে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিএনপির আমলে অনুষ্ঠিত ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রম্নয়ারির মতো বিতর্কিত নির্বাচন কখনো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হয়নি এবং হবেও না।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আওয়ামী লীগ কখনো ক্ষমতা দখল করতে আসেনি বরং জনগণকে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এসেছে, যাতে জনগণ তাদের সরকার বেছে নিতে পারে। আওয়ামী লীগ জনগণের ম্যান্ডেটের ওপর বিশ্বাসী। জনগণ ঠিক করবে কে দেশ চালাবে। এটা জনগণের ক্ষমতা। বর্তমান সরকার জনগণের ক্ষমতা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ। আওয়ামী লীগ সব সময়ই দেশে ওয়েস্ট মিনস্টার স্টাইলের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই-সংগ্রাম করছে।' সংসদ নেতা বলেন, 'জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষককে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারেন, যারাই পর্যবেক্ষক পাঠাতে চায় তারা পাঠাতে পারবে। আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে তখনই সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে দায়িত্বপালন করতে পারে সে জন্য সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আগামী সংসদ নির্বাচন স্বচ্ছ, অবাধ, ভীতিহীন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য করতে বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ সহায়তা দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে। দেশের জনগণ যাতে তাদের মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে সে লক্ষ্যে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন কর্মকান্ডকে এগিয়ে নিতে সরকার সদা প্রস্তুত রয়েছে। নির্বাচন কমিশন তার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী স্বাধীনভাবে কাজ করে যাবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনে যা যা করার তার সবকিছু করবে।' সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য মেরিনা জাহানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'গত তিন যুগ ধরে সংসদে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য নিরলস কাজ করছি। বাংলাদেশের জনগণই আমার শক্তি ও প্রেরণা। বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমি প্রস্তুত।' তিনি বলেন, 'ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনার ফলে বাংলাদেশ আজ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।' বগুড়া-৫ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য হাবিবর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপের আওতায় ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৫ হাজার ৭০১ গবেষককে ফেলোশিপ প্রদান করা হয়। এতে তাদের ১১৫ কোটি ৫০ লাখ ৫৯ হাজার ৫৫০ টাকা দেওয়া হয়। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সফরের কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের জনগণের মর্যাদা হানিকর কোনো হীন উদ্দেশ্যকে কখনোই প্রশ্রয় দেবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছিল তারা তা বুঝতে পেরেছেন। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো বাংলাদেশের প্রতি তাদের অব্যাহত আস্থা ও সহায়তার পরিচায়ক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে