সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তার ভাঙনে কুড়িগ্রামে অর্ধ শতাধিক বাড়িঘর বিলীন

দেবে গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩০ মিটার স্পার যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত
সিরাজগঞ্জ ও রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
  ২৮ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে স্রোত বেড়েছে কুড়িগ্রামের তিস্তা নদীতে। প্রবল স্রোতের কারণে নদীর পাড় ভাঙনের পাশাপাশি রাজারহাটের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩০ মিটার স্পার দেবে গেছে বলে জানিয়েছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। রোববার সকালে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভাঙনের কবলে পড়ে ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। এছাড়া ভাঙনের মুখে রয়েছে দু'টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি বাজার। পাশাপাশি গত দু'দিনের বন্যায় প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এদিকে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে দ্রম্নত বাড়ছে। এতে আবারও পস্নাবিত হয়েছে যমুনা অভ্যন্তরের চরাঞ্চল। দফায় দফায় আবাদি জমি পস্নাবিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চরের কৃষকরা।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাট এলাকায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে নদী ভাঙন। খিতাব খাঁ এলাকায় প্রায় ৫০টি পরিবার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকের নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই।

উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউপি সদস্য মো. মামুনুর রশীদ জানান, নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এখানে খিতাব খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন, চর খিতাব খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বুড়িরহাট বাজার হুমকির মধ্যে রয়েছে। প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে যে কোনো মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে এসব প্রতিষ্ঠান।

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তীব্র ভাঙনে উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি বাড়িঘর বিলীন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে দু'টি ইউনিয়নের ৫০০ বাড়িঘর ডুবে গেছে।

রোববার সকালে কনক্রিটের আরসিসি স্পারটি দেবে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুলস্নাহ্‌ আল মামুন বলেন, 'উজান থেকে নেমে আসা পানির তীব্র স্রোতের আঘাতে স্পারটির মাথার অংশে ৩০ মিটার দেবে গেছে। বাকি ৩০ মিটার রক্ষায় বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলানোর কাজ চলছে। ১৯৯৫ সালে নির্মিত আরসিসি স্পারটির দৈর্ঘ্য ৬০ মিটার। এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিস্তা নদীর অংশের ওই স্পারটিতে এ ঘটনা ঘটে।'

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে শুক্রবার থেকে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবল স্রোতে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাট এলাকায় তিস্তার বামতীরে নদী শাসনের জন্য নির্মিত ১৫০ মিটার মাটির বাঁধের মাথায় ৩০ মিটার করে দুই অংশে ৬০ মিটার আরসিসি স্পারের ওপর পানির প্রবল চাপ পড়ে। পানি তীব্র চাপ অব্যাহত থাকায় প্রথমে মাথার অংশে ৩০ মিটার স্পার হেলে যায়। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পানিতে দেবে যায়।

স্পারটি দেবে যাওয়ায় ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে ভাটির দিকে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রামহরি, মেদনী, কালীরমেলাসহ কয়েকটি গ্রামের ঘর-বাড়ি। স্থানীয়রা জানান, স্পার ও বাঁধের বাকি অংশ রক্ষা করা না গেলে ভাঙনের কবলে পড়বে এসব গ্রামের ঘর-বাড়িসহ নানা স্থাপনা।

বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রামহরি এলাকার ইদ্রিস আলী বলেন, স্পারটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে রাতে দুশ্চিন্তায় ঘুমাতে পারি না আমরা। দ্রম্নত এটি মেরামত না করা হলে এই এলাকাটি থাকবে না। তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাবে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ১৫০ মিটার বাঁধ ও আরসিসি স্পারের বাকি ৩০ মিটার রক্ষায় রাত-দিন কাজ চলমান থাকবে। আশা করছি বাঁধ ও বাকি আরসিসি স্পার রক্ষা করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিনহাজুল ইসলাম বলেন, 'আমরা খোঁজখবর রাখছি যাতে মানুষ নিরাপদে থাকতে পারে। নৌকা, আশ্রয়কেন্দ্র এবং শুকনো খাবার মজুত আছে। মেডিকেল টিমও তৈরি আছে। আশা করছি, আমরা এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারব।'

এদিকে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে দ্রম্নত বাড়ছে। রোববার সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২.৬১ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ১৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১২.৯০ মিটার)।

অন্যদিকে, কাজিপুরের মেঘাই পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৪.৩৭ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ২৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১৪.৮০ মিটার)।

কাওয়াকোলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জিয়া মুন্সী বলেন, 'কয়েকদিন আগে চরাঞ্চলের জমি থেকে পানি নেমে গিয়েছিল। কিছু কিছু স্থানে কৃষকরা চাষাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু আবারও পানি বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন এখানকার কৃষকরা। এখন শীতকালীন সবজি চাষের মৌসুম। দফায় দফায় পানি বেড়ে চরের আবাদযোগ্য জমিগুলো পস্নাবিত হওয়ায় চাষাবাদ করতে পারছেন না এ অঞ্চলের কৃষক।'

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান জানান, উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আবারও যমুনার পানি বাড়ছে। আগামী তিন দিন পানি বাড়বে, বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এবারও ভারী কোনো বন্যার আশঙ্কা নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে