সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

তারুণ্যের শক্তিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ :প্রধানমন্ত্রী

তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না ছাত্র সমাবেশে স্বপ্নের স্বদেশ গড়ার শপথ ছাত্রলীগের
যাযাদি রিপোর্ট
  ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। পাশে সংগঠনের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান -ফোকাস বাংলা

ছাত্রলীগের কর্মকান্ডে গর্বে আমার বুক ভরে যায় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগই এ দেশের সব সংকটে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। যদি তারা আদর্শ নিয়ে চলতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। তারুণ্যের শক্তিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

এ সময় ছাত্রলীগের প্রশংসার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত সরকারের দুর্নীতি, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ষড়যন্ত্র, ছাত্রদলের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া, ডক্টর ইউনূসের প্রসঙ্গে বড় একটি দেশের চাপ দেওয়াসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ছাত্রসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেতা মুজিব স্মরণে এই ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, শহীদের খাতায় নাম দেখতে চাইলে দেখব- ছাত্রলীগই বুকের রক্ত দিয়ে সব সংগ্রামে ছিল। এমনকি '৭৫-এর পর ছাত্রলীগই প্রথম প্রতিবাদ করে। বাংলাদেশের যে কোনো দুর্যোগে ছাত্রলীগ সক্রিয় ছিল, অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ২০০৭ সালে আমাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখন ছাত্রলীগই মাঠে নেমেছিল। এ ছাত্রলীগই হচ্ছে সেই শক্তি, যারা একদিন এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে। করোনায়ও ছাত্রলীগ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিপদের সময় আমার নির্দেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী কাস্তে হাতে কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়েছে। এজন্য তাদের প্রতি আমার অনেক বিশ্বাস এবং আস্থা।

এদিকে, বৃষ্টি-কাদা উপেক্ষা করেই সারাদেশ থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে 'স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ছাত্রসমাবেশে' যোগ দেয়। মিছিলে এবং সমাবেশে স্স্নেগান ছিল একটাই- 'ওয়ানস অ্যাগেইন শেখ হাসিনা'। বিভিন্ন ইউনিট নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে বিভিন্ন রঙের ব্যানার ফেস্টুন, পস্নাকার্ড, একেক জেলার একেক রঙের টি শার্ট, ক্যাপ পরে সমাবেশে যোগ দেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে আসা খন্ড খন্ড মিছিলে আশপাশের পুরো এলাকা সমাবেশস্থলে পরিণত হয়। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে পা ফেলার জায়গা ছিল না দোয়েল চত্বর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তায়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমিও কিন্তু ছাত্রলীগের একজন সদস্য ছিলাম। আমার ক্যাবিনেটের অনেকে ছাত্রলীগ করে আসা। ১/১১-এর সময় ছাত্রলীগ কোনো আপস করেনি। সেজন্য ছাত্রলীগকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।'

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২১ বছর পরে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সুযোগ পেয়েছিল। ১৯৯৬-২০০১-এ অল্প সময় পেয়েছিলাম, পাঁচ বছর ছিলাম। আমরা অনেক উন্নতি করেছিলাম। এরপর খালেদা জিয়া ছাত্রদলের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। আমি ছাত্রলীগের হাতে খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম। অশিক্ষিত মূর্খের হাতে খাতা তুলে দিলে দেশ এগোয় না, উন্নত হয় না।

ধনসম্পদ টাকা-পয়সা কাজে লাগে না জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, 'আমিও চাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবে। উপযুক্ত নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে উঠবে।'

আজকে অনেক সংগঠন মানবাধিকারের কথা বলে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে অনেক সংগঠন মানবাধিকারের কথা বলে। '৮১ সালে যখন আমি ফিরে এসেছি, তখন তো আমি মা-বাবা-ভাইবোন হত্যার বিচার চাইতে পারিনি। জিয়াউর রহমান খুনিদের ক্ষমতায় বসায়। প্রতি পদে পদে বাধা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু কোনো বাধাই আমাকে আটকাতে পারেনি। আমি বাবার স্বপ্নপূরণ ও মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রতিজ্ঞা করে দেশে এসেছি। মাঠের পর মাঠ হেঁটেছি। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েছি। দেখতে চেয়েছি, এদেশের মানুষের কী অবস্থা? আমার বাবা-মায়ের রক্ত নিয়ে তারা দেশের কী করেছে?

একজনকে ব্যাংকের এমডি পদে রাখতে চাপ দিয়েছিল এক বড় দেশ মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, পদ্মা সেতু করতে গিয়ে আমাদের ওপর দোষ চাপানো হয়েছে। অপবাদ দেওয়া হয়েছে। একজনকে একটি ব্যাংকের এমডি পদে রাখতে হবে। এ নিয়ে একটি বড় দেশ চাপ দিয়েছে, তাকে এমডি পদে না রাখলে পদ্মা সেতুর ঋণ দেবে না। তখন বলেছিলাম নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করব। আমরা সেটা করে বিশ্বকে দেখিয়েছি। বাংলাদেশ পারে, বাংলাদেশের মানুষ পারে। জাতির জনক বলেছিলেন, কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা কিন্তু সেই জাতি।

বিএনপি-জামায়াতের লক্ষ্য ভোট নয় ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। ইলেকশন তাদের কথা (লক্ষ্য) নয়। তারা (বিএনপি) ভোট করতে আসে না। ভোট চায় না। ভোট পাবে না। জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে আবারও তারা ছিনিমিনি খেলতে চায়। কারণ তাদের জন্ম হয়েছে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে। তারা গণতন্ত্রেও বিশ্বাস করে না। তারা নাকি এখন গণতন্ত্র উদ্ধার করবে। যাদের জন্ম মিলিটারি ডিকটেটরদের হাতে; জাতির পিতাকে সপরিবার হত্যার মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছে; সেই ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে তৈরি ওই বিএনপি আর যুদ্ধাপরাধীরা এ দেশের কল্যাণ কখনো চাইতে পারে না। তারা দেশকে ধ্বংস করতে চায়।

বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগসহ সব সংগঠনের নেতাদের সতর্ক ও সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের বিষয়ে জনগণকে মনে করিয়ে দেবেন ওরা (বিএনপি) ভোট করতে আসে না। ভোট পায় না। ভোট চায় না। ভোট পাবে না। কারণ তারা তো লুটেরা, সন্ত্রাস। মানুষের শান্তি কেড়ে নেয়। মানুষের সম্পদ-ঘরবাড়ি কেড়ে নেয়। তারা জঙ্গিতে বিশ্বাসী। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি। এরা কখনো মানুষের কল্যাণ করতে পারে না।

বিএনপির আমলের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি এসে হাওয়া ভবন খুলে খাওয়া শুরু করেছিল। ওরা ভোট করতে আসে না। ভোট পায় না। ওরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস করে। মানুষের ঘরবাড়ি কেড়ে নেয়। লুটেরা সন্ত্রাসে বিশ্বাসী, এরা মানুষের কল্যাণে বিশ্বাস করে না। ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা করে আমাদের ২৪ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে হেয়প্রতিপন্ন করেছে। ভোট তাদের কথা নয়। তারা বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায়। বিএনপি এদেশের কল্যাণ চাইতে পারে না, চায় না।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি, নিজের বা আমার ছেলেমেয়েদের না। তাদের একটাই দিয়েছি, শিক্ষা। লোন নিয়ে তারা পড়েছে। ধন-সম্পদ টাকাকড়ি কোনো কিছু কাজে লাগে না। করোনায় সবাই বুঝতে পেরেছে। আমি চাই, আমাদের ছেলেমেয়ে উপযুক্ত ও যোগ্য হয়ে গড়ে উঠবে। তারা অত্যন্ত মেধাবী। তারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

খালেদা জিয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া ছাত্রদলকে অস্ত্র তুলে দিয়ে বলেছিল, ছাত্রদল আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে যথেষ্ট। আর আমি ছাত্রলীগকে দিয়েছিলাম খাতা-কলম। বলেছিলাম, পড়াশোনা করতে হবে। লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ না হলে কোনো আদর্শ বাস্তবায়ন করা যায় না। অশিক্ষিত-মূর্খদের হাতে দেশ পড়লে তার অগ্রযাত্রা হতে পারে না।

ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে পড় সেটা পরিষ্কার রাখবা। নিজের বাড়িতে কোনো জমি যেন অনাবাদি না থাকে। যাদের জমি অনাবাদি, তাদের উৎসাহিত করবে যেন ফসল করে। বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও কোভিডের ধকল বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল। এ সময় প্রত্যেকে উৎপাদনে দৃষ্টি দিলে কারও কাছে হাত পাততে হবে না।

নিজ এলাকায় পেনশন স্কিম নিয়ে সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করতেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দায়িত্ব দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনকের এগিয়ে আনা বাংলাদেশকে তার হত্যার মধ্যদিয়ে আবার পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এসে আবার সে জায়গা থেকে বাংলাদেশকে তুলে এনেছি। স্বাধীনতা যেন ব্যর্থ না হয়। স্বাধীনতার সুফল যাতে প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়, সে ব্যবস্থা আমরা নিই।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য, এ বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করব। কবির ভাষায়, 'এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার অঙ্গীকার।' আমার কোনো ভয় নেই। বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রায় কেউ যাতে নস্যাৎ করতে না পারে, তোমাদের (ছাত্রলীগ) অতন্দ্রপ্রহরীর মতো ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি তোমাদের বলব, শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি, ছাত্রলীগের মূলনীতি।

বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, 'রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রথম প্রয়োজন সঠিক নেতৃত্ব। সঠিক নেতৃত্ব ছাড়া রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না।' আমি আশা করি, ছাত্রলীগ নেতারা নিজেদের সেভাবে গড়ে তুলবে।

এসময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা নয়া চীন এবং সিক্রেট ডকুমেন্টস বইগুলো পড়ার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, এসব বই থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।

সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনাকে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা থেকে সরাতে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে। শেখ হাসিনার কীর্তি মুছে দেশে একটি অস্বাভাবিক সরকার বসানোর ষড়যন্ত্র চলছে। দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেন আমরা ভুলি নাই। আবারও অস্বাভাবিক সরকার আনার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সেই অস্বাভাবিক সরকার বাংলার মাটিতে আমরা হতে দেব না।

তিনি আরও বলেন, আজ দেশে-বিদেশে কত ষড়যন্ত্র, কত চক্রান্তের খেলা! তারা জানে, এই দেশে ৭০ ভাগ মানুষ শেখ হাসিনাকে ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। নির্বাচনে তাকে হারাতে পারবে না। যেই জন্য ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা থেকে সরানোর চক্রান্ত করছে। নিষেধাজ্ঞা, ভিসানীতি প্রয়োগ করতে চাইছে। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের যে মুক্তি সংগ্রামের অসম সাহসীর কান্ডারি, আজকে সেই কীর্তি তারা মুছে দেওয়ার চক্রান্ত করছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিদেশি মুরব্বিদের ডাকছে, শেখ হাসিনাকে হটাতে। দরকার হলে আবার তত্ত্বাবধায়ক! আদালতের আদেশে তত্ত্বাবধায়ক মরে গেছে। সেটা কি আর জীবিত হবে? পার্লামেন্ট বিলুপ্ত হবে? সরকারের পতন হবে?

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে খেলা হবে, মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে খেলা হবে প্রস্তুত হয়ে যান। নির্বাচনের আজ বেশি সময় বাকি নাই। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রস্তুত হয়ে যান। নির্বাচনের আর বেশি সময় নেই। আচরণ সংযত করতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান সংগঠনটির সাবেক এই সভাপতি।

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে কাদের বলেন, এরা হাত-পা ধুয়ে শুয়ে গেছেন, কোথায় আন্দোলন? ১০ ডিসেম্বরের আন্দোলন গোলাপবাগের গরুর হাটে গিয়ে হোঁচট খেল, গর্তে পড়ে গেল। এখন আর পদযাত্রায় কাজ হয় না। তাই এখন শোকযাত্রা, বিএনপি শোক মিছিল শুরু করেছে। বিজয় আমাদের হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আছে, আমাদের ভয় নেই।

সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, বন্যরা যেমন বনে সুন্দর, খুনি তারেক তেমন কারাগারে সুন্দর।

তিনি আরও বলেন, নো কম্প্রোমাইজ উইথ কিলারস। খুনিদের সঙ্গে ছাত্রসমাজ কোনো আপস করবে না। এ সময় মিলিটারি ডিক্টেটরসদের কোনো পোস্টার নয় বলেও মন্তব্য করেন ছাত্রলীগ সভাপতি। সেই সঙ্গে পূর্বের মতো ছাত্রলীগ লড়াই চালিয়ে যাবে বলেও জানান। ছাত্রলীগের অভিভাবক শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে সাদ্দাম বলেন, টিউশনির টাকা বাঁচিয়ে, টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে অনেক নেতাকর্মী এই সমাবেশে এসেছে। নেত্রী, আমরা কিছু চাই না আপনার ভালোবাসা ছাড়া।

তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না ছাত্র সমাবেশে

এদিকে এদিন সকাল ৮টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সারা দেশ থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আসতে শুরু করে। একের পর এক বাস প্রবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। বেলা ১১টা থেকে সমাবেশে যোগদানের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশপথ খুলে দেওয়া হয়। তখন থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে প্রবেশপথগুলোতে। জুমার নামাজের পর বৃষ্টিতে প্রবেশপথের সামনে ভিড় কমলেও বৃষ্টি থামার পর কাদা-পানি মাড়িয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশপথের সামনে বিশাল জটলার সৃষ্টি হয়। পুলিশের চেক শেষ করে ধীরে ধীরে উদ্যানে প্রবেশ করে নেতাকর্মী।

ঢাকার বাইরে থেকে আসা বিভিন্ন ইউনিটকে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে ভিন্ন-ভিন্ন রঙের গেঞ্জি, টুপি পরে আসেন। টুপির মধ্যেও বৈচিত্র্য দেখা গেছে ইউনিটগুলোর। তাদের হাতে ছিল জেলার নাম সংবলিত পস্নাকার্ড, ব্যানার।

কুমিলস্না মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মী সবাই সাদা রঙের গেঞ্জি পরে এসেছিলেন। ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগও সাদা রঙের টি শার্ট পরে এসেছিলেন, তাতে নিজ ইউনিটের নাম লেখা ছিল। গাজীপুর ছাত্রলীগের কর্মী রকিব হাসান বলেন, আমরা সবাই মাথায় নামাজের নেট টুপি পরে এসেছি। টুপি দেখেই চেনা যাবে আমরা গাজীপুর ইউনিট।

রাজধানীর শাহবাগ ও আশপাশের এলাকা পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসা মিছিল ও সমাবেশে স্স্নোগান ছিল একটাই- 'ওয়ানস অ্যাগেইন শেখ হাসিনা'।

প্রধানমন্ত্রী সমাবেশের মঞ্চে আসেন ৩টা ৪০ মিনিটে। তারপর জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। ছাত্রলীগের দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন ছাত্রলীগের সদস্যরা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। শোক জানানো হয় এক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে।

শেখ হাসিনাকে স্মারক উপহার দিল ছাত্রলীগ

এদিকে, ছাত্রসমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে স্মারক উপহার দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যার হাতে স্মারকটি তুলে দেন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

ছাত্রলীগের অভিভাবক শেখ হাসিনাকে ব্যাচ পরিয়ে দেন সংগঠনটির চার নারী নেত্রী। এ সময় ছাত্রলীগের ম্যাগাজিন 'মাতৃভূমি'র মোড়ক উন্মোচন করা হয়। উন্মুক্ত করা হয় শোক দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত ছাত্রলীগের পোস্টার।

যে শপথ নিল ছাত্রলীগ : এদিকে ছাত্রলীগ আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে শপথ নিয়েছেন সংগঠনের নেতাকর্মী। বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে হাত তুলে শপথ বাক্য পাঠ করান ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। এসময় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশ মঞ্চে ছিলেন।

শপথ বাক্যে বলা হয়, আমরা বাঙালির মহান স্বাধীনতা ও পূর্বপুরুষের পবিত্র রক্তেভেজা প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশের নব রূপায়নের রূপকার বাঙালির নির্ভরতার শেষ ঠিকানা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নামে দৃঢ়চিত্তে শপথ করিতেছি যে, তারুণ্যের স্বপ্নের স্বদেশ, পিতার কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলা এবং কন্যার পরিকল্পিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আপসহীন, অক্লান্ত, আমৃতু্য সদা-সর্বদা সচেষ্ট থাকব। আমরা বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম, বঙ্গমাতার সাধনা, দেশরত্নের সাহসকে নিজের জীবন গঠনে ও সমৃদ্ধ স্বদেশ গড়তে মূলনীতি মানব। তারুণ্য লড়বে, তারুণ্য গড়বে, তারুণ্য দেশবিরোধী সব শক্তিকে ধ্বংস করবে। বাংলাদেশকে বিশ্ব মানচিত্রে মর্যাদাশালী করতে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভূপৃষ্ঠ থেকে মহাকাশ পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াবে। জাতির পিতার আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রশ্নে এ দেশের তরুণ প্রজন্মকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে