সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডেঙ্গুতে এক দিনে রেকর্ড ২১ মৃতু্য

যাযাদি ডেস্ক
  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের উপচেপড়া ভিড়। প্রতিদিনই বাড়ছে নতুন রোগীর সংখ্যা। ছবিটি শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা

দেশে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। সময়ের সঙ্গে পালস্না দিয়ে সারা দেশে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা। ইতোমধ্যে দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে এক দিনে মৃতু্য ও মোট মৃতের সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬১৮ জনে। পাশাপাশি শনিবার এক দিনে রেকর্ডসংখ্যক ২১ জনের মৃতু্য হয়েছে। এর আগে ২০২২ সালে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ ২৮১ জনের মৃতু্য হয়েছিল। গত বছরের ওই রেকর্ড চলতি বছরের ৫ আগস্ট ভেঙে যায়। আর চলতি মাসের প্রথম দুই দিনে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২৫ জন, আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার ৮৮৬ জন।

শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দুই হাজার ৩৫২ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৯৮২ জন। ঢাকার বাইরে ১৩৭০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গুতে ২১ জনের মৃতু্য হয়েছে যা চলতি বছর ডেঙ্গুতে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃতু্য। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১৭ জন, চারজন ঢাকার বাইরের বাসিন্দা।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ৬৯৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৫৯ হাজার ৫৯২ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৬৮ হাজার ১০২ জন।

এছাড়া এখন পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে মোট ছাড়পত্র পেয়েছেন ১ লাখ ১৮ হাজার ৪৪৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৫৫ হাজার ২৩৩ জন এবং ঢাকার বাইরের ৬৩ হাজার ২১১ জন।

এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃতু্য হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃতু্য হয়েছিল। ২০২০ সালে সাতজন ও ২০১৯ সালে ১৭৯ জনের মৃতু্য হয় ডেঙ্গু রোগে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় ওষুধ, পস্নাটিলেট পরিষেবার দাম বেড়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের খাবার জোগাতেও হিমশিম খাচ্ছে পরিবারগুলো। গত সপ্তাহে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকার প্রতি ডেঙ্গু রোগীর জন্য ৫০ হাজার টাকা করে খরচ করছে। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এই খরচ আরও বেশি। এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেক পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে।

রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ ব্যাপক বেড়েছে। বিছানা, মেঝে, বারান্দা কোথাও জায়গা মিলছে না। রোগী বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে সেবা দিতে করতে গিয়ে চিকিৎসক-নার্সরা যেমন হিমশিম খাচ্ছেন তেমনি রোগীরাও পড়ছেন নানান ভোগান্তি আর বিড়ম্বনায়। রোগী বাড়ায় ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট দেখা দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সমীক্ষা অনুসারে, এ বছর দেশের গ্রামীণ এলাকায় এডিস মশার প্রকোপ বেড়েছে তীব্রহারে। গত কয়েক মাস ধরে গ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। জরিপ অনুযায়ী, গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গু সংক্রমণের জন্য দায়ী ডমিনেন্ট স্ট্রেইন। এটি এডিস অ্যালবোপিকটাস। ডেঙ্গু সংক্রমণের জন্য দায়ী ভেক্টর এডিস মশা। এ প্রজাতির মশার দুটি প্রধান স্ট্রেইন- এডিস অ্যাজিপটি ও এডিস অ্যালবোপিকটাস।

এডিস অ্যাজিপটি মূলত শহরাঞ্চলে বেশি আর গ্রামাঞ্চলে বেশি এডিস অ্যালবোপিকটাস। এসব মশা গাছের গুঁড়ি, কলাগাছের বাকল এমনকি পাতায় জল জমে থাকা পানিসহ বিভিন্ন জায়গায় ডিম পাড়ে।

কীটতত্ত্ববিদদের মতে, এডিস এজিপটির তুলনায় এডিস অ্যালবোপিকটাস নিয়ন্ত্রণ করা অনেক বেশি কঠিন। এই জটিলতার কারণে গ্রামীণ এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। এডিস অ্যালবোপিকটাস সাধারণত প্রাকৃতিক জলাধারে বেড়ে ওঠে।

তাদের মতে, এডিস মশা মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থাগুলোর মধ্যে পরিকল্পনা, সমন্বয় ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলতি সেপ্টেম্বর মাস হবে ডেঙ্গুর জন্য আরও ভয়ংকর। তাই দ্রম্নততার সঙ্গে মশা নিধনে সংশ্লিষ্টদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে