সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হতে পারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক বন্ধ করা হচ্ছে বেনামি ওয়েবসাইট
গাফফার খান চৌধুরী
  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হতে পারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। অপপ্রচার বা গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে ব্যবহার করা হতে পারে এসব মাধ্যম। গুজব ছড়াতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হতে পারে ফেসবুক, টুইটার, ম্যাসেঞ্জার, ইমো ও ইউটিউবসহ ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটও। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ইতোমধ্যেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে গুজব ঠেকাতে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে। বৈঠকের পর থেকেই প্রতিদিন শত শত বেনামি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করা হচ্ছে। তারপরও অপতৎপরতা থামছে না বলে সবশেষ গত সোমবার ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তৎপরতার বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার যায়যায়দিনকে বলেন, যেহেতু ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে, স্বাভাবিক কারণেই প্রযুক্তির প্রভাব থাকবেই। বিশেষ করে এবারের নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটি বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে, এমনকি দাঁড়াবেও। এটিই স্বাভাবিক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতীতেও অপপ্রচার, গুজব, প্রোপাগান্ডা হয়েছে, ভবিষ্যতেও যে হবে না, তা হলফ করে বলা যাচ্ছে না। কোনো কোনো গোষ্ঠী নির্বাচনে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিতে পারে। এটি অসম্ভব কিছুই না। হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলে।

মন্ত্রী আরও বলেন, বিশেষ করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন নানা ইসু্যতে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ইমো, টুইটার ও ইউটিউবে সবচেয়ে বেশি অপপ্রচার,

গুজব বা বানোয়াট তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা বেশি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। সার্বিক পর্যালোচনায় এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেই গুজব বা অপপ্রচার চালানোর সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। এ জন্য এসব সাইটগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তাই নির্বাচনের অনেক আগ থেকেই এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ওপর নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ইতোমধ্যেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। কয়েক দফায় বৈঠকও হয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। সবশেষ গত ২৮ আগস্ট সোমবারও ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সহায়তা করবে বলে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। যার যার অবস্থান থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ যায়যায়দিনকে বলেন, বেআইনিভাবে সিমকার্ড বিক্রির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নজরদারি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে নিয়মিত মনিটরিং চলছে।

র্

যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন যায়যায়দিনকে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে সাইবার পেট্রোলিং। বিশেষভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো।

সিআইডির মিডিয়া উইংয়ের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, সিআইডির সাইবার বিভাগ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিং ছাড়াও নির্বাচন ইসু্যতে সন্দেহভাজন অর্থ লেনদেনের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

এদিকে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি তদন্তে দেখা গেছে, যেসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব বা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে, তার সবই ভুয়া। যার অ্যাকাউন্ট থেকে অপপ্রচার চালানো হয়, বাস্তবে ওই ব্যক্তির কোনো অস্তিত্ব নেই। অথচ একটি মোবাইল ফোনের সিমকার্ড ছাড়া কারও পক্ষেই কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, ম্যাসেঞ্জার বা ইমোর মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খোলা সম্ভব নয়। বিটিআরসির নির্দেশনা অমান্য করে বাংলাদেশের বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো বেআইনিভাবে সিমকার্ড বিক্রি করছে। ওইসব সিমকার্ড দিয়েই খোলা হচ্ছে বেনামি নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই ছড়ানো হচ্ছে মিথ্যা তথ্য।

সূত্রটি বলছে, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর থেকে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করছে অসাধু চক্র। সেই তথ্যের জোরেই সিমকার্ড বিক্রি হচ্ছে। সিমকার্ড বিক্রির ক্ষেত্রে সবশেষ বায়োমেট্রিক পদ্ধতি অর্থাৎ দশ আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া বাধ্যতামূলক করে বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন)। কিন্তু তাতেও বেআইনিভাবে সিমকার্ড বিক্রি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে সিমকার্ড বিক্রির সময় তার আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে রাখছেন এক শ্রেণির অসাধু সিমকার্ড বিক্রেতারা। সেই বায়োমেট্রিক দিয়েই ক্রেতার নামে সর্বোচ্চসংখ্যক সিমকার্ড রেজিস্ট্রেশন করে রাখছেন। যিনি ক্রেতা, তিনি হয়তো একটি বা দুটি সিমকার্ড কিনছেন। বাকিগুলো বিক্রি করে দিচ্ছেন অসাধু বা অপরাধী চক্রের কাছে। মূল ক্রেতা জানতেও পারছেন না, তার নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত সিমকার্ড ব্যবহৃত হচ্ছে নানা অপরাধমূলক কাজে। এসব সিমকার্ড দিয়েই ভুয়া ফেসবুক আইডিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যান্য সাইট খোলা হচ্ছে। এসব সাইট ব্যবহার করা হচ্ছে অপরাধমূলক কাজে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসব বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, বিটিআরসি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোকে বার বার চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বেআইনিভাবে সিমকার্ড বিক্রি বন্ধ করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। কোম্পানিগুলো প্রতিশ্রম্নতিও দিয়েছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। হরহামেশাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বেনামি সিমকার্ডসহ অপরাধীরা গ্রেপ্তার হচ্ছে। চলতি মাসেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া অপরাধীদের কাছে পাওয়া গেছে ৪৩টি বেআইনিভাবে বিক্রি করা সিমকার্ড। যেগুলো অন্যের নামে বেআইনিভাবে অপরাধীরা সংগ্রহ করেছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়েছে।

যদিও বিটিআরসির দাবি, সিমকার্ডের নিবন্ধন, যাচাই, পুনঃনিবন্ধন, বন্ধ সিমকার্ড চালু করা, প্রতিস্থাপন, সিমকার্ড বন্ধ করে দেওয়াসহ যাবতীয় কাজ অপারেটরদের নিজস্ব বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো খুচরা বিক্রেতারা এসব কাজ করতে পারবেন না বলেও বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। দেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের সিমকার্ডের যাবতীয় তথ্য তাদের সার্ভার স্টেশনে সংরক্ষিত আছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে