সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
বিশ্বকাপ ক্রিকেট

পাকিস্তানের সামনে আত্মবিশ্বাসী আফগানিস্তান

ক্রীড়া ডেস্ক
  ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

চলতি ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে কিছুটা হলেও সহজ জয় পেয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে এসে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে খুব বাজেভাবে হেরেছিল বাবর আজমের দল। আর চতুর্থ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারের পর আরও চেপে আছে পাকিস্তান। তাইতো সেমিফাইনালের

রেসে ভালোভাবে টিকে থাকতে হলে আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় ছাড়া অন্য কিছু চিন্তাও করতে পারছে না বাবার আজম-মোহাম্মাদ রিজওয়ানরা। একে তো চার ম্যাচের মধ্যে দুটিতে হেরে রান রেটেও বেশ খনিকটা পিছিয়ে পড়েছে পাকিস্তান।

অন্যদিকে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬ উইকেটের হার দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল আফগানিস্তান। এরপর স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষেও ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছিল রশিদ খান-মোহাম্মাদ নবীদের দল। তবে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৬৯ রানে হারিয়ে চলতি আসরে দারুণ চমক দেখায় আফগানিস্তান। জয়ের সেই ধারা তারা পরবর্তী ম্যাচে আর ধরে রাখতে পারেনি। যে কারণে নিজেরদের চতুর্থ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছেও ১৪৯ রানের বড় ব্যবধানে হার মানে আফগানরা। আজ রোববার পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততে না পারলে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ার শঙ্কায় আছে তাদের। এমন এক সমীকরণকে সামনে রেখে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে ভারতের চেন্নাইয়ে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে আফগানিস্তান। বাংলাদেশ সময় দুপুর ২.৩০ মিনিটে শুরু হবে এই ম্যাচটি। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যকার ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টিভি ও টি স্পোর্টস।

চলতি ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে নেদারল্যান্ডস ও শ্রীলংকার বিপক্ষে জয় তুলে নিয়েছিল পাকিস্তান। তবে দুই ম্যাচেই তাদের তাদের জিততে হয়েছে ঘাম ঝরিয়ে। আর তৃতীয় ম্যাচে তো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে পাত্তাই পায়নি তারা। ফলে পয়েন্ট টেবিলের সেরা চারে থাকলেও যে কোনো সময়ই ছিটকে যেতে পারেন নিজেদের অবস্থান থেকে। তাইতো আফগানিস্তানের বিপক্ষে দারুণ সতর্ক রয়েছে পাকিস্তান। যদিও নেদারল্যান্ডসকে ৮১ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল বাবর আজমের দল। পরের ম্যাচে বিশ্বকাপে রেকর্ড জয়ের নজির গড়ে পাকিস্তান।

শ্রীলংকার ছুঁড়ে দেওয়া ৩৪৫ রানের টার্গেট ১০ বল বাকি রেখে স্পর্শ করে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয় বাবর আজম ও মোহাম্মাদ রিজওয়ানরা। বিশ্বকাপে রান তাড়ায় নয়া রেকর্ড গড়ে পাকিস্তান। এতদিন বিশ্বকাপে রান তাড়ায় জয়ের রেকর্ড ছিল আয়ারল্যান্ডের। ২০১১ সালে বেঙ্গালুরুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২৮ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে রেকর্ড গড়েছিল আয়ারল্যান্ড। শ্রীলংকার বিপক্ষে পাকিস্তানের রেকর্ড জয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ান অনবদ্য ১৩১ রান ও আব্দুলস্নহ শফিক ১১৩ রান করেন।

চলতি বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচ থেকে শতভাগ সাফল্য নিয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের মুখোমুখি হয় পাকিস্তান। আহমেদাবাদে ভারতের কাছে ৭ উইকেটে হেরে যায় বাবর আজমের দল। সেদিনের ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২ উইকেটে ১৫৫ রান তুলে ভালো অবস্থায় ছিল পাকিস্তান। এরপর ব্যাটিং ধসে ১৯১ রানে গুটিয়ে যায় বাবর আজমের দল। এরপর অস্ট্রেলিয়ার কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছে তারা।

অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের দুঃস্মৃতি ভুলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে এখন সব মনোযোগ পাকিস্তানের। আফগানদের বিপক্ষে জিততে হলে ব্যাটসম্যান-বোলারদের একত্রে জ্বলে উঠতে হবে বলে মনে করেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম, 'প্রথম দুই ম্যাচ হারলেও তৃতীয় ম্যাচে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ জয় পেয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে আফগানিস্তান। জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে মুখিয়ে থাকবে তারা। আমরা যদি, ব্যাটিং- বোলিংয়ে শতভাগ উজাড় করে দিতে পারি তাহলে আফগানদের বিপক্ষে জয় পাওয়া অসম্ভব নয়। আমাদের ব্যাটিং-বোলিংয়ে আরও উন্নতি করতে হবে এবং দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে।'

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রান বন্যার ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়ে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন পাকিস্তানের সেরা পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি। টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯ উইকেট শিকারি হলেও আফ্রিদির ইকোনমি ৬ এর উপর। আফ্রিদির মতো হাসান আলিরও ইকোনমি ৬ এর উপর। ইকোনমি ৭ টপকে গেছেন হারিস রউফ। দলের বোলারদের পারফরম্যান্সের উন্নতি চান পাকিস্তানের কোচ গ্রান্ট ব্র্যাডবার্ন, 'আমাদের বোলাররা বিশ্বসেরা। তাদের সামর্থ্য সম্পর্কে আমরা জানি। শেষ তিন ম্যাচে সেরাটা দিতে পারেনি তারা। খুব দ্রম্নতই পারফরম্যান্সের উন্নতি করতে হবে বোলারদের। সামনের সব ম্যাচই এখন আমাদের জন্য ফাইনাল ম্যাচ। আফগানিস্তান শক্ত প্রতিপক্ষ। যেকোনো দলকে হারানোর সামর্থ্য আছে তাদের। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছে তারা। আমরা তিন বিভাগে ভালো খেলতে পারলে জয় অসম্ভব না। তাইতো আজ জয়ের ধারায় ফিরতেই আমরা মাঠে নামবো।'

২০১৯ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ৯টি ম্যাচের সবকটিতেই হেরেছিল আফগানিস্তান। এর মধ্যে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের কাছে ১৫০ রানের বিড় পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেয়েছিল। এবারের আসরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গত রোববার বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের দুর্দান্ত জয়ের পর আফগান কোচ জোনাথন ট্রট বলেছেন তিনি এদেশের ছেলে-মেয়েদের আরও বেশি করে ক্রিকেটের প্রতি উৎসাহিত করতে চান। সেদিন বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ৬৯ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম বড় অঘটনের জন্ম দিয়েছে আফগানিস্তান। একইসঙ্গে এর মাধ্যমে বিশ্বকাপে টানা ১৪ ম্যাচের পরাজয়ের বৃত্ত থেকেও বেরিয়ে এসেছে দলটি।

আজকের ম্যাচে আফগানিস্তানের প্রতিপক্ষ এশিয়ার চিরচেনা প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। ১৯৯২ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান এই ম্যাচে নিশ্চিতভাবেই ফেভারিট। তবে আফগানিস্তানের কোচ ট্রটের বিশ্বাস টি২০ ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার অভিজ্ঞতা আফগান খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমি মনে করি ইংলিশ খেলোয়াড়দের সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা আমরা ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছি। ঠিক তেমনি পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তার বেশ ভালোভাবে জানে। আর সেই অভিজ্ঞতাই সোমবার আমরা পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের বিপক্ষে দারুণভাবে কাজে লাগাবো। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবো।'

বিশ্বকাপে জয়ের ধারায় ফিরতে ওয়ানডেতে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম জয়ের লক্ষ্য আফগানিস্তানের। দলের ওপেনার রহমানুলস্নাহ গুরবাজ বলেন, 'ওয়ানডেতে এখনো পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততে পারিনি আমরা। এবার সেই খড়া কাটাতে চাই। বিশ্বকাপের পয়েন্ট টেবিলে ভালো অবস্থায় থাকতে হলে জয়ের ধারায় ফেরাটা জরুরি। এজন্য পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের জন্যই মাঠে নামবে দল।'

পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা দুর্দান্ত ফর্মে থাকলেও, বোলাররা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। কিন্তু পাকিস্তানকে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবেই মানছে আফগানিস্তান। গুরবাজ বলেন, 'অনেকেই বলছে, পাকিস্তানের বোলাররা সেরা ফর্মে নেই। কিন্তু আমরা এসব নিয়ে চিন্তিত নই। আমরা জানি পাকিস্তান কতটা শক্তিশালী দল। নিজেদের দিনে কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে তারা। পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়তে আমরা নিজেদের ভালোভাবে প্রস্তুত করেছি।'

এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে ৭ বার মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। এরমধ্যে সবগুলোতেই জয় পেয়েছে পাকিস্তান। গত আগস্টে ওয়ানডেতে সর্বশেষ দেখা হয়েছিলো দু'দলের। শ্রীলংকার মাটিতে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে আফগানদের হোয়াইটওয়াশ করেছিল পাকিস্তান। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তানের কাছে ১ উইকেটে হেরে জয় বঞ্চিত হয় আফগানিস্তান। আর বিশ্বকাপের মঞ্চে একবার মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান। গত বিশ্বকাপের ওই ম্যাচে পাকিস্তানকে হারানোর সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে আফগানরা। ২ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় পাকিস্তান।

পাকিস্তান দলে আছেন বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, আব্দুলস্নহ শফিক, ইমাম-উল-হক ও ফরক জামানদের মতো ব্যাটসম্যান থাকার পরও এই দলে আছেন বিশ্বসেরা পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ, হাসান আলি, উসামা মির। যারা কিনা একটি ম্যাচকে একাই ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। অন্যদিকে আফগানিস্তান দলে আছেন ফজলহক ফারুকি, আজমতউলস্নহ ওমরজাই,নাভিন উল হকের মতো পেসার ছাড়ও আছে মুজিব-উর-রহমান-রশিদ খান ও মোহাম্মাদ নবীদের মতো বিশ্বসেরা স্পিনাররা। তাইতো আজ পাকিস্তানের ব্যাটসম্যান-বোলারদের সঙ্গে আফগান পেসার ও স্পিনারদের দারুণ এক লড়াই দেখায় অপেক্ষায় আছে ক্রিকেট বিশ্ব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে