সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, নাম হবে 'হামুন'

চার সমুদ্রবন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত
যাযাদি ডেস্ক
  ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পাশাপাশি এটি আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া অক্টোবর মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মাসে (অক্টোবর) বঙ্গোপসাগরে এক থেকে তিনটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যার মধ্যে একটি নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।

এদিকে, কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সংক্রান্ত ৫ নম্বর আপডেটে জানিয়েছেন, গভীর নিম্নচাপটি যদি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় তাহলে এর নাম হবে 'হামুন'। এটি আগামী বুধবার দুপুরের পর থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে সরাসরি বাংলাদেশের খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের মাঝামাঝি এলাকার উপকূলের ওপর দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করাতে পারে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর ঘূর্ণিঝড়-প্রবণ মাস। সেই হিসেবে আগামী নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাসেও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির

সম্ভাবনা রয়েছে। ওই তিন মাসে বঙ্গোপসাগরে তিন থেকে ছয়টি লঘুচাপের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এর মধ্যে এক থেকে দুটি লঘুচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তবে, চলতি মাসে (অক্টোবর) যদি সাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্ট হয়, তাহলে বাকি একটি ঘূর্ণিঝড় নভেম্বর বা ডিসেম্বরে সৃষ্ট হতে পারে।

অন্যদিকে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারত। ভারতের মতে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার বঙ্গোপসাগরে এসে লঘুচাপে রূপ নিতে পারে। এরপর এটি আরও শক্তি সঞ্চয় করে ২৪ অক্টোবর নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। নিম্নচাপে রূপ নেওয়ার পর ঘূর্ণাবর্তটি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ও মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের দিকে অগ্রসর হতে পারে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণাবর্তটি নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ডক্টর আবুল কালাম মলিস্নক জানান, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। প্রতি ৫০ বছরের হিসাব অনুযায়ী, ওই তিন মাসে অর্থাৎ ১৮৯১ থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মোট ১০২টি ঘূর্ণিঝড় উৎপন্ন হয়েছিল। ১৯৪১ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৭টি এবং ১৯৯১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এ সংখ্যা ৫০টি হয়েছে। এ হিসাবে স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, চলতি মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। দিন দিন ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা কমে যাওয়া ইঙ্গিত দেয় যে, আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের মুখোমুখি বাংলাদেশ।

আবহাওয়া অফিস জানায়, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপটি রোববার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৮৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে।

পূর্বাভাস অনুযায়ী, নিম্নচাপটির কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্্েবাচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়।

পূর্বাভাসে জানানো হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টা অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী ৫ দিনের সারা দেশে বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে