সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

'চিটাগাং শিশু পার্ক' সিলগালা

যাযাদি ডেস্ক
  ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের পাশের 'চিটাগাং শিশু পার্ক' সিলগালা করে জমির মালিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের এক্সিকিউটিভ অফিসার সাজিয়া তাহেরকে স্থাপনাটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

পরে সেখানে একটি বিজ্ঞপ্তি টাঙানো হয়। তাতে লেখা, 'প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি। বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ। আদেশক্রমে মিলিটারি এস্টেটস অফিসার, পূর্বাঞ্চল, চট্টগ্রাম সেনানিবাস।' চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নু এমং মারমা মং ও রাকিবুল ইসলাম এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন।

নু এমং মারমা মং বলেন, শিশু পার্কের জায়গাটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে যেসব শর্তে

জমিটি ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছিল তার ব্যত্যয় ঘটায় শিশু পার্ক সিলগালা করে জমিটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে রাকিবুল হাসান বলেন, 'জমিটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের। উনাদের এক্সিকিউটিভ অফিসার উপস্থিত আছেন। আমরা পার্ক সিলগালা করেছি শুধু। জমিটি উনাদের হস্তান্তর করা হয়েছে।'

এদিকে, সার্কিট হাউজ এলাকা থেকে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর ও শিশু পার্ক অপসারণের দাবিতে গত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করে আসছে 'অপরাজেয় বাংলা' নামের একটি সংগঠন। গত শুক্রবার বিকালেও তারা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গণ থেকে শিশু পার্ক সরানোর দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে। ওই জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ এবং জনপরিসর হিসেবে উন্মুক্ত রাখার দাবি জানায় তারা।

১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর সার্কিট হাউজের সামনেই এই মাঠে চট্টগ্রামে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। পার্কটি অপসারণের বিষয়ে সরব ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও।

২০২১ সালের ৯ মে তিনি স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী, স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং চট্টগ্রামের মেয়রকে চিঠি দিয়ে 'চিটাগাং শিশু পার্ক' নামের পার্কটির ইজারা বাতিলের অনুরোধ করেছিলেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আগ্রহে ১৯৯২ সালে ১৩ জুলাই তিন একর জমিতে শিশু পার্ক স্থাপনে নগর সংস্থাটিকে অনাপত্তি দিয়েছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে ১৯৯৪ সালে ঢাকার প্রতিষ্ঠান 'ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেস লিমিটেড'কে ২৫ বছরের জন্য জমিটি প্রথমবার ইজারা দিয়েছিল সিসিসি। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ওই ইজারার মেয়াদ শেষ হয়।

এরপর ২০২০ সালের ১২ ফেব্রম্নয়ারি আবার ১৫ বছরের জন্য একই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পার্কের জমিটির ইজারা চুক্তি নবায়ন করে নগর সংস্থা। তখন সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন আ জ ম নাছির উদ্দীন।

পার্কটি অপসারণের দাবিতে ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর 'নাগরিক উদ্যোগ' নামের একটি সংগঠন মানববন্ধন করেছিল। ওই সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে ছয় মাসের দায়িত্ব পালনকালে সুজনও পার্কটি বিকল্প স্থানে সরানোর উদ্যোগ নেন। তবে সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।

১৯৮৮ সাল থেকে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের আউটার মাঠ, জিমনেসিয়াম এবং সেই সময়ের পুরাতন সার্কিট হাউজের মাঠ ঘিরে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা শুরু হলে শিশু পার্কের ওই স্থানটিতে প্রথম 'বিজয় মঞ্চ' স্থাপিত হয়েছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে