আজকের যায়যায়দিন

বাংলাদেশে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন 'বাংলাদেশ পূরণ করতে পেরেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন 'একটা আফসোস রয়ে গেছে আমার, আমার খুব ইচ্ছা ছিল, প্রধান বিচারপতি একজন নারীকে আমি করে যাব। কিন্তু আমাদের সমাজ এত বেশি কনজারভেটিভ- এগুলো ভাঙতে সময় লাগে। সেজন্য করতে পারেনি। এ আফসোসটা থেকে গেল।' তবে বেগম রোকেয়ার যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন বাংলাদেশ পূরণ করতে পেরেছে; অন্তত এটুকু দাবি করতে পারি।'

শনিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া দিবস ও বেগম রোকেয়া পদক দেওয়া উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে দেশের বিচার বিভাগে নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, 'জুডিশিয়াল সার্ভিসে নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না, এটাই ছিল পাকিস্তানের আইন। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা সমস্ত আইনগুলো পরিবর্তন করেন, এই আইন পরিবর্তনের পর আমাদের দেশের মেয়েরা জুডিশিয়াল সার্ভিসে যোগ দিতে পারেন। আমি সরকারে এসে দেখি আমাদের উচ্চ আদালতে কোনো

নারী জজ নেই। তখন আমি উদ্যোগ নিলাম, তখন মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলেছি, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলেছি, আইনমন্ত্রীকে বলেছি- উচ্চ আদালতে কোনো জজ নিয়োগ দেওয়া হলে যদি কোনো নারী জজের নাম না থাকে, আমি কখনো ওই ফাইল সই করব না, রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাব না। সেই থেকে যাত্রা শুরু।'

গরমে বিপর্যস্ত শিক্ষার্থীরা

কর্মক্ষেত্রে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'মেয়েরা রাজনীতিতেও আছে, অর্থনীতিতে আছে, পররাষ্ট্রনীতিতে আছে, আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ে... সশস্ত্র বাহিনী, সেই সঙ্গে বর্ডার গার্ড- সব ক্ষেত্রে কিন্তু নারীদের প্রবেশ সুযোগ আছে এবং তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। সাংবাদিকতা, তথ্যপ্রযুক্তি, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলা- সব ক্ষেত্রে এখন মেয়েরা তাদের দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। আপনারা জানেন, এশিয়ার শীর্ষে এখন বাংলাদেশের নারীরা, সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে গর্বের বিষয়।'

জেন্ডার সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে বাংলাদেশ উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'নারীর রাজনীতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে সপ্তম। আমাদের স্বাস্থ্য সেবাকর্মীদের ৭০ শতাংশ নারী। তৈরি পোশাক শিল্পে ৮০ শতাংশের বেশি নারীকর্মী।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'নারী-পুরুষ সবাইকে সমানভাবে এগিয়ে নিতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এখানে নারী-পুরুষ সবাইকে সমানভাবে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। আমাদের ছেলে-মেয়ে উভয়ই যেন সমানভাবে দক্ষতা অর্জন করতে পারে সে ব্যবস্থা নিয়ে, সব পরিকল্পনা করে এগিয়ে যাচ্ছি।'

আঠারো শতকে নারীদের প্রতি সামাজিক পরিস্থিতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, 'বেগম রোকেয়ার সময় মুসলমান মেয়েরা ঘরে অবরুদ্ধ থাকত। লেখাপড়ার কোনো সুযোগ ছিল না। তিনি নিজের প্রচেষ্টায় উর্দু, বাংলা, আরবি, ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করেন। তবে তার ভাই তাকে সহযোগিতা করেছেন। তার স্বামী সাখাওয়াত হোসেন বেগম রোকেয়ার লেখাপড়ার প্রতি অকুণ্ঠ আগ্রহ দেখে তার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন, তিনি স্বামীর নিকট আক্ষরিক জ্ঞান এবং বই পড়ার শিক্ষা গ্রহণ করেন। স্বামীর মৃতু্যর পর তিনি তার ভাইয়ের কাছ থেকেও অনুপ্রেরণা পান। তিনি স্বামীর নামে একটি স্কুলও তৈরি করেন। স্কুল তৈরির পরও তাকে (বেগম রোকেয়া) অনেক বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করতে হয়েছে। কারণ, স্বামীর নামে যে স্কুল করেছিলেন সেখানে ছাত্রী পড়ানো যেত না। তিনি নিজের বাড়ির বাইরে গিয়ে ছাত্রী সংগ্রহ করে আনতেন। এটা করতে গিয়ে সমাজের বাধা এবং অনেক প্রতিবন্ধকতা এসেছে। কিন্তু তিনি দমে যাননি কখনও। তার সাহসী ভূমিকাকে আমরা সব সময় শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।'

এর আগে সমাজ, নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে গৌরবোজ্জ্বল অবদান রাখা পাঁচ নারীর হাতে বেগম রোকেয়া পদক- ২০২৩ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

পদকপ্রাপ্তরা হলেন- নারী শিক্ষায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রথম নারী উপাচার্য খালেদা একরাম, (মরণোত্তর), নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় চিকিৎসক হালিদা হানুম আখতার, নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নেত্রকোনার কামরুন্নেছা আশরাফ দিনা (মরণোত্তর), পলিস্ন উন্নয়নে ঠাকুরগাঁওয়ের রনিতা বালা এবং নারী জাগরণে উদ্বুদ্ধকরণে নিশাত মজুমদার।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।