সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কুড়িগ্রামে ১৫ ডিগ্রি

উত্তরে জেঁকে বসেছে শীত

দুপুর পর্যন্ত সৈয়দপুরে ওঠানামা করেনি বিমান, ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে, শীতবস্ত্রের অভাবে কাহিল চরাঞ্চলের মানুষ
যাযাদি ডেস্ক
  ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে শীত জেঁকে বসেছে। শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের মানুষ। রোববার সকাল ৬টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস -ফোকাস বাংলা

অগ্রহায়ণের শেষভাগে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে জেঁকে বসেছে শীত। ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাব কেটে গিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র কুয়াশা। সেই সঙ্গে উত্তর থেকে প্রবাহিত হচ্ছে শীতল বাতাস। তীব্র কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা মিলছে না সারাদিনে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও রেকর্ড করা হচ্ছে উত্তরের জেলাগুলোতে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে এ অঞ্চলের মানুষের। বিশেষ করে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ বেশি বিপাকে পড়েছেন। শীতবস্ত্রের অভাবে ছিন্নমূল মানুষের সবচেয়ে করুণ। অন্যদিকে ঠান্ডার প্রকোপে বয়স্ক ও শিশুরা নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

পঞ্চগড় থেকে মো. আব্দুল কাইয়ুম জানান, হিমালয় কন্যা খ্যাত এ জেলায় ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে শীত। রোববার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। এর আগে গত শনিবার এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই সঙ্গে নামতে শুরু করেছে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও। গত শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কাছাকাছি চলে আসায় রাতের বেলা তীব্রশীত অনুভূত হচ্ছে।

শনিবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত ভারী কুয়াশায় ঢাকা থাকে গোটা জেলা। দুপুর পর্যন্ত যানবাহন চলাচল করে হেল লাইট জ্বালিয়ে। দুপুরের পর থেকে সূর্যের দেখা মিললেও উত্তরের কনকনে হিমেল বাতাস প্রবাহ অব্যাহত থাকায় সূর্যের উত্তাপ ছড়ায়নি। আবার বেলা গড়াতেই বাতাসের প্রবাহ বাড়তে থাকায় দিনের বেলাতেও শীত অনুভূত হতে থাকে।

মৌসুমের এমন শীতলতম দিনে চরম দুর্ভোগে পড়ে জেলার দুস্থ ও খেটেখাওয়া লোকজন। কনকনে শীত সাধ্যমতো গরম কাপড় গায়ে জড়িয়েই কাজে বেরিয়েছে শ্রমজীবী মানুষ। অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছে। এদিকে শীত জেঁকে বসার সঙ্গে সঙ্গে সরগরম হয়ে উঠছে শীতবস্ত্রের দোকানগুলো। অবস্থাসম্পন্ন ও মধ্যবিত্তরা সাধ্যমতো এসব দোকান থেকে সোয়েটার, জ্যাকেট, শাল চাদর কিনছেন। শীতবস্ত্রের দামও বেশ চড়া বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান,

মেঘ পুরোপুরি কেটে গেলে উত্তরের বাতাসের প্রবাহ বাড়বে, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তখন আরও কমবে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এই অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে আবু-বিন-আজাদ জানান, বৈরি আবহাওয়ার কারণে শনি ও রোববার উপজেলার কোথাও সূর্যের দেখা মেলেনি। রোববার দুপুর পর্যন্ত ঘনকুয়াশার কারণে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে কোনো বিমান ওঠানামা করেনি।

ঘন-কুয়াশা ও হিমেল ঠান্ডায় মানুষজন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এ জন্য খেটেখাওয়া মানুষজন অবর্ণনীয় কষ্টে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করছেন। শীতবস্ত্রের অভাবেও ছিন্নমূল মানুষ পড়েছেন বিপাকে। কোথাও শীতবস্ত্র বিতরণের কথা শুনলেই সেখানে জড়ো হচ্ছেন সবাই। ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে।

এদিকে, শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে এলাকার মানুষ প্রতিদিন শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন। গরিব মানুষের জন্য পুরনো শীতবস্ত্রের দোকানেও ধনী ব্যক্তিদের ভিড় বেশি দেখা গেছে। এসব কারণে দোকানদার শীতবস্ত্রের আকাশচুম্বী মূল্য হাঁকছেন।

অন্যদিকে, রোববার দুপুরে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আবহাওয়া অফিসের আইনুল ইসলাম জানান, শনিবার রাতে তাপমাত্রা ছিল ১৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশার কারণে রোববার বেলা ১২টা পর্যন্ত বিমানবন্দরে কোনো বিমান ওঠানামা করেনি।

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) থেকে প্রহলাদ মন্ডল সৈকত জানান, শীত জেঁকে বসেছে। এতে ঠান্ডাজনিত রোগের সংক্রমণ বাড়ছে। রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিস জানায়, সকাল ৬টায় কুড়িগ্রাম জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকতে দেখা গেছে বিস্তীর্ণ জনপদ। শীতবস্ত্রের অভাবে বিপাকে পড়েছেন তিস্তা ও ধরলা নদী তীরবর্তী বাঁধ ও চরের মানুষ। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকেই কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে মধ্যে ওঠানামা করছে।

এদিকে শীত নিবারণের জন্য মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো আগাম প্রস্তুতি নিলেও নিম্ন আয়ের খেটেখাওয়া ও শ্রমজীবী মানুষ শীতবস্ত্র সংগ্রহ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাবেরী রায় বলেন, 'কয়েকদিন ধরে শীতের আমেজ দেখা গেলেও শনিবার রাত থেকে শীতের তীব্রতা বেড়েছে।'

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, শীতার্ত মানুষের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ইতোমধ্যে ৯ উপজেলা ও ৩ পৌরসভায় ৩১ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ ভান্ডারে মজুদ রয়েছে আরও ১৫ হাজার কম্বল।

রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, 'রোববার সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে