সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
আলোচনা সভায় তথ্য

দেশে নিপাহ ভাইরাসে মৃতু্যহার ৭১%

কেস শনাক্ত ও সচেতনতায় জোর দেওয়ার দাবি বিশেষজ্ঞদের
যাযাদি ডেস্ক
  ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

চলতি বছর দেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ জন। এর মধ্যে ১০ জন মারা গেছেন। এছাড়া এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মোট ৩৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ২৪০ জন। আক্রান্ত বিবেচনায় মৃতু্যহার দাঁড়িয়েছে ৭১ শতাংশে। মৃতু্যহার বিবেচনায় এ পরিস্থিতি অত্যন্ত শঙ্কাজনক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

রোববার রাজধানীর মহাখালীর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) অডিটরিয়াম 'নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার এবং ঝুঁকি বিষয়ক অবহিতকরণ' শীর্ষক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

২০২৩ সালের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলা হয়, চলতি বছর সারা দেশের মোট সাতটি জেলায় ১৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রথমবারের মতো নরসিংদী জেলায় সংক্রমণ ঘটেছে। এটি নতুন করে শঙ্কার কারণ। এতদিন শুধুমাত্র উত্তরাঞ্চলে ঘটছে ধারণা করা হলেও এখন তা মধ্য অঞ্চলে পাওয়া গেছে।

অবহিতকরণ সভায় ওয়ান হেলথের ডক্টর নিতিশ দেবনাথ বলেন, 'অনেক দিন ধরে মানুষকে সচেতনতার কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু সচেতনতা তৈরি হয়নি। নিপাহ ভাইরাস অত্যন্ত কমপেস্নক্স একটি রোগ। আমরা জানি নিপাহ ভাইরাস বাদুড় থেকে মানুষে ছড়ায়। কিন্তু এটা কমপেস্নক্স প্রক্রিয়াতেও ঘটতে পারে। যেমনটা আমরা প্রথম সংক্রমণের ক্ষেত্রে দেখেছি। বাদুড়ের খাওয়া ফল শূকর, আর শূকর থেকে নিপাহ মানুষে ছড়িয়েছে। এটি আমাদের দেশেও ঘটতে পারে।'

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা) ডা. আবুল হোসেন মঈনুল বলেন, 'আমরা যতদিন আইনি বিধির মধ্যে না আনব তা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। খাবেন না বললেই মানুষ খেজুরের রস খাবে না তা নয়। এই বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা যায় কিনা তা আইইডিসিআর বিবেচনা করতে পারে।'

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক শাহদাত হোসেন বলেন, 'আমরা যে তথ্যটা দিয়েছি তা কনফার্ম কেইস। আমরা নিশ্চিত না সমসাময়িক সময়ে যারা মারা গেছেন তারা নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কিনা। আমাদের কেইস শনাক্তে আরও জোর দিতে হবে। যেহেতু এই রোগের কোনো প্রতিষেধক নেই, তাই মানুষের কাছে এর তথ্যগুলো পৌঁছে দিতে হবে। এর লক্ষ্যে আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।'

অনুষ্ঠানে নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, 'আমরা যে কয়টা সার্ভিলেন্স কাজ পরিচালনা করি তার মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে নিপাহ সার্ভিলেন্স। কিন্তু এত কিছুর পরেও নিপাহ আক্রান্ত ও মৃতু্যর ঘটনা ঘটছে। আমরা জ্বর ও খেজুরের রস খাওয়ার ইতিহাসে আটকে আছি। মালয়েশিয়া ও ভারতের কারণের সঙ্গে আমাদের মিল নেই। লক্ষণীয় বিষয়, খেজুরের রস নেই এমন দেশেও নিপাহ সংক্রমণ ঘটছে। নিপাহ ভাইরাসে মৃতু্যর হার অনেক বেশি। তাই দ্রম্নত শনাক্ত হলেই বেঁচে যাবেন তা বলা কঠিন। আর যারা বেঁচে যান তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন না। তারা পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। অর্থাৎ প্রতিরোধ ছাড়া নিপাহ থেকে মুক্তির কোনো সুযোগ নেই।'

প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে বাংলাদেশে প্রথম নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মেহেরপুর জেলায়। এরপর ২০০২, ২০০৬ ও ২০১৬ সাল ছাড়া প্রতি বছরই নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে কোনো না কোনো জেলায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয় ২০০৪ সালে। ওই বছর ৬৭ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ভাইরাসটি বর্তমানে দেশের ৩৪টি জেলায় ছড়িয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে