সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বড় জয়ে কিউইকে হারিয়ে ইতিহাস টাইগারদের

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম ওয়ানডে জয়
ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবার ওয়ানডে ম্যাচ জয়ের পর বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা -ওয়েবসাইট

দলে নেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। নেই দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল কিংবা অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ। বাংলাদেশের সফল অধিনায়করাও গত ১৬ বছরে যে কৃতিত্ব নিতে পারেননি, সেটা পেয়ে গেলেন কিছুদিন আগে নেতৃত্ব পাওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত। তার নেতৃত্বে পেসারদের দাপটে সাদা বলের ক্রিকেটে প্রথমবার কিউই দুর্গ জয় করল বাংলাদেশ।

ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে পরাজয়ের স্বাদ দিয়েছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর হাফসেঞ্চুরিতে ২০৯ বল হাতে রেখেই সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে কিউইদের বিপক্ষে ৯ উইকেটের জয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে টাইগাররা। তাতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শেষ হলো ২-১ ব্যবধানে। টাইগার পেসার শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব ও সৌম্য সরকার নিয়েছেন ৩টি করে উইকেট। ৫১ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন শান্ত। ম্যাচসেরা হয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব এবং সিরিজসেরা হয়েছেন উইল ইয়ং।

গত বছরের ডিসেম্বরে দুর্ভেদ্য কিউই দুর্গে প্রথম জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। তবে সেটা ছিল টেস্ট ক্রিকেটে। এবার সাদা বলের ক্রিকেটেও জয় তুলে নিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। তাও গত ১৬ বছরের ইতিহাসে ১৮টি ওয়ানডে ও ৯টি টি২০র পর।

আগামী বুধবার তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি২০তে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। টেস্ট ও ওয়ানডের পর এবার নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টি২০তে ডেডলক ভাঙার চ্যালেঞ্জ

টাইগারদের সামনে।

ঐতিহাসিক জয় পেলেও তাতে মন ভরেনি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর। সিরিজ শেষে অধিনায়ক বললেন, এই জয়ে স্বস্তি পেলেও তৃপ্তি পাননি তিনি 'যদি ইতিহাস চিন্তা করেন, তাহলে অবশ্যই গর্ব করার মতো ফল করেছি। একটা ম্যাচ জিততে পেরেছি। তবে আমাকে যদি ব্যক্তিগতভাবে জিজ্ঞেস করেন, আমি সিরিজ জিততেই এসেছিলাম এবং এটা বলার সময় আমি সত্যিকার অর্থেই বুঝিয়েছিলাম। প্রথম ম্যাচে বৃষ্টির জন্য আমরা হয়তো কিছুটা দুর্ভাগা ছিলাম। আমাদের বোলিং অপশনগুলো শেষ হয়ে গিয়েছিল। অবশ্যই আমরা খুশি যে জিততে পেরেছি। তবে সিরিজ জিততে পারলে আরও ভালো লাগত।'

শনিবার হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লক্ষ্যে টস জিতে কিউইদের ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। ব্যাট করতে নেমে টাইগার পেসারদের তান্ডবে মাত্র ৯৮ রানেই গুটিয়ে যায় বস্ন্যাক-ক্যাপসরা। জবাবে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৫ দশমিক ১ ওভারেই ৯ উইকেটের বড় জয় তুলে নিয়েছে শান্ত বাহিনী।

কিউইদের ছুড়ে দেওয়া অল্প পুঁজি তাড়া করতে নেমে সাবধানী শুরু করেছিলেন দুই টাইগার ওপেনার এনামুল হক বিজয় ও সৌম্য সরকার। তবে ব্যাট হাতে নামার পর থেকেই কিছুটা চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন সৌম্য। একবার চোখে পানি নেওয়ার পর ড্রপও দেওয়া হয়। তবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করায় মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন এই ওপেনার। রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১৬ বলে ৪ রান। সৌম্য ফিরলে সাবলীল ব্যাটিংয়ে বাকি কাজটা সারেন বিজয় ও ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক শান্ত। তবে দলের জয় নিশ্চিত হওয়ার আগেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন বিজয়। উইলিয়াম ও'রোকের লাফিয়ে ওঠা বলে উইকেটের পেছনে টম বস্নান্ডেলকে ক্যাচ দিয়ে ৩৭ রানে সাজঘরে ফেরেন এই ওপেনার। বাকি সময়টা দেখেশুনে খেলে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন শান্ত ও লিটন। দলের এমন স্মরণীয় জয়ের দিনে নিজের ফিফটিও তুলে নেন টাইগার দলপতি। অন্যদিকে এক রানে অপরাজিত ছিলেন লিটন।

এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই ধাক্কা খায় কিউইরা। নিজের ওভারের শেষ বলে কিউই ওপেনার রাচিন রবীন্দ্রকে উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান তানজিম সাকিব।

দলীয় ২২ রানেই ২ উইকেট হারায় কিউইরা। নিজের চতুর্থ ওভারে এসে হেনরি নিকোলসকে টপ-এজের ফাঁদে ফেলেন সাকিব। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বস্ন্যাক-ক্যাপসরা। তৃতীয় উইকেটে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন টম ল্যাথাম ও উইল ইয়ং। তবে এই জুটিকেও থিতু হতে দেননি শরিফুল। তার গুড লেন্থের ডেলিভারিতে ইনসাইড এজে ব্যক্তিগত ২১ রানেই বোল্ড ল্যাথাম। এরপর দ্রম্নতই ফেরেন মার্ক চ্যাপম্যানও। শরিফুলের ফুলার লেন্থে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় তাকে।

চ্যাপম্যানের পর টম বস্নান্ডেলকেও বেশিক্ষণ টিকতে দেননি সাকিব। ৪ রানে এই ব্যাটারকে মিরাজের ক্যাচ বানিয়েছেন ডানহাতি এই পেসার। এরপর বাকিটা সময় চমক দেখিয়েছেন সৌম্য সরকার। লোয়ার অর্ডারের তিন ব্যাটারকে ফিরিয়েছেন এই পেস অলরাউন্ডার। শুরুটা কস ক্লার্কসনকে বোল্ড করে। এরপর মিলনেকে বোল্ড এবং আদি অশোককে উইকেটের পেছনে মুশির ক্যাচ বানিয়েছেন সৌম্য। শেষবেলায় কিউইদের শেষ ব্যাটার উইলিয়াম ও'রোককে বোল্ড করে কিউইদের ৯৮ রানেই অলআউট করে দেন মুস্তাফিজ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউজিল?্যান্ড: ৩১.৪ ওভারে ৯৮ (ইয়ং ২৬, রবীন্দ্র ৮, নিকোলস ১, ল?্যাথাম ২১, বস্নান্ডেল ৪, চ?্যাপম?্যান ২, ক্লার্কসন ১৬, মিল্‌ন ৪, আশোক ১০, ডাফি ১*, ও'রোক ১; শরিফুল ৩/২২, তানজিম ৩/১৪, মুস্তাফিজ ১/৩৬, সৌম?্য ৩/১৮, মিরাজ ০/৩, রিশাদ ০/৪)।

বাংলাদেশ: ১৫.১ ওভারে ৯৯/১ (সৌম?্য আহত অবসর ৪, এনামুল ৩৭, শান্ত ৫১*, লিটন ১*; মিল্‌ন ০/১৮, ডাফি ০/২৭, ক্লার্কসন ০/১৯, ও'রোক ১/৩৩, আশোক ০/২)।

ফল: বাংলাদেশ ৯ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে নিউজিল্যান্ড ২-১ ব্যবধানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: তানজিম হাসান সাকিব

সিরিজসেরা: উইল ইয়ং

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে