সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

'মুক্তিপণের জন্য যোগাযোগ করেনি জলদসু্যরা'

সনজীব নাথ ও ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম
  ১৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

ভারত মহাসাগরে জলদসু্যদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুলস্নাহর পিছু নিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) মেরিটাইম সিকিউরিটি ফোর্সের একটি জাহাজ। সংস্থাটির সমুদ্র নিরাপত্তা বাহিনীর বরাতে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন এ তথ্য জানান। তিনি জানান, ভারত মহাসাগরে জলদসু্যদের উৎপাত এড়াতে এবং প্রতিহত করতে কাজ করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অপারেশন আটলান্টা। এর অন্তর্ভুক্ত একটি জাহাজ এমভি আব্দুলস্নাহকে ছায়ার মতো অনুসরণ করছে।

তিনি বলেন, ইন্টারনেটে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং করে জাহাজটির খোঁজখবর রাখছেন তারা। জাহাজটি সোমালিয়ার তীরের দিকে যাচ্ছে। নিরাপদে সোমালিয়া পৌঁছার পর জিম্মিকারীরা তাদের চ্যানেলে যোগাযোগ করবে সেই অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তারা।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, নৌ সার্ভেলেন্স বাড়ানোর কারণে ওই পথে জলদসু্যতা অনেক কমে এসেছিল। কিন্তু গাজা-ইসরাইল যুদ্ধ ও হুতির আক্রমণের কারণে লোহিত সাগর এখন হটস্পট। ফলে সবার মনোযোগ, নেভাল সার্ভেলেন্স ওদিকে বেড়ে গেছে। এই সুযোগটা সোমালিয়ান জলদসু্যরা কাজে লাগাচ্ছে।

ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, সোমালিয়ার জলদসু্যদের কবলে

পড়া জাহাজ এমভি আব্দুলস্নাহ এবং এতে থাকা নাবিকদের উদ্ধারে আন্তর্জাতিক তৎপরতা চালাচ্ছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কুয়ালালামপুরে পাইরেসি রিপোর্টিং সেন্টার, নয়াদিলিস্নতে ইন্ডিয়ান ফিউশন সেন্টার, যুক্তরাজ্য মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন (ইউকেএমটিও) এবং এশিয়ায় দসু্যতা ও সশস্ত্র ডাকাতি প্রতিরোধে আঞ্চলিক সহযোগিতা চুক্তির আওতায় সিঙ্গাপুরে অবস্থিত দপ্তরকে খবর দেওয়া হয়েছে। এসব সংস্থার কাছে সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ।

এছাড়া ওই অঞ্চলে চলাচলরত যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীনের জাহাজগুলোকেও বাংলাদেশের জাহাজটির অবস্থা সম্পর্কে জানানো হয়েছে বলে জানান নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর এম মাকসুদ আলম। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তিনি জানান, জলদসু্যদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুলস্নাহ সোমালিয়ার উপকূলের কাছাকাছি নোঙ্গর করেছে। সেখানে জিম্মিরা সুস্থ আছে।

তিনি বলেন, 'আমরা চাই শান্তিপূর্ণ সমাধান। জাহাজের নাবিক ও জাহাজের কোনো ক্ষতি সাধন না করে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের বিপদমুক্ত করাই আমাদের লক্ষ্য। জলদসু্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে তিনটি পক্ষ জড়িত। একটি সরকার, দ্বিতীয়টি হচ্ছে জাহাজের মালিক এবং তৃতীয় হচ্ছে জলদসু্যরা।

তিনি বলেন, এখানে মালিকপক্ষ তাদের মতো করে কাজ করবে। আমরা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থার সঙ্গে জড়িত এবং আমরা আমাদের মতো করে কাজ করব। বাংলাদেশ নেভি একটি বড় স্টেকহোল্ডার এবং তাদের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে। তাদের যে সক্ষমতা রয়েছে সেটি হয়তো ব্যবহার করবে বলে তিনি জানান।

জলদসু্যরা তাদের উদ্দেশ্য বা দাবি কী সেটি এখনো জানায়নি। সেটি প্রকাশ করলে আমরা বুঝতে পারবো কী কৌশলে আমাদের এগোতে হবে। আমরা এখন ওয়েট অ্যান্ড সি নীতি অনুসরণ করছি। তারা কতদিনের মধ্যে তাদের উদ্দেশ্য জানাবে সেটি এখনো বলা যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।

একই কথা বলেছেন জলদসু্যদের কবলে থাকা জাহাজ এমভি আব্দুলস্নাহর মালিকপক্ষ চট্টগ্রামের কবির গ্রম্নপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকানায় থাকা এসআর শিপিং কোম্পানি। সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম বলেন, জাহাজের কারও সঙ্গে এখনো পর্যন্ত যোগাযোগ হয়নি। জিম্মিকারীদের পক্ষ থেকেও যোগাযোগ করা হয়নি।

তিনি বলেন, এমভি আবদুলস্নাহ এখনো স্টপ হয়নি। এটিকে উপকূলের দিকে নেওয়া হচ্ছে। উপকূলে সেফ জোনে যাওয়ার পর হয়তো যোগাযোগের ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে। জলদসু্যদের কাছ থেকে যোগাযোগের অপেক্ষায় আছেন মালিকপক্ষ। মালিকপক্ষও নানাভাবে চেষ্টা করে জলদসু্যদের নাগাল পাচ্ছে না। ফলে এখন পর্যন্ত করণীয় ঠিক করতে পারেনি জাহাজের ও তাদের মূল কোম্পানি।

তিনি আরও বলেন, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর একই গ্রম্নপের এসআর শিপিংয়ের আরেকটি জাহাজও জলদসু্যদের কবলে পড়েছিল। সেই জাহাজের নাম 'জাহান মণি'। ৪০ কোটি টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে ১০০ দিনের মাথায় ওই জাহাজ থেকে মুক্তি পান ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রী। তখন ওই জাহাজ ছাড়িয়ে আনার দায়িত্ব পালন করেছিলেন গ্রম্নপের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। মঙ্গলবার জিম্মি হওয়া 'এমভি আবদুলস্নাহ'র ক্ষেত্রেও কাজে লাগানো হবে 'জাহান মণি' উদ্ধারের অভিজ্ঞতা এমনটা বলছেন কবির গ্রম্নপের কর্মকর্তারা।

কবির গ্রম্নপের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। এর আগেও জলদসু্যদের হাতে জিম্মি হওয়া আমাদের একটি জাহাজ ১০০ দিনের মধ্যে ২৬ নাবিকসহ অক্ষত উদ্ধার করেছি। ওই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা এবারও অক্ষত অবস্থায় নাবিকদের উদ্ধার করতে পারব।

'এমভি জাহান মণি' উদ্ধার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তা বলেন, ছিনতাইয়ের সঙ্গে কারা জড়িত এবং তারা কী চায় তা জানতে জাহাজ হাইজ্যাক হওয়ার পর আরও এক সপ্তাহ সময় লাগে। কারণ হাইজ্যাকের পর তারা জাহাজের মালিকের সংস্থার খোঁজ করে একটি প্রোফাইল তৈরি করে। তাদের মুক্তিপণের পরিমাণ কোম্পানির প্রোফাইলের ওপর নির্ভর করে। কোম্পানি যত ছোট, মুক্তিপণের দাবি তত কম। কোম্পানি যত বড়, মুক্তিপণের দাবি তত বেশি। তাদের দাবি অনুযায়ী মুক্তিপণ পরিশোধ করলে সাধারণত তারা জাহাজে থাকা নাবিকদের কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু তাদের যোগাযোগ শুরুর পর মুক্তিপণ দিয়ে উদ্ধার করতে কমপক্ষে তিন মাস সময় প্রয়োজন হয়।

জাহাজ মণির অপহৃত এক নাবিক জানান, সোমালীয় জলদসু্যরা অপহৃতদের নির্যাতন বা দুর্ব্যবহার করে না। তবে এক ধরনের আশঙ্কা থাকে, সেটি হলো জলদসু্যদের একাধিক দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব। ২০১০ সালে একই ধরনের ঘটনার শিকার হয় বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি জাহান মণি। সে বার অপহরণের শিকার হন ২৫ জন। প্রায় সাড়ে তিন মাস পর মুক্তি পেয়ে দেশে ফেরেন তারা।

সেই জাহাজের নাবিক মো. ইদ্রিস বলেন, জলদসু্যদের এই দলটিকে নিয়ে তিনি শঙ্কিত নন, তবে ভয়ের অন্য একটি কারণ আছে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার ওরা পৌঁছাবে সোমালিয়ায়। সেখানে আরেকটা গ্রম্নপও হয়তো হামলা করতে পারে, ওদের কাছ থেকে জাহাজটি নেওয়ার জন্য। সোমালীয় দসু্যদের হাতে অস্ত্র আছে। একে-৪৭ এর নিচে কোনো অস্ত্র নেই তাদের।

এই দ্বিতীয় পক্ষ হাজির না হলে অবশ্য দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলে মনে করেন ইদ্রিস। সোমালিয়ায় মাস তিনেক বন্দি জীবন কাটিয়ে আসার অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, পরিবারগুলোকে বলব, এখানে টেনশনের কিছু নাই। ওরা (জলদসু্যরা) মুক্তিপণ পেলে এদের (নাবিকদের) ছেড়ে দেবে। ওরা কোনো নির্যাতন করবে না। জাহাজে পর্যাপ্ত প্রভিশন মানে খাবার ও পানি আছে। এদিক দিয়েও চিন্তার কিছু নেই।

জলদসু্যরা ইংরেজি ও আরবিতে কথা বলতে পারে জানিয়ে মো. ইদ্রিস বলেন, আমাদের কথা বলতেও সমস্যা হয়নি। আর এস আর শিপিং যথেষ্ট সহযোগিতা করে। আমাদের ফ্যামিলিকে যতটুকু গাইড দেয়া দরকার দিয়েছে। যতটুকু সাপোর্টিং দরকার করেছে।

তবে এমভি আবদুলস্নাহর চিফ অফিসার আতিক উলস্নাহ খান তার স্ত্রীর কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় বলেছেন, এই মেসেজটা সবাইকে পাস করে দিও। আমাদের থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে আরকি। ফাইনাল কথা হচ্ছে যে, এখানে যদি টাকা না দেয়, আমাদের একজন একজন করে মেরে ফেলতে বলছে। এদের যত তাড়াতাড়ি টাকা দিবে, তত তাড়াতাড়ি ছাড়বে বলছে। এই মেসেজটা সবাইকে পাস করে দিও। এখন মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে।

এ বিষয়ে ইদ্রিস মনে করেন, এই মেরে ফেলার আশঙ্কা কম। তিনি বলেন, জলদসু্যরা আমাদের সঙ্গে যথেষ্ট ভালো আচরণই করেছে। কাউকেই নির্যাতন করেনি। টাকা পাওয়ার পরই ছেড়ে দিয়েছে। এই সময়ে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক মন্তব্য করে তিনি বলেন, অস্ত্রের মুখে থাকায় আমরা আতঙ্কে ছিলাম। তখন কিন্তু আমরা ফ্যামিলির সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারিনি। এবার নাবিকরা পরিবারের সঙ্গে শর্ট টাইমে যোগাযোগ করতে পেরেছে। আমরা মিনিমাম ৫ দিন পর ফ্যামিলির সঙ্গে কথা বলছিলাম। তবে আমরা মোটামুটি ভালোই ছিলাম। কোনো সমস্যা ছিল না।

এদিকে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়েই বুধবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম মহানগরের আগ্রাবাদে বারিক বিল্ডিং এলাকায় কবির গ্রম্নপের প্রধান কার্যালয়ে ভিড় করতে শুরু করেন জলদসু্যদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুলস্নাহর নাবিকদের পরিবারের সদস্যরা। কর্তৃপক্ষ অক্ষত অবস্থায় জিম্মি নাবিকদের ফেরানোর আশ্বাস দিলেও কিছুতেই আশ্বস্ত হতে পারছেন না তারা।

জিম্মি নাবিক নুর উদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমাকে মঙ্গলবার বিকালে কল দিয়ে আমার স্বামী বলেন তাদের জাহাজে জলদসু্য আক্রমণ করেছে। তাদের অবস্থা অনেক খারাপ। তাদের অফিসে কল দিয়ে বিষয়টি জানাতে। আমি সঙ্গে সঙ্গে তাদের অফিসে কল দিয়ে জানাই। আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই, আমার স্বামীকে এনে দেন। আমার টাকা-পয়সা দরকার নেই।'

নাবিক শরিফুল ইসলামের ভাই দিদারুল ইসলাম বলেন, আমার সাথে আমার ভাইয়ের শেষ কথা হয় মঙ্গলবার ইফতারের পরে। তখন আমার ভাই বলে তাদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমাদের সাথে তার শেষ কথা হচ্ছে। সামনে আর কথা বলতে পারবে কিনা তা নিয়ে সে শঙ্কায় ছিল। সে আমাদের সবার কাছে শুধু দোয়া চেয়েছে।

তিনি বলেন, 'কর্তৃপক্ষ আমাদের বলেছে, লন্ডনে তাদের ইন্সু্যরেন্স কোম্পানির পক্ষ থেকে যা করার করা হচ্ছে। আমাদের পরিবারের সদস্যদের তারা অক্ষত অবস্থায় ফেরত দিবে এমন আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু আশ্বস্ত ওরা করলেও আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না। কারণ, উদ্ধারের প্রক্রিয়াটা সময়সাপেক্ষ। আমাদের তো উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ভুগতে হচ্ছে।'

জিম্মি এক নাবিকের মা বলেন, 'আমাদের নাম-ঠিকানা নেওয়া ছাড়া কর্তৃপক্ষ আর কিছুই বলেনি এখনো পর্যন্ত। আমরা আমাদের ছেলেকে ফেরত চাই। আমার ছেলেকে যেন আমার বুকে যেন ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সেটা যেভাবেই হোক। সরকার এবং কবির গ্রম্নপের পক্ষ থেকে যেভাবে মুক্তিপণ চাচ্ছে জলদসু্যরা তা দিয়ে হলেও যেন আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে আনা হয়।'

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, 'সোমালিয়ান জলদসু্যদের হাতে জিম্মি জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারের জন্য মালিকপক্ষ যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এর আগেও একটি ঘটনার অভিজ্ঞতা রয়েছে মালিকপক্ষের। সুতরাং এর আগেও যেহেতু তারা একটি জাহাজকে উদ্ধার করে এনেছে এটাও পারবে।'

তিনি বলেন, এর আগে আরও অনেক জাহাজের বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু সোমালিয়ান জলদসু্যদের কাছে অতীতে জিম্মি হয়েছিলেন। তাদের কেউ ২০ মাস পর, কেউ ১০ মাস পর জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পান। ২০১২ সালে সোমালিয়ান জলদসু্যদের হাতে ২০ মাসেরও বেশি সময় জিম্মি থাকার পর বাংলাদেশি সাত নাবিক মুক্তি পান। ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর ভারত মহাসাগর থেকে মালয়েশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আলবেডোক আটক করে সোমালিয়ার জলদসু্যরা। তখন জাহাজটিতে থাকা ২২ কর্মকর্তা এবং ক্রুকে জিম্মি করা হয়। ওই ২২ জনের মধ্যে ছিলেন ৭ বাংলাদেশি, ৭ জন পাকিস্তানি, ৬ জন শ্রীলংকান ও একজন করে ভারতীয় এবং ইরানি নাগরিক। তাদের সবাই মুক্তিপণ দিয়ে দীর্ঘ সময় পর মুক্ত হয়েছিলেন।

উলেস্নখ্য, মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে কবির গ্রম্নপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের কয়লাবাহী জাহাজটি সোমালিয়ান জলদসু্যদের কবলে পড়ে। এই জাহাজের মাস্টার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের রাশেদ মোহাম্মদ আব্দুর, চিফ অফিসার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের খান মোহাম্মদ আতিক উলস্নাহ, সেকেন্ড অফিসার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের চৌধুরী মাজহারুল ইসলাম, থার্ড অফিসার হিসেবে আছেন ফরিদপুরের ইসলাম মো. তারেকুল, ডেক ক্যাডেট হিসেবে আছেন টাঙ্গাইলের হোসাইন মো. সাব্বির।

এ ছাড়া চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন নওগাঁর শাহিদুজ্জামান এএসএম, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন খুলনার ইসলাম মো. তৌফিকুল, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন নেত্রকোনার উদ্দিন মো. রোকন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের আহমেদ তানভীর, ইঞ্জিন ক্যাডেট হিসেবে আছেন লক্ষ্ণীপুরের খান আইয়ুব, ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে আছেন উলস্নাহ ইব্রাহিম খলিল, এবিল সি-ম্যান (নাবিক) হিসেবে আছেন নোয়াখালীর হক মোহাম্মদ আনোয়ারুল, চট্টগ্রামের রহমান মো. আসিফুর, হোসাইন মো. সাজ্জাদ, অর্ডিনারি সি-ম্যান (সাধারণ নাবিক) হিসেবে আছেন নাটোরের মোহাম্মদ জয়, সিরাজগঞ্জের হক মো. নাজমুল, অয়লার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের হক আইনুল, চট্টগ্রামের শামসুদ্দিন মোহাম্মদ, বরিশালের হোসাইন মো. আলী, ফায়ারম্যান হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের শাকিল মোশাররফ হোসেন, চিফ কুক হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের ইসলাম মো. শফিকুল, জেনারেল স্টুয়ার্ড হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের মোহাম্মদ নূর উদ্দিন ও ফাইটার হিসেবে আছেন নোয়াখালীর আহমেদ মোহাম্মদ সালেহ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে