শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে প্রাথমিকের ১৬ শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত, এক স্কুলেই ৬ জন

১৬ শিক্ষকের মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ১৪ জন আর অপর দুই জনের মধ্যে একজন শার্শায় ও অভয়নগর উপজেলায়
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
  ২২ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

যশোর জেলায় প্রাথমিকের ১৬ শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে এক স্কুলেই ৬ শিক্ষকের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এসব শিক্ষকরা বর্তমানে বাসায় আইসোলেশনে রয়েছেন। দুপুরে বৃহস্পতিবার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। এদিকে, শিক্ষকদের করোনা আক্রান্তের খবরে আতঙ্ক বিরাজ করছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুল যাওয়া বন্ধ করায় স্কুলগুলোতে উপস্থিতির হার অর্ধেকে নেমেছে। তবে শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, করোনাকালে কোনো শিক্ষার্থীকেই বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে চাপ দিচ্ছেন না। আর করোনা আক্রান্ত বিদ্যালয়গুলোর অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। সীমিত পরিসরে স্কুলগুলোতে ক্লাস নিচ্ছেন সুস্থ শিক্ষকরা।

প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সংক্রমিত ১৬ শিক্ষকের মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ১৪ জন আর অপর দুই জনের মধ্যে একজন শার্শায় ও অভয়নগর উপজেলায়। এক স্কুলে সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন যশোর শহরতলি সদরের বালিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ জন সহকারী শিক্ষক। এই বিদ্যালয়ে প্রথমে করোনা আক্রান্ত হন সহকারী শিক্ষক তানিয়া জামান তমা। তার শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে চলতি মাসের ১০ জানুয়ারি যশোর জেনারেল হাসপাতালে নমুনা দেন। ১৩ জানুয়ারি খবর পান তিনি করোনা পজিটিভ। করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়ায় ওই দিন একই স্কুলের ৫ শিক্ষক কানিজ ফাতেমা, হোসনে আরা, সুতপা রানী, সামছুন্নাহার সালমা ও জিনজিরা খাতুন নমুনা দেন। এর পর ১৫ ও ১৭ জানুয়ারি নমুনা দেওয়া সবারই করোনা শনাক্ত হয়। তবে বাকি শিক্ষকরা সুস্থ থাকায় করোনা পরীক্ষা করেননি বলে জানিয়েছেন স্কুলটি প্রধান শিক্ষক।

এছাড়া ১৭ জানুয়ারি থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন সদর উপজেলার শহীদ সরণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দিল আফরোজ নার্গিস, হালসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মিতা রানী মজুমদার, মেঘলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নূরজাহান আক্তার, নালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়ালিউর রহমান, মনোহরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুসাইরা সোহেলী, নূতন উপশহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শারমিনা জেসমিন, নীমতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহিদ হাসান হিরা, চাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আফরোজা সুলতানা। সদরের বাইরের দু'জন হলেন- অভয়নগর উপজেলার মধ্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহানারা শিউলী ও শার্শা উপজেলার যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীমা আক্তার। করোনা আক্রান্তরা সবাই বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন। প্রতিদিনই জেলার কোনো না কোনো স্কুলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এক কর্মকর্তা।

সদরের বালিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার বলেন, তার বিদ্যালয়ের ৬ জন শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত। আক্রান্তদের মধ্যে তিন শিক্ষকের অবস্থা কিছুটা খারাপ। বাকিরা সুস্থ আছেন। শিক্ষকরা করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে ইতোমধ্যে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মাঝে ভীতির সঞ্চার করেছে। আমি উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি। তারা কেউ প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলেননি। শিক্ষকদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে ক্লাসে উপস্থিতির হার কমে এসেছে ১৫-২০ শতাংশে। আমরা অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। যে সকল শিক্ষার্থী স্কুলে ক্লাস করতে আসছে তাদের সুস্থ শিক্ষকদের দিয়ে ক্লাস করানো হচ্ছে।

করোনা আক্রান্ত শার্শার যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীমা আক্তার বলেন, আমি কিছুটা সুস্থ আছি। আমার স্কুলে ৪ জন সহকারী শিক্ষকের মধ্যে একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আর একজন সম্প্রতি অবসরে গেছেন। বাকি দুই জন শিক্ষক প্রায় আড়াইশ' জন শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন। আমি করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে ক্লাসে কিছুটা উপস্থিতির হার কমেছে বলে জানান এই প্রধান শিক্ষক।

এদিকে, যশোরে এক স্কুলেই ৬ জন শিক্ষক করোনা আক্রান্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সংক্রমণের ভয় করছেন অভিভাবকরা। ফলে স্কুল খোলার পর উপস্থিতি ৯০-৯৫ শতাংশ থাকলেও এখন অনেক স্কুলে ৫০ শতাংশ নেমে এসেছে। মোশারফ্‌ফ হোসেন নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, তিনি তার সন্তানকে আপাতত স্কুলে পাঠানো থেকে বিরত রেখেছেন।

যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ অহিদুল আলম বলেন, জেলায় ইতোমধ্যে ১৬ জন শিক্ষকের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। যে সকল শিক্ষক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন; সবাই করোনা ভাইরাসের দুই ডোস টিকা সম্পন্ন করেছিলেন। শিক্ষকরা করোনা আক্রান্ত হওয়ার তথ্য মিললেও কোনো শিক্ষার্থীর আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। শিক্ষক বা শিক্ষার্থীরা করোনায় আক্রান্ত হলে কী করতে হবে সে ব্যাপারে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। করোনা নিয়ে আতঙ্কিত না হতে বা কোনো গুজবে কান না দিতে অভিভাবকদের অনুরোধ জানান তিনি। উলেস্নখ্য, জেলায় ৮টি উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৮৯টি। এসব বিদ্যালয়ে বর্তমানে কর্মরত ৪ হাজার ৪শ' শিক্ষকের সকলেই করোনা টিকা গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে