শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুরে বোরো চাষে প্রতি বিঘায় লোকসান দশ হাজার টাকা!

ম শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
  ১৯ মে ২০২২, ০০:০০

এবার আট বিঘা জমিতে শোভললতা জাতের ধান লাগিয়েছিলেন কৃষক জিয়াউল হক। শতবাধা মারিয়ে সেই ধান ধান কাটা-মাড়াই শুরু করেছেন তিনি। কিন্তু তার মনে সুখ নেই। হারিয়ে গেছে নতুন ফসল ঘরে তোলার পুরনো সেই হাসি। কারণ বৈরী আবহাওয়ায় বাজারে নতুন ধান বিক্রি করে লাভ তো দূরের কথা, এবার মূল চালানই উঠছে না। এমনকি বিঘাপ্রতি ৮হাজার থেকে ১০হাজার টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হচ্ছে। এই অবস্থা শুধু কৃষক জিয়াউল হকেরই নয়, বগুড়ার শেরপুর উপজেলার প্রায় অর্ধলাখ কৃষক পরিবারের। তাই কৃষক জিয়াউল হক জানান, কেবল চোখে অন্ধকার দেখছেন।

এ ছাড়া আসানির প্রভাবে হওয়া ঝড়-বৃষ্টিতে এই উপজেলার দুই হাজার হেক্টর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানিতে লুটোপুটি খাচ্ছে এসব জমির পাকা ধান। সেই সঙ্গে ধান কাটা শ্রমিক সংকটে পানিতে ডুবে থাকা ধানের শীষ ক্ষেতেই পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যা দেখে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জমির আইলে বসে চোখের পানি ফেলছেন। সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বললে তাদের এমন করুণ চিত্র উঠে আসে।

তাদের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, এক বিঘা জমিতে ধান লাগানো থেকে শুরু করে কাটা-মাড়াই ও জমির মালিককে বর্গাবাবদ টাকা দেওয়া পর্যন্ত ২২ হাজার ২০০ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। আর বর্গাবাবদ ৭হাজার টাকা বাদ দিয়ে হিসাব কষলে প্রতিবিঘা জমির বিপরীতে একেকজন কৃষকের খরচের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ হাজার ২০০ টাকা। অথচ সেই জমি থেকে সর্বোচ্চ ১৬-১৮ মণহারে ধানের ফলন মিলছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতিমণ শোভললতা জাতের ধান (কাঁচাভেজা) গড়ে ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। সেই হিসাবে প্রতিবিঘা জমি থেকে নয় থেকে দশ হাজার টাকার ধান বিক্রি করতে পারছেন। অর্থাৎ দেখে-শুনে প্রতিবিঘায় প্রত্যেক কৃষককে বর্গাবাবদ ব্যয়সহ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোকসান গুণতে হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় ২০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়। শুরু থেকে আবহাওয়া মোটামুটি অনুকূলে থাকলেও ফসল ঘরে তোলার সময় আবহাওয়া অনুকূলে নেই। প্রায় দুই সপ্তাহধরে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। এতে করে ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে সূত্রটি জানায়।

এদিকে এসব নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বসে নেই কৃষক। ক্ষেতের ফসল ঘরে তোলার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই ধান কাটা-মাড়াই শুরু করেছেন। তবে ধান কাটা শ্রমিক সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক দিয়েও মিলছে না শ্রমিক।

কৃষক গোলাম রব্বানী বলেন, এমনিতেই বৈরী আবহাওয়া। তারপর শ্রমিক সংকট। সেই সঙ্গে ধানের বর্তমান বাজারদর কৃষকের কোমর ভেঙে দিচ্ছে। এই ভাঙা কোমর নিয়ে আগামী মৌসুমের ফসল কি করে চাষ করবেন- এমন ভাবনায় এখন থেকেই ভীষণভাবে শঙ্কিত তারা।

সাধুবাড়ী গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার জানান, নিচু এলাকায় লাগানো প্রায় দশবিঘা জমির ধান পানিতে ডুবে রয়েছে। শ্রমিকরা কাটতেই চাচ্ছে না। এ ছাড়া কাটার যে মজুরি দাবি করছে, তা জমির উৎপাদিত সব বিক্রি করেও হবে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, মৌসুমের শেষ সময়ে এসে আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় যেসব জমির ধান আশিরভাগ পেকে গেছে তা দ্রম্নত কেটে ঘরে তোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষকরা ধান কাটছেন। ইতোমধ্যে পঞ্চাশ থেকে ষাটভাগ জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন তারা। তাই চিন্তার তেমন কোনো কারণ নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে