সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

সেলাই মেশিনের শব্দে মুখর দর্জিপট্টি

স্বদেশ ডেস্ক
  ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে ঈদের কাপড় তৈরিতে ব্যস্ত কারিগর -যাযাদি

টেইলার্সদের এখন নির্ঘুম রাত। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে টেইলার্সদের দোকানগুলোতে ততোই বাড়ছে ব্যস্ততা। কারিগরদের এখন যেন দম ফেলানোর ফুরসত নেই। সময় মতো পোশাকগুলো সরবরাহ করতে না পারলে ঈদ আনন্দ মলিন হবে ক্রেতাদের। তাই দিনরাত পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জর কটিয়াদী বাজারের পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দর্জির দোকানগুলোতে পুরোদমে চলছে পোশাক তৈরির কাজ। সেই সঙ্গে দর্জিপট্টিতে রয়েছে নতুন পোশাক তৈরির হিড়িক। মেঝেতে কাপড়ের স্তূপ। ডান-বাঁয়ের দেয়ালেও ঝুলছে নানা রঙ ও নকশার বানানো পোশাক। সেলাই মেশিনের একটানা খটখট আওয়াজ চলছে। এর মধ্যেই নেওয়া হচ্ছে নতুন পোশাকের অর্ডার। একইসঙ্গে চলছে মাপ অনুযায়ী কাপড় কাটার কাজও।

কটিয়াদী বাজারের দর্জির দোকানে ঘুরে দেখা যায় দর্জি কারিগররা ব্যস্ততা ও ক্রেতাদের ভিড়। সেলাই মেশিন আর কাঁচির শব্দ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে সারাক্ষণ। শব্দই বলে দেয় কারিগররা ঈদের পোশাক বানাতে কতটা ব্যস্ত। কিছু দর্জি বলছেন, আমরা পোশাক তৈরির অর্ডার আর নিচ্ছি না। ভয়াবহ লোডশেডিং থাকার কারণে কারিগররা অর্ডার পোশাক তৈরি করে সময় মতো ডেলিভারি দিতে পারছেন না।

জানা যায়,  চাঁদ রাতের আগেই ক্রেতাদের পছন্দের এসব পোশাক ডেলিভারির স্স্নিপ ধরে ধরে বুঝিয়ে দিতে হবে। তবেই স্বস্তি তাদের। না হলে মালিকের বকুনি আর ক্রেতার ধমকানিতে মাটি হয়ে যাবে ঈদের আনন্দ। তাই এখন থেকেই রাত-দিন একাকার করে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।

রমজানের ২৬ দিন পেরিয়ে গেল। আর ৪ দিন পরেই ঈদুল ফিতর। হাতে আর তেমন সময় নেই। যারা তৈরি পোশাক পরতে পছন্দ করেন না বা নিজের পছন্দমতো মাপে ও ডিজাইনে পরতে অভ্যস্ত, তারা এখন ভিড় করছেন দর্জির দোকানগুলোতে।

পোশাক তৈরির কারিগররা জানান, এখন ব্যস্ততাটা একটু বেশিই। তবে এ ব্যস্ততা শুরু হয়েছে রমজান মাস শুরুর পর থেকেই। শুরুতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করতে হতো, আর এখন সকাল থেকে গভীর রাত অবধি কাজ করতে হচ্ছে। পরিশ্রম একটু বেশি হচ্ছে, তবুও তারা খুশি। কারণ, ঈদের মৌসুমে বাড়তি কাজের অর্ডার হয়। এতে বাড়তি আয়ও করা যায়।

কটিয়াদী  বাজারের রফিক টেইলার্স অ্যান্ড ফেব্রিক্সের মালিক রফিকুল আলম  জানান, সাধারণ সময়ের থেকে ঈদকে সামনে রেখে রমজানে তাদের অনেক বেশি পরিমাণ কাজ করতে হয়। রোজার প্রথম থেকেই কাস্টমারের কাছ থেকে প্রচুর অর্ডার পেয়ে থাকেন। এই অর্ডারগুলো সম্পূর্ণ করতে দিন-রাত কাজ করতে হয়।

ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় বেড়েছে দর্জি দোকানের ব্যস্ততা। তবে প্রতিটি পোশাকে একশ' টাকা সেলাইয়ের মজুরি বেড়েছে।

ভেড়ামারা শহরের ডাকবাংলো সুপার মার্কেটের ঢাকা ফিটিং টেইলার্সের মালিক রেফাউল ইসলাম জানান, তার দোকানে ৫ জন কারিগর কাজ করেন। চাঁদ রাত পর্ষন্ত তাদের কাছে যে কোনো ফিটিংয়ের কাজ করতে আসলে সে কাজ করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। রোজার প্রথম থেকেই প্রচুর কাজ পাওয়ায় খুশি। সময়মতো পোশাকটি সরবরাহ করতেই এখন প্রাণপণ চেষ্টা।

টেইলার্স মাস্টার মিটন আলী জানান, ১০ রোজা থেকে সব ধরনের অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এর ফলে গার্মেন্টসগুলোতে ভিড় বেড়েছে। কারিগররা দিন-রাত কাজ করেও শেষ করতে পারছেন না। সময়মতো সবার কাপড় ডেলিভারি করতে পারবেন কি না সে ব্যাপারে চিন্তার মধ্যে রয়েছেন।

পাঞ্জাবি'র টেইলার্স মাস্টার মামুন জানান, রোজার আগে থেকেই অর্ডার নেওয়া বন্ধ করেছেন। কোনো বড় রকম তদবিরে ২-১ টা অর্ডার নেওয়া হচ্ছে। কারিগররা মজুরি বাড়িয়ে দেওয়ায় এবার মজুরি বেড়েছে। এবারও পায়জামা-পাঞ্জাবির চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

লেডিস টেইলার্স মাস্টার লাকি জানান, করোনার পর এ বছর সবচেয়ে বেশি অর্ডার পেয়েছেন। কারিগর কম থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রবাসীর স্ত্রীরা আগে ভাগেই কাপড় তৈরি করছেন। এবার পোশাক তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে গেছে। তবে খরচ বাড়লেও এখনো মজুরি তেমন বাড়ানো হয়নি।

গৃহিণী আফরোজা বেগম জানান, কোনো কোনো দোকানের সামনে 'অর্ডার বন্ধ' লেখা পোস্টার লাগানো হয়েছে। অনেক অনুরোধের পর অর্ডার দিতে পেরেছেন। তবে মজুরি বাড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছেন কারিগররা। অনেকে ফিরে যাচ্ছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে