সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রম বৈষম্যের শিকার গাংনীর নারী শ্রমিকরা

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি
  ০৩ মে ২০২৩, ০০:০০
মেহেরপুরের গাংনীতে তামাকের গোডাউনে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি কাজ করছেন নানা বয়সি নারী শ্রমিক -যাযাদি

মেহেরপুরের গাংনীর কাথুলী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বয়সি নারী শ্রমিক আশরাফুন নেছা কাজ করছেন একটি তামাকের গোডাউনে। সকাল সাতটা থেকে বিকাল পর্যন্ত তামাক বাছাইয়ের কাজ করেন। তাকে মজুরি দেওয়া হয় ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। অথচ তার সঙ্গে পুরুষ শ্রমিকরা সমপরিমাণ কাজ করে মজুরি পাচ্ছেন ৫০০ টাকা। অতিরিক্ত সময়ে কাজ করলে তামাকের বেল প্রতি দেওয়া হয় ৭০ টাকা। তিনি শুধু তামাক বাছাইয়ের কাজই করেন না। মরিচ তোলা, কচু তোলা, আমের বাগান, ধানের জমিসহ বিভিন্ন কৃষি কাজ করছেন অন্তত ১০ বছর।

তিনি জানান, স্বামী আয়নাল হক বৃদ্ধ হওয়ায় তাকে আর কেউ কাজে নিতে চায় না। শুধু আশরাফুন নেছা নয়, তার মতো অনেক নারীই শ্রম বৈষম্যের শিকার।

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নারী পুরুষ উভয়ই সমান ভূমিকা রাখলেও নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন মেহেরপুরের গাংনীর নারী শ্রমিকরা। বিশেষ করে শ্রম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা। পুরুষদের সমান কাজ করেও তারা মজুরি পাচ্ছেন কম। নারী শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য রোধে বিভিন্ন দাবি সংবলিত সভা সমাবেশে নারী অধিকার নিয়ে কথা হলেও অদ্যাবধি এর কোনো সমাধান হয়নি।

রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আজিজুলের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন জানান, 'দেশে সব কিছুর দাম বেড়েছে। পুরুষ শ্রমিকদের মজুরিও বেড়েছে। কিন্তু আমরা পুরুষের সঙ্গে কাজ করেও তাদের চেয়ে মজুরি পাই অর্ধেক। সারাদিন কাজ করে পাই মাত্র ৩০০ টাকা। এ দিয়ে কোনো রকমে সংসারটা বাঁচিয়ে রেখেছি। মজুরি বৃদ্ধির কথা বললে কোনো গৃহস্থ আর কাজে ডাকবে না। তাই যা দিচ্ছে তাতেই কাজ করছি।'

গাড়াবাড়িয়া গ্রামের নারী শ্রমিক ফজলুল হকের স্ত্রী মানুয়ারা বেগম জানান, প্রায় ২০ বছর হলো স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যান। সংসারের খরচ জোগাতে কৃষি কাজে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে কম মজুরি দেওয়া হয়। নারীদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে কেউ খোঁজখবর নেয় না।

পুরুষ শ্রমিক জিলস্নুর রহমান জানান, নারী-পুরুষ সবাই এক সঙ্গে কাজ করেন। অথচ পুরুষদের বেশি আর নারীদের কম পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। এটা বৈষম্য বটে। এ বৈষম্য দূর করা উচিত বলেও দাবি তার।

গৃহস্থ রিপন আলী ও খুশি মিয়া জানান, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নারী ও পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় সমান। পুরুষদের প্রতিদিন ৫০০ টাকা ও নারীদের ৩০০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়। পুরুষ শ্রমিকরা একটু বেশি কাজ করেন। আর নারীরা একটু কম কাজ করেন। তাই মজুরিতে পার্থক্য করা হয়েছে।

\হমেহেরপুরের উম্মে ছালমা ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও নারী উদ্যোক্তা উম্মে সালমা সুলতানা জানান, সর্বক্ষেত্রে নারীরা যখন উন্নয়নে অবদান রাখছে সেই সময়ে মজুরি বৈষম্য তৈরি করে নারীদের পিছিয়ে রাখা হচ্ছে। সরকারিভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হলে এ বৈষম্য দূর করা সম্ভব।

উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারহান ইয়াসমিন জানান, নারীরা অনেক পরিশ্রমী। কয়েক হাজার নারী শ্রমিক রয়েছেন যারা পুরুষের সমপরিমাণ পরিশ্রম করেন। শুধু মজুরি বৈষম্য নয়, সব বৈষম্য দূর করলে নারীরা উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। আর এর জন্য গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন।

মেহেরপুর জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নীলা হাপিয়া জানান, জেলায় অসংখ্য নারী শ্রমিক রয়েছেন যারা কৃষি, শিল্প, মৎস্যসহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। তারা সংসারে উন্নতির পাশাপাশি একটি স্বনির্ভর দেশ গঠনে ভূমিকা রেখে চলেছেন। নারীদের মজুরি বৈষম্য মোটেই কাম্য নয়। নারীরা তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে যেন বঞ্চিত না হয় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে