সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসূতি রোগীদের আস্থার ঠিকানা বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স

রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম)
  ০৩ মে ২০২৩, ০০:০০

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে প্রসূতি রোগীদের আস্থার ঠিকানায় পরিণত হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স। পঞ্চাশ শয্যার সরকারি এ হাসপাতালটি এখন অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সেবা দিচ্ছে রোগীদের। প্রসূতিদের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ উপহার সামগ্রী ও বিনামূল্যে ওষুধ। দীর্ঘদিন পর এখানেই হচ্ছে সিজারিয়ান অপারেশন। এছাড়াও স্বাভাবিক ডেলিভারি তো হচ্ছেই। স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সেটি থেকে বর্তমানে বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগের রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ এ স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে যুক্ত হয়েছে অপারেশন থিয়েটার ও উন্নত প্রযুক্তির নানা সেবা। যা আগে উপজেলার কোনো হাসপাতালে ছিল না।

জানা যায়, ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ৫০ শয্যার বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সটিতে ২০২২ সালের আগস্টে চালু হয় অপারেশন থিয়েটার। এতে মাত্র এক বছরেই হাজারেরও অধিক নরমাল ডেলিভারি, সিজারিয়ান হয়েছে। হাসপাতালে প্রসূতিদের জন্য রাখা হয়েছে আলাদা ওষুধের প্যাকেট ও নানা সামগ্রী। সিজারিয়ান ও স্বাভাবিক প্রসূতিরা হাসপাতালে ভর্তি হতেই সুন্দর প্যাকেটে মোড়ানো উপহারের ন্যায় ওষুধসামগ্রী তাদের হাতে তুলে দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়। যে প্যাকেটে একজন প্রসূতির চিকিৎসার যাবতীয় ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী রয়েছে। যাতে কোনো প্রসূতিকেই ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে না হয়। বর্তমানে হাসপাতালটিতে রয়েছে গাইনি ও সার্জারির জন্য আলাদা দুটি অপারেশন থিয়েটার, আধুনিক সুসজ্জিত চারটি ডেলিভারি অবজারভেশন কক্ষ ও সেইফ বস্নাড ট্রান্সফিউশন ইউনিট।

শুধু প্রসূতি মায়ের চিকিৎসাই নয়, এ স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার রোগীরা সেবা গ্রহণ করে থাকেন প্রতিদিন। আউটডোরেও রোগীর কমতি নেই। গড়ে ৮০০-৯০০ রোগী আউটডোরে চিকিৎসা ও ওষুধ গ্রহণ করছেন নিয়মিত। রোগ নির্ণয়ে অধিকাংশ রক্ত পরীক্ষা, ২৪ ঘণ্টা ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ডিজিটাল এক্স-রে, জিন এক্সপার্ট মেশিনে যক্ষ্ণা নির্ণয়সহ মাইনর অপারেশন ও বিনামূল্য চিকিৎসা। এছাড়াও এইচডি ও নাইট ভিশিন ৩২টি সিসি ক্যামেরায় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে হাসপাতালের নিরাপত্তা।

কালীপুরের জমির উদ্দীন বলেন, 'গত পরশু আমার স্ত্রী কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছে। গত ৬দিনে আমার শুধুমাত্র ২ হাজার ১শ' টাকা খরচ হয়েছে। তাও ব্যক্তিগতভাবে। বলতে গেলে এখন এ হাসপাতালটি প্রসূতি রোগীদের জন্য নিরাপদ ও আস্থার ঠিকানা হয়ে উঠেছে।'

শেখেরখিল ইউনিয়নের হাসিনা বেগম বলেন, 'গত ১৫ এপ্রিল বিকালে বাঁশখালী সরকারি হাসপাতালে যমজ সন্তান জন্ম দেই। এখানে এত ভালো চিকিৎসা সেবা পেয়েছি তা বলা বাহুল্য। এখনো আলস্নাহর রহমতে ডাক্তারদের প্রচেষ্টায় আমার দুই সন্তান সুস্থ রয়েছে।'

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. দিদারুল হক সাকিব বলেন, 'আমরা যত সম্ভব চেষ্টা করি রোগীদের সবচেয়ে ভালো স্বাস্থ্য সেবাটা দিতে। আগে হাসপাতালে তেমন কোনো উন্নত প্রযুক্তি ছিল না। বর্তমানে হাসপাতালে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় অপারেশন থিয়েটারসহ উন্নত মানের নানা চিকিৎসাসেবা চালু হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে দিন দিন রোগী সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে প্রসূতি রোগী।'

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শফিউর রহমান মজুমদার জানান, 'হাসপাতালে যোগদানের পরে প্রসূতি রোগীদের সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডাক্তার ও নার্সদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করি। এ টিমের মাধ্যমে গত তিন বছরে দুই হাজারেও বেশি নরমাল ডেলিভারিসহ ১৮টি সিজারিয়ান ডেলিভারি করা হয়েছে। তাছাড়া করোনাকালীন ভ্যাকসিন, চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। আশা করি সবার সহযোগিতায় আগামীতেও বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে