সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
ভেড়ামারায় পানির অভাবে পদ্মায় পাট জাগ

পদ্মার স্রোতে ভেসে যাচ্ছে পাটের আঁটি

ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
  ৩১ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পানির অভাবে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে পদ্মা নদীতে পাট জাগ দিচ্ছেন কৃষক -যাযাদি

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় নদী ও পুকুরে পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষকরা হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে পদ্মা নদীতে পাট জাগ দিচ্ছেন। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে পদ্মা নদীর স্রোতের ভেসে যাচ্ছে পাট। বিভিন্ন সময় দরপতন, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, শ্রমমূল্য বৃদ্ধি ও জাগ দেওয়ার পানির অভাবে কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। পাটের বর্তমান বাজারদর নিয়ে চিন্তিত তারা।

গতবার পাটের ফলন যেমন বেশি হয়েছে, তেমনি কৃষকরা দামও ভালো পেয়েছেন। এবারও তারা লাভের আশা করছেন। কারণ সরকার ধান, চাল, গম, ভুট্টা, চিনি ও সার ছয়টি পণ্য মোড়কীকরণে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। এখন পাটজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ বছর উপজেলায় ৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। সরকার এবারও চাষিদের কাছ থেকে ন্যায্য দামে পাট কিনবে বলে আশা প্রকাশ করেন কৃষকরা। বাজারে ভালো দাম, অনুকূল আবহাওয়া এবং সময়মতো কৃষি প্রণোদনা পাওয়ায় কৃষকদের পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে। উপজেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত বছর কৃষকরা প্রতি মণ পাটে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দাম পেয়েছেন। প্রতি বিঘায় বীজ বপন থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় প্রায় ১০ মণ পাটের ফলন পাওয়া যায়। পাট চাষে কৃষকরা ভারতীয় একটি জাতের বীজের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। এ বছর অতিরিক্ত খরা ও পোকা-মাকড়ে আক্রান্ত হওয়ায় আশানুরূপ ফলন মেলেনি। তবে এ ব্যাপারে প্রযুক্তি সহায়তাসহ নতুন জাত সম্প্রসারণে কাজ করছে।

কৃষক ফারুক হোসেন বলেন, পাট কাটা প্রায় এক মাস আগে থেকে শুরু হয়েছে। নদী ও পুকুরে পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নদী ও পুকুরে পানির অভাবে বর্তমানে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ থেকে সোলাইমান বাবার আস্তানা পর্যন্ত পদ্মা নদীতে পাট জাগ দেওয়া হচ্ছে। পদ্মা নদীতে পাট জাগ দেওয়ার পর স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারপরও কৃষকরা পদ্মা নদীতে পাট জাগ দিচ্ছেন।

পাটচাষি মনোয়ার হোসেন বলেন বলেন, চলতি বছর চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। তবে দাম নিয়ে কিছুটা চিন্তিত। ভেড়ামারা উপজেলা পাট অধিদপ্তরের অফিস বন্ধ থাকায় কৃষকরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রায় দিন উপজেলা পাট অধিদপ্তরের অফিসে তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা গেছে।

কৃষক হাসান আলী বলেন, বর্তমানে একজন দিনমজুরের ৫০০ টাকা হাজিরা। তার ওপর বেড়েছে বিভিন্ন কৃষি উপকরণের দাম। এক বিঘা জমিতে পাট হয় ১০ মণ। পাট কেটে তা জাগ দিয়ে শুকিয়ে ঘরে তুলতে মণপ্রতি দুই হাজার টাকার বেশি খরচ হয়। ফলে পাট চাষে তাদের প্রতি বছর লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।

কৃষক সালাম বলেন, পাটের জন্য কুষ্টিয়ার খ্যাতি রয়েছে। 'খাল-বিলে অধিকাংশ সময় পানি থাকে না। আবার কোনো কোনো খালে মাছ চাষ করায় পানি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় পাট জাগ দেওয়া ও আঁশ ছাড়ানোর ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা হয়।

আনোয়ার হোসেন বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে পাট চাষ করে জাগ দেওয়ার পানির অভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তা ছাড়া উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এখন পাট চাষ ছেড়ে দিয়ে শাকসবজি ও মরিচের চাষ করছি। এতে পরিশ্রম কম, লাভ বেশি।'

ভেড়ামারা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শায়খুল ইসলাম বলেন, গত মৌসুমে ভালো দাম পাওয়ায় চাষিদের পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে। এখন পাটজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কৃষক যেন ভালো দাম পান, এ জন্য সরকার বিদেশে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করার পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পাটের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য নতুন আইন করেছে।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হায়াত মাহমুদ বলেন, পাটের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে নতুন জাতের বীজ, সার, প্রণোদনা প্রদান এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে সব রকম সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) উদ্ভাবিত জাত বিজেআরআই তোষা পাট-৮ (রবি-১) চাষ জনপ্রিয় করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে