সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সবুজ পাহাড়ে জুমের সোনালি ফসল খুশির বন্যা জুমিয়াদের ঘরে ঘরে

বান্দরবান প্রতিনিধি
  ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
বান্দরবানের পাহাড়ে দলবেঁধে জুমের ধান কাটায় ব্যস্ত পাহাড়ী নারী-পুরুষ -যাযাদি

বান্দরবানের পাহাড়ে পাহাড়ে শোভা পাচ্ছে জুমের সোনালি ধান। এবার ফলনও হয়েছে ভালো। এখন জুমে জুমে চলছে ধানকাটার উৎসব। ফলন ভালো হওয়ায় জুমিয়াদের ঘরে ঘরে যেন এখন খুশির বন্যা বইছে। তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন জুম থেকে ফসল ঘরে তোলায়। এ সময়ে পাহাড়ে পাকা সোনালি ধান জুমিয়াদের এনে দিয়েছে পারিবারিক সাচ্ছন্দ্য।

সরেজমিন দেখা যায়, সবুজ পাহাড়গুলো এখন ধারণ করছে সোনালি রঙ। জুমে জুমে সোনালি ধানে ভরপুর। সবুজের বুকে এক একটি পাহাড় যেন হলুদের চাদরে ঢাকা। কাজের ফাঁকে বিশ্রামের জন্য পাহাড়ের গায়ে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী জুমঘর। এদিকে ধানের পাশাপাশি আবাদ করা হয়েছে ভুট্টা, ঢঁ্যাড়স, মারফা, সাদা কুমড়াসহ বিভিন্ন জাতের সবজি। এছাড়াও রয়েছে হলুদ ও কলা। চাষিরা বলছেন, প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত হওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার জুমের আবাদ ও ফলন ভালো হয়েছে।

রুমা উপজেলার বটতলী পাড়ার বাসিন্দা মংনাক মারমা জানান, এবার প্রথমদিকে বৃষ্টিপাত কম থাকলেও পরে প্রয়োজনীয় বৃষ্টি হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। ফসল ঘরে তোলা হলে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে জুমের নতুন ভাত খাবেন বলে জানান তিনি।

একই এলাকার আরেক জুমচাষি মংসিংগ্য মারমা জানান, সকাল হলেই দলবেঁধে নেমে পড়ছেন জুমের ধান কাটতে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হওয়ায় সারা বছরের খানার জোগান হবে তাদের।

অন্যদিকে, টানা ভারী বর্ষণের কারণে কিছু এলাকায় ভূমিধস হয়েছে। এতে ভূমির সঙ্গে জুমের অংশ ধসে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছেন বেশ কিছুু চাষি। এছাড়াও টানা বর্ষণের কারণে ধানের গাছ হেলে মাটিতে পড়েও নষ্ট হয়েছে ধান।

জুমচাষি হ্লাথোয়াইচিং মারমা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের তুলনায় ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে জুমের বেশ কিছু অংশের ধানের গাছ হেলে পড়ায় আশানুরূপ ফসল না পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, বান্দরবান সদর, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়িসহ সাত উজেলায় চলতি মৌসুমে ৭ হাজার ৯৩৩ হেক্টর জমিতে জুম চাষ হয়েছে। যার ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৮৭ মেট্রিক টন।

জানা যায়, পাহাড়ে বসবাসরত ১১টি পাহাড়ি জাতি গোষ্ঠীর জীবিকার প্রধান উৎস জুমচাষ। মারমা, বম, ত্রিপুরা, চাকমা, তংচঙ্গ্যা, চাক, খেয়াং, খুমী, লুসাই, পাংখোয়ারা শত শত বছর ধরে জুম চাষের মাধ্যমে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এদিকে জুমচাষ প্রতি বছর এক জায়গায় করা যায় না। এটি চক্রাকারে করতে হয়। একবার জুম চাষ করার পর কমপক্ষে তিন থেকে চার বছর জমি পতিত রাখতে হয়। সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রম্নয়ারি মাসে জঙ্গল কেটে রোদে শুকানো হয়। মার্চ-এপ্রিল মাসে কেটে রাখা জঙ্গল আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। পরে সেখানে ধানসহ বিভিন্ন ফল ও সবজির বীজ বপন করে থাকে পাহাড়িরা। পাহাড়ে অনেক জাতের ধান চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে গিলন, ইরি, পিডি, মংথং ও ক্রে ধান উলেস্নখযোগ্য।

রোদে-বৃষ্টিতে ভিজে এবং নানা প্রতিকূলতার শত বাধা পেরিয়ে পাহাড়ে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর লোকজন জীবন-জীবিকার তাগিদে হাড়ভাঙ্গা কষ্ট সহ্য করে এই জুমচাষ করে আসছেন যুগ যুগ ধরে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক এম এম শাহ্‌ নেওয়াজ বলেন, বান্দরবানে জুমে আবাদ করা ৮০ শতাংশ ধানই স্থানীয় জাতের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার জুমগুলোতে ফলন বেশ ভালো হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে