শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
পটুয়াখালীর কচাবুনিয়া নদীর ভাঙন

'সব কিছুতো নদীতে গেছে, মাইয়া পোলা লইয়া কই যামু'

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
  ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
পটুয়াখালীর কচাবুনিয়া নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা -যাযাদি

'আমাগো বাড়ি আছেলে (ছিল) ওই গাঙ্গের (নদী) মাঝ খানে, ভাঙতে ভাঙতে পাঁচবার বাড়ি পাল্ডাইছি। এখন তো আর যাওয়ার জায়গা নাই, সব তো নদীতে যাইতে আছে। এই তো দেহেন হোস্যাডা (রান্নাঘর) ভাঙতে আছে। কি করমু, মাইয়া পোলা লইয়া কোম্মে যামু।'

এভাবেই বলছিলেন পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা ময়না বেগম। কচাবুনিয়া নদীর ভাঙনে গত কয়েক বছরে হারিয়েছে বসতবাড়ি, কৃষি জমিসহ মূল্যবান গাছপালা। আর এখন যে কোনো সময় বিলীন হতে পারে ময়না বেগমের বর্তমান ঘরটিও।

এই এলাকার নদী পাড়ের অধিকাংশ মানুষের জীবনচিত্র এমনই। কথা বলছিলাম একই এলাকার গৃহবধূ মাসুমা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'আমার বিয়ের বয়স ১৪ বছর, আমি এই পর্যন্ত তিনবার বাড়ি পাল্ডাইছি। নদীর এই পাড় ভাঙে ওই পাড় গড়ে। কি আর করমু বাচ্চা কাচ্চা লইয়া বিপদে আছি। সরকার যদি আমাগো দিগে একটু চাইতো হেলে নিজেগো ভিডাডায় হয়তো থাকতে পারতাম।'

পটুয়াখালী সদর উপজেলার কচাবুনিয়া নদীর ভাঙনে দিন দিন নিঃস্ব হচ্ছেন বদরপুর ও মৌকরণ ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ। সম্প্রতি ভাঙনের তিব্রতা বেড়ে যাওয়ায় হুমকি মুখে রয়েছে ইউনিয়নের প্রধান সড়কসহ জাতীয় গ্রিডে বিদু্যৎ সঞ্চালন লাইনের খুঁটি। গত কয়েক দশক যাবত এই ভাঙন চললেও প্রতিকারে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা।

সম্প্রতি ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভাঙনের কারণে মৌকরণ ইউনিয়নের চলাচলের প্রধান সড়কটির অবস্থাও বেহাল। সড়কের অর্ধেক নদী গর্ভে ইতোমধ্যে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে পটুয়াখালী-বরিশাল ১৩২ কেভি জাতীয় গ্রিডের বিদু্যৎ সঞ্চালন লাইনের ১৫৭নং স্ট্রিল এইচ-পোল ফাউন্ডেশন। মৌকরণ ইউনিয়নের নদীর পাড়ের সড়ক ব্যবহার করে মৌকরণ বিএলপি ডিগ্রি কলেজ ইউনিয়নের প্রধান বাজারসহ বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় চলাচল করা যায়। ফলে সড়কটি ভেঙে গেলে এই ইউনিয়নের মানুষকে দীর্ঘ মেয়াদি বিড়ম্বনার মধ্যে পরতে হবে। পাশাপাশি কচাবুনিয়া নদীর উপর নির্মিত মৌকরণ ব্রিজের পূর্ব ও পশ্চিমপাশে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে।

বদরপুর এলাকার বাসিন্দা বশির হাওলাদার বলেন, 'আমাদের বাড়িতে দশ করা জমি ছিলে, ভাঙতে ভাঙতে এখন দুই করা আছে। আমার এহন থাহার মতো কোনো জমি নাই। আমার এই বয়সে আমি চারবার বাড়ি ভাঙছি। আমরা সরকারের কাছে আর খিছু চাই না পাইলিং (সিসি বেস্নাক) এর ব্যবস্থা চাই।'

জাতীয় গ্রিডের বিদু্যৎ সঞ্চালন লাইন হুমকির বিষয়ে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশ'র নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান পলাশ বলেন, 'ঝুঁকি বিবেচনা করে ওই খুঁটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নদী পাড়ে বালির বস্তা এবং পাইল করার জন্য ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। নদীর পানি কিছুটা কমলে কাজটি শুরু করা হবে।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন জানান, গুরুত্ব বিবেচনা করে ইতোমধ্যে ওই এলাকায় স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সার্ভের কাজ শুরু হয়েছে। পরিকল্পনা ও ডিজাইন তৈরি করে অনুমোদনের জন্য জন্য পাঠানো হবে। অনুমোদন পেলে প্রয়োজনীয় টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে