সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোতে ৫৩ বছর ধরে দশ গ্রামবাসীর নদী পারাপার

জাজিরা (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি
  ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মার শাখা নদীতে সেতু না থাকায় পারাপারের জন্য তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো -যাযাদি

গত দেড় দশকে সারা দেশে ব্যাপক উন্নয়ন ও অগ্রগতি হলেও শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের রূপ বাবুর হাট এলাকায় অবস্থিত পদ্মার একটি শাখা নদীতে দীর্ঘ ৩০০ মিটার বাঁশের সাঁকো দিয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে প্রায় অর্ধ-শতাধিক বছর ধরে চলাচল করছে আশপাশের অন্তত ১০টি গ্রামের বাসিন্দা। এতে বিভিন্ন সময় ছোট-বড় নানা দুর্ঘটনা ঘটার পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয়দের। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় সারা বছর নৌকা দিয়ে এই নদী পারাপার হলেও কালের বিবর্তনে নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় শুষ্ক-মৌসুমে নদীটি শুকিয়ে অনেকটা কৃষিজমিতে পরিণত হয়। তাই প্রতি বছরের এই সময়ে এখানে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন স্থানীয়রা। আর এই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে চলাচলের সময় মাঝেমধ্যেই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। তাছাড়া কয়েক বছর আগে বর্ষার মৌসুমে নদী পার হতে গিয়ে নৌকাডুবিতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।

পদ্মা-বিধৌত জাজিরার পূর্ব নাওডোবার ফেদুলস্না বেপারি কান্দি এবং রূপবাবুর হাটের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মার এই শাখা নদীটির ওপর তৈরি করা হয় দীর্ঘ এই বাঁশের সাঁকো। নিয়মিত নদী পারাপারে সাঁকোটি রূপবাবুর হাট বাজার ছাড়াও ফেদুলস্না বেপারি কান্দি এবং দড়ি কান্দিসহ আশপাশের অন্তত ১০টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের সম্বল। স্থানীয়রা বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে দীর্ঘদিন যাবত এই স্থানে একটি পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে এলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

স্থানীয়দের মতে, প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীর এক প্রান্ত পদ্মায় যুক্ত থাকলেও জাজিরামুখী অপর প্রান্ত প্রায় ভরাট হয়ে গিয়ে কৃষি জমিতে পরিণত হয়েছে। অন্তত আধা কিলোমিটার প্রশস্ত নদীটি ভরাট হয়ে একটি নিচু জলাভূমিতে পরিণত হওয়ায় এটিকে স্থানীয়রা 'বাঁওড়' বলে জানে। বর্ষায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করলেও শুষ্ক মৌসুমে জেগে ওঠা জায়গাটিতে চাষাবাদ করেন স্থানীয়রা। যার ফলে স্থানটির খাল বা নদী হওয়া নিয়ে পাউবো এবং এলজিইডি'র মতামতের ভিন্নতা রয়েছে।

পালেরচর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামসহ নদীটির আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাই এই সাঁকো দিয়ে যাতায়াতে অধিক ঝুঁকিতে থাকা শিশু শিক্ষার্থীদের কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একাধিক কিন্ডারগার্টেন, কয়েকটি মাদ্রাসা এবং পূর্ব নাওডোবা পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পারাপারে বাধ্য হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে তাদের পারাপারে অনেক সময় পরে গিয়ে আহত হওয়ার পাশাপাশি বই-খাতা এবং জামা-কাপড় নষ্ট হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান মাদবর বলেন, যুগ-যুগ ধরে নদী পারাপারে আমাদের একমাত্র মাধ্যম সাঁকো, তাই ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পারাপার হতে গিয়ে শিশু, বয়স্ক এবং নারীদের আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করতে হয়। আর অসুস্থ কিংবা গর্ভবতীদের হাসপাতালে নিতে দীর্ঘপথ ঘুরে সড়কে উঠতে হয়।

পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন খান বলেন, রূপবাবুর হাট নদীতে সেতু না থাকায় স্থানীয়রা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আশপাশের প্রায় ১০টি গ্রামের অন্তত ৩০ হাজার বাসিন্দা প্রতিনিয়ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি সাঁকো দিয়ে নানা প্রয়োজনে নদী পারাপার হচ্ছে। এখানে একটি সেতু নির্মাণ হলে পালেরচর, পূর্ব নাওডোবা, বড়কান্দি, মাঝিরঘাট এবং বিকে নগর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন হবে। তাই এখানে একটি সেতু করার জন্য আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)'র জাজিরা উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইমন মোলস্নার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান- পূর্ব নাওডোবা এলাকার রূপবাবুর হাট বাজারের সঙ্গে থাকা নদীতে একটি পাকা সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রাথমিকভাবে সেতু নির্মাণের ডিজাইন প্রস্তুত করেছি। নতুন করে আর কোনো ধরনের জটিলতা তৈরি না হলে আশা করছি খুব দ্রম্নতই আমরা সেতুটি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে