সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
কালীগঞ্জ এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেড

আইন অমান্য করে নদী ও ফোরশোর ভরাট

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি
  ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের একুতা মৌজায় শীতলক্ষ্যা নদী ও ফোরশোর দখলের অভিযোগ উঠেছে কালীগঞ্জ এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেডের বিরুদ্ধে। তবে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন বিআইডবিস্নউটিএ। শীতলক্ষ্যা নদী পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের একটি প্রধান শাখা নদী। ১০৮ কি.মি. দীর্ঘ শীতলক্ষ্যা নদীটি গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার কালাগাচিয়া ইউনিয়নে ধলেশ্বরী নদীতে পতিত হয়েছে।

চরসিন্দুর ব্রিজ সংলগ্ন একুতা মৌজায় সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায় কালীগঞ্জ এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেড বিশাল এলাকা জুড়ে ফোরশোর ভরাট করে ফেলেছে এবং নদীর উপর কংক্রিটের দীর্ঘ দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। আবার কয়েকজন শ্রমিক হাতুরি দিয়ে সেই দেয়াল ভাঙছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মী সালাম জানান, 'বিআইডবিস্নউটিএ অভিযান চালানোর জন্য আসছিল, পরে আমাদের কারখানা কর্তৃপক্ষ নিজেরাই দেয়ালটি ভাঙবে বলে এক সপ্তাহের সময় নিয়েছে।'

কালীগঞ্জ এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেডের অনুকূলে বিআইডবিস্নউটিএ-এর কিছু শর্ত সাপেক্ষে একটি অনুমোদনও রয়েছে। ঘোড়াশাল নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানাধীন একুতা মৌজায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত কালীগঞ্জ এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেডের নিজস্ব জায়গায় পাকা আরসিসি জেটি ৮০০ বর্গফুট বা ৭৪ বর্গ মিটারের অনুমোদন রয়েছে। পরিবাহিত মালামাল উঠানামার জন্য ২,৪০,০০০ ঘনফুট বেসিন তৈরিরও অনুমোদন আছে। অনুমোদন রয়েছে ১,৫৫,০০০ বর্গফুট বা ৩৫৬ শতাংশ ফোরশোর ব্যবহারের। অনুমোদনের সঙ্গে ২২টি শর্ত জুড়ে দিয়েছে বিআইডবিস্নউটিএ। শর্ত ভঙ হলে অনুমোদনটি বাতিলও হতে পারে বলে সতর্ক করা আছে।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, শর্ত নং ২, ১৭, ১৯ ও ২০ ভঙ্গ করে ফোরশোর ভরাট ও নদীর উপর কংক্রিটের দেয়াল তৈরি করেছে। নদীর তীর ভূমির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ক্ষুণ্ন করে চলেছে কাজ। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার নেতারা জানান, কয়েকদিন আগে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন। সেই প্রেক্ষিতে প্রশাসনের পক্ষে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাফছা নাদিয়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এতে ওই প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লক্ষাধিক টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। তবে পুনরায় তারা নদী ও ফোরশোর ভরাট করে স্থাপনা তৈরি করছে।

এ ব্যাপারে বিআইডবিস্নউটিএ ঢাকা বন্দরের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, 'নদী দখলের বিষয়টি আমাদের নজরে আসলে উচ্ছেদের প্রক্রিয়া নেওয়ার পর কালীগঞ্জ এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেড দুই সপ্তাহ সময় নিয়েছে। এর মধ্যে তারা নিজেরাই নদী দখলকৃত স্থাপনা ভেঙে ফেলবে।'

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নয়ন মিয়া বলেন, কালীগঞ্জ এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেড নদী দখল করেছে তা সত্য। আমরা প্রতিবেদন দিয়েছি, এ বিষয়ে মামলা হবে।

বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, নদী ও নদীর ফোরশোর এলাকা আইন অনুসারে জলাধার হিসেবে সংজ্ঞায়িত। এ প্রতিষ্ঠানটি যদি নদী ও ফোরশোর ভরাট করে থাকে তাহলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে বিআইডবিস্নউটিএ'র সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা হয়েছে। শিগগিরই শীতলক্ষ্যা নদী কালীগঞ্জ এলাকার সীমানা নির্ধারণ করে পিলার স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে নদীর তীরে যেসব শিল্প কারখানা নদী দখল করে রেখেছে সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে