শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

তাড়াশে গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে 'সুপার ফুড শজনে'

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
তাড়াশে গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে 'সুপার ফুড শজনে'

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সর্বত্রই এখন গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে 'সুপার ফুড'খ্যাত ঝুলন্ত শজনের সবুজ সমারোহ। শক্ত ও পোক্ত না হতেই হাট-বাজারে উঠছে শজনে। দ্বিগুণ দামে তা কিনছেন ক্রেতারা। বাজারে এখন প্রতিকেজি শজনে ডাঁটা ১৪০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে দেদার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শে বাড়ছে শজনে চাষের প্রবণতা। গ্রামাঞ্চলের মেঠো পথে, বাড়ির আঙ্গিনায়, উঁচু ভিটায়, কৃষি জমির ধারে, বাড়ির পাশে, পুকুর পাড়ে ও ফাঁকা পরিত্যক্ত জায়গায় সজনে গাছের ভাঙা বা কাটা ডাল রোপণ করলে তেমন কোনো যত্ন ছাড়াই শজনে গাছ বড় হয়ে অঢেল ফলন দিয়ে থাকে। ইংরেজিতে শজনের নাম 'ড্রামস্ট্রিক'। যার অর্থ ঢোলের লাঠি। বীজ থেকে শজনে চারা তৈরি ব্যয়বহুল, কষ্টসাধ্য এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। পুষ্টি ও ঔষধি গুণসমৃদ্ধ সবজি শজনের ফুল-পাতা-ডাঁটা সবটাই খাওয়া যায়। এর সব কিছুতেই রয়েছে সমান পুষ্টিগুণ। জলবসন্ত, ডায়রিয়া, লিভারজনিত রোগ প্রতিরোধ করে শজনে। শজনের ফুল ও পাতা শুধু শাক হিসেবেই নয়, পশুখাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শজনের ডাঁটা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে, রাতকানা দূর করে, দুর্বল হাড় শক্ত করে এবং রক্তশূন্যতা দূর করে রক্তচাপ কমায়। শজনেতে জলীয় অংশ, খনিজ, আঁশ, খাদ্যশক্তি, ক্যালোরি, প্রোটিন চর্বি, শর্করা, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ক্যারোটিন ভিটামিন বি, সি ও খাদ্যোপযোগী প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

অবশ্য শজনে গাছের প্রতি সবার তেমন আগ্রহ না থাকলেও ডাঁটার প্রতি আগ্রহ নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন।

ঊপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানা যায়, শজনের ডাল রোপণ করলেই গাছ হয়। কোনো খরচ নেই। চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে গোটা বৈশাখ মাস পর্যন্ত শজনে পাওয়া যায়। বীজ ও ডালের মাধ্যমে শজনের বংশ বিস্তার করা বেশ সহজ। এদেশে বীজ থেকে চারা তৈরি করে চাষাবাদের রীতি এখন পর্যন্ত অনুসরণ করা হয় না। বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রে এপ্রিল-মে মাসে গাছ থেকে পাকা ফল সংগ্রহ করতে হবে। সেটিকে শুকিয়ে ফাটালে বীজ পাওয়া যাবে। এ বীজ শুকনো বায়ুরোধী পাত্রে ১-৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখার পর জুলাই-আগস্ট মাসে বীজতলায় অথবা পলি ব্যাগে বপন করতে হয়। বপনের আগে বীজগুলোকে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে বীজ থেকে চারা গজাতে সুবিধা হয়। বীজ থেকে চারা বের হতে সময় লাগে ১০ থেকে ২০ দিন। চারা বের হওয়ার পর নিয়মিত সেচ, সার প্রয়োগ ও অন্যান্য যত্ন পরিচর্যা করতে হয়। বীজ থেকে শজনে উৎপাদনের ক্ষেত্রে ডাল পুঁতে অঙ্গজ বংশ বিস্তারের চেয়ে কিছুটা দেরিতে ফল আসে। সজনে চাষে তেমন দক্ষতার প্রয়োজন হয় না।

উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুলস্নাহ আল মামুন বলেন, শজনে পাতা ও ফল সবজি খুবই পুষ্টিযুক্ত। সব সবজির তুলনায় শজনেতে বেশি পরিমাণ ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। শজনেতে নানা রকমের রসনাযুক্ত খাবার তৈরি হয়। এ সবজি চাষে কৃষকরা একটু মনোযোগী হলেই উপজেলায় শজনের উৎপাদন বাড়বে। অন্যান্য সবজি উৎপাদনের চেয়ে শজনে লাভজনক বলেও জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে