রোববার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২
অপরিকল্পিত বুড়িকিয়ারী বাঁধ

দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় হাকালুকি হাওড় পাড়ের তিন উপজেলা

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
  ১৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় হাকালুকি হাওড় পাড়ের তিন উপজেলা
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে হাকালুকি হাওড়ের সংযোগস্থলে বুড়িকিয়ারী বাঁধ - যাযাদি

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে হাকালুকি হাওড়ের সংযোগস্থল বুড়িকিয়ারী নামক স্থানে একটি অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরপর থেকেই মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওড় পাড়ের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। যার ফলে এই ৩টি উপজেলার ১৪ লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

জানা যায়, সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ও পিটাইটিকর গ্রাম রক্ষার জন্য ২০০৪ সালে বুড়িকিয়ারী নামক স্থানে একটি অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২০১০ সালে যখন প্রথম দুর্ভোগের শিকার হন হাকালুকি হাওড় পাড়ের মানুষ, তখন প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। হাওড় তীরের মানুষ বন্যার দুর্ভোগ উপেক্ষা করে আন্দোলন চালান। তৎকালীন জাতীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নওয়াব আলী আব্বাছ খান বুড়িকিয়ারী বাঁধ পরিদর্শন করে বিষয়টি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন। এরপর টনক নড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের।

সংসদীয় কমিটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সরেজমিন পরিদর্শন করেন বুড়িকিয়ারী বাঁধ। কুশিয়ারা নদী খনন করাসহ বুড়িকিয়ারী বাঁধ অপসারণের ঘোষণা দেওয়া হয়। হাকালুকি তীরের মানুষ আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু তাদের সেই আশা হতাশায় রূপ নেয়।

কুশিয়ারা নদী খননের মাধ্যমে বাঁধও ইটভাটা অপসারণ কাজ ধামাচাপা পড়ে যায়। হাওড়ের সঙ্গে কুশিয়ারার সংযোগস্থলেই রয়েছে বিশাল দুটি ইটভাটা। ফলে যেই দুর্ভোগ ছিল তাই থেকে যায়। ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে ১৪ বছর। আর এই ১৪ বছরে ৫ বার হাওড় তীরের মানুষকে ভয়াবহ ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে পড়তে হয়েছে।

২০১০, ২০১৪, ২০২০, ২০২২ ও ২০২৪ (চলতি) বন্যা দীর্ঘস্থায়ী ও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। চরম দুর্ভোগের শিকার হন কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার ১৪ লক্ষাধিক মানুষ।

এদিকে বুড়িকিয়ারী বাঁধ অপসারণের দাবিতে হাকালুকি হাওড় তীরের মানুষ আবারও তীব্র আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত ১৪ জুলাই কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বুড়িকিয়ারী বাঁধ পরিদর্শন করেন।

অপরদিকে এই তিন উপজেলার দীর্ঘস্থায়ী বন্যা ও জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয় বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ৩ উপজেলার পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়র পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ বলেন, এই বাঁধটি অপসারণ, সংযোগস্থলকে প্রসারিত ও গভীর করে খনন করলে দীর্ঘ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না। বিষয়টি সরকারের শীর্ষ মহলের নজরে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে হাওড় তীরের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা ও জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয় বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে