শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১
পানিবন্দি ২৫ গ্রামের মানুষ

ফের জলাবদ্ধতার শিকার ভবদহ অঞ্চল

অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি
  ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যশোরের অভয়নগরের সুন্দলী ইউনিয়নের জলাবদ্ধ ডহরমশিয়াহটী গ্রাম -যাযাদি

ফের জলাবদ্ধতার শিকার ভবদহ অঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার। পানিবন্দি ২৫ গ্রামের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করলেও মেলেনি এখনো কোনো সরকারি সহায়তা। কম দামে বিক্রি হচ্ছে গবাদিপশু। ভেসে গেছে শত শত মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে অর্ধশত হেক্টর জমির সবজি ও ফসলি ক্ষেত।

জানা গেছে, যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলাসহ খুলনা জেলার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলার পানি নিষ্কাশনের জন্য ১৯৬৮ সালে অভয়নগর উপজেলার পায়রা ইউনিয়নের কালিশাকুল গ্রামের ভবদহ নামক স্থানে নির্মিত হয়েছিল ২১, ৯, ৬ ও ২ ভেন্টের স্স্নুইস গেট। পরবর্তীতে টেকা, পশুর ও শ্রীহরি নদীর নব্যতা কমে যাওয়ায় ১৯৮৫ সাল থেকে স্থায়ী জলাবদ্ধতা শুরু হয় এ অঞ্চলে। জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন সরকার উদ্যোগ নিলেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি। যে কারণে টানা বৃষ্টিপাত হলেই ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

তারই ধারাবাহিকতায় গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে যশোরের অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী, চলিশিয়া ও পায়রা ইউনিয়নের ২৫ গ্রামের মানুষ জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

ভেসে গেছে শত শত মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে অর্ধশত হেক্টর জমির সবজি ও ফসলি ক্ষেত।

সরেজমিন তিন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, বসতবাড়ির উঠানে কোমর পর্যন্ত পানি জমে রয়েছে। ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। গবাদিপশু ও মানুষ একসঙ্গে বসবাস করছে। উপজেলা কোটা, চলিশিয়া, বাগদাহ, আন্ধা, বলারাবাদ, বেতভীটা, সরখোলা, ডুমুরতলা, সুন্দলী, ডহর মশিয়াহটী, বাড়েধা, দীঘলিয়া, ভাটাডাঙ্গী, বারান্দিসহ ২৫ গ্রামের হাজার হাজার পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে।

সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল বলেন, সম্প্রতি অতি বর্ষণ ও নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে আমার ইউনিয়নের বিলসংলগ্ন গ্রামগুলো জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। কয়েক'শ মাছের ঘের ভেসে গেছে। প্রায় ১২৫ হেক্টর জমির সবজি ও ফসলি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ত্রাণসহায়তা বা ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করতে দেখা যায়নি।

চলিশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সানা আব্দুল মান্নান বলেন, এবারের জলাবদ্ধতায় অভয়নগর উপজেলার সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আমার ইউনিয়ন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, মেলেনি কোনো সরকারি সহায়তা।

পায়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান আত্মগোপনে থাকায় সাবেক চেয়ারম্যানের ছেলে রফিকুল ইসলাম সরদার বলেন, শতাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। কী পরিমাণ ফসলি ক্ষেত ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে তা নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। দ্রত ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন।

প্রবির কুমার রায়, সোহাগ বিশ্বাস, আমিনুর রহমান বাঘা, আক্তারুজ্জামান, জালাল মোল্যাসহ ক্ষতিগ্রস্থ ঘের মালিকরা বলেন, অতি বর্ষণ ও উজানের পানির কারণে তাদের হাজার হাজার বিঘা মাছের ঘের ভেসে গেছে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, অভয়নগরে ৩ ইউনিয়নে ১২০ হেক্টর জমির ৩২০টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, রোপা-আমনের ৫৯০ হেক্টরসহ ৩৫ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ ব্যাপারে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, 'জলাবদ্ধতা নিরসনে ভবদহের স্স্নুইস গেটে চারটি পানির পাম্প চলমান রয়েছে। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার একপি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে জলাবদ্ধতার সমাধান হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে