নাটোরের নলডাঙ্গায় ভেজাল আমন ধানের বীজ বপন করে সর্বনাশ হয়েছে অর্ধশতাধিক কৃষকের। গত মঙ্গলবার নলডাঙ্গা বাজারের সেলিম বীজ ভান্ডার থেকে বীজ কিনে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা বীজ প্রত্যায়ন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।
কৃষকদের অভিযোগ, আমন বীজ কিনে রোপণ করায় আগে ও পরে গজিয়েছে ধানের শীষ। এতে বিভিন্ন জাতের মিশ্রণ থাকায় একই ক্ষেতে ধান গাছে আগে শীষ বের হয়েছে, কোনো ধান গাছে এখনো ধানের শীষ বের হয়নি। আবার অন্য ধানের শীষ পেকে গেছে। আর এতেই ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় দিশেহারা কৃষক।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের লিখিত অভিযোগ ও সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বুড়িরভাগ, নওপাড়া মাঠের প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে বিআর ৩৯ জাতের বীজ কিনে বপন করে প্রতারিত হয়েছেন অর্ধশতাধিক কৃষক। এ মাঠের বপন করা জমিতে দেখা যায় সময়ের আগেই গজিয়েছে ধানের শীষ। পরিপক্ব হওয়ার আগেই অধিকাংশ শীষে চিটা দেখা দিয়েছে। এছাড়া কোনো কোনো ধানের শীষ বের হয়নি। আবার কোনো ধানের শীষ পেকে গেছে। আর এতেই ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় দিশেহারা অন্তত ৫০ জন কৃষক। বুড়িরভাগ গ্রামের হাফিজুল ইসলাম বলেন, 'আমার দেড় বিঘা জমিতে নলডাঙ্গা বাজারের সেলিম বীজ ভান্ডার থেকে বিআর ৩৯ জাতের ধানের বীজ কিনে রোপণ করেছি। রোপণকৃত ধানের কিছু শীষ পেকে গেছে, কোনো কোনো শীষ এখনো বের হয়নি। এতে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছি।'
নওপাড়া ও বুড়িরভাগ গ্রামের ভুক্তভোগী ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জাহিদ, কালাম ও উজ্জল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, 'নলডাঙ্গা বাজারের সেলিম বীজ ভান্ডার থেকে বীজ কিনে জমিতে রোপণ করে আমাদের সর্বনাশ হয়েছে। এ ধান দিয়ে আমাদের পরিবারের সারা বছরের তিনবেলা খাবার জোটে। কিন্তু এখন ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমরা পরিবার নিয়ে কি খাব সেই চিন্তায় রয়েছি। আমরা ক্ষতিপূরণ ও বিচার দাবি করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা বীজ প্রত্যায়ন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এখনো কোনো প্রতিকার পাইনি।'
অভিযুক্ত নলডাঙ্গা বাজারের সেলিম বীজ ভান্ডারের মালিক আহাদ আলী বলেন, 'আমরা বিআরডিসির বীজ কৃষকদের কাছে বিক্রি করেছি। আমাদের কাছে রসিদ আছে। আমরা অন্য কোনো বীজ বিক্রি করিনি। এ বীজ রোপণ করে কি হয়েছে তা কৃষকরা ভালো জানেন। ফলন না হলে আমাদের কিছু করার নেই।' উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা কিশোয়ার হোসেন বলেন, 'এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কৃষকরা আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।' নাটোর জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, 'এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তবে কোন জাতের বীজ কিনেছেন সেই বীজের প্যাকেটের গায়ে থাকা ট্যাগ নম্বরের মাধ্যমে জানা যায়। কৃষকরা সেটা অভিযোগে উলেস্নখ করেননি। সেই ট্যাক নম্বর পেলে জানা যাবে।'
উলেস্নখ্য, গত ২০২৩ সালে নলডাঙ্গা বাজারের সেলিম বীজ ভান্ডার থেকে আমন বীজ কিনে শতাধিক কৃষক প্রতারিত হয়েছেন।