রংপুরে ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প কর্পোরেশনে (বিসিক) ৮২টি পস্নটই পরিপূর্ন। সেখানে আরএফএলসহ ১৮টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের অধীনে রয়েছে সবকটি পস্নট। পস্নটের অভাবে নতুন কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান সেখানে স্থাপন করতে পারছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেড় যুগ ধরে দ্বিতীয় শিল্প নগরী গড়ে তোলার প্রস্তাব দফায় দফায় শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সবশেষ রংপুর নগরীর হরিদেবপুর এলাকার দুটি মৌজায় ১০০ একর জমিতে দ্বিতীয় শিল্প নগরীর প্রস্তাব গতবছর পাঠানো হলেও তাও উপেক্ষিত রয়েছে। এর আগে নগরীর দমদমা এলাকার ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সংলগ্ন রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে ৫০ একর ও রংপুর সদরের খলেয়া গঞ্জিপুর এলাকায় ১০০ একর জায়গায় একই প্রস্তাব পাঠানো হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
পস্নট বরাদ্দ কমিটি ও উদ্যোক্তাদের দাবি, রংপুরে বিসিকের অধীনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে ওঠার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসনিক জটিলতায় দ্বিতীয় শিল্পনগরী স্থাপনের প্রস্তাব মুখ থুবড়ে পড়েছে। একারণে যেখানে সেখানে অপরিকল্পিতভাবে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। এতে প্রতিনিয়ত কৃষিজমির ওপর চাপ বাড়ছে।
রংপুর চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির গতবছর বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিছিয়ে পড়া রংপুর অঞ্চলের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে শিল্পায়নের কােন বিকল্প নেই। অথচ শিল্পায়নের দিক থেকে এঅঞ্চল অনেক পিছিয়ে। এজন্য দেশি বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষে অবকাঠামোগত উন্ননের পাশাপাশি এ অঞ্চরের জন্য আলাদা শিল্প ও ঋণনীতি, ভ্যাট ও করণীতি প্রণয়ন, আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসনসহ অঞ্চল ও জেলা ভিত্তিক শিল্পায়নের উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
বিসিক সূত্র জানায়, ১৯৬৭ সালে ২০ দশমিক ৭৫ একর জায়গা নিয়ে রংপুর নগরীর সিও বাজার এলাকায় গড়ে ওঠে প্রথম বিসিক শিল্পনগরী। এরপর তা উদ্যোক্তাদের ইজারা দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিল্পনগরীটিতে তেমন কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বর্তমানে সেখানে বেহাল সড়ক, ভাঙ্গাচোরা ড্রেনেজ ব্যবস্থা, নিরাপত্তার অভাব, অপ্রসস্ত সড়ক ও অনুন্নত অবকাঠামো রয়েছে। এখানে মোট পস্নট রয়েছে ৮২টি। পস্নটগুলোর আয়তন সর্বনিম্ন ৩ হাজার ১৫০ স্কয়ার ফুট থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার স্কয়ার ফুটের মধ্যে। মোট শিল্প ইউনিট আছে ২৫টি। এর মধ্যে চালু আছে ২০টি ইউনিট। স্বাভাবিকভাবেই শিল্পোদ্যোক্তা বাড়লেও বাড়েনি পস্নটের সংখ্যা।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পস্ন্যান্ট না থাকায় এসব শিল্প ইউনিটকে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে নিজ উদ্যোগে বর্জ্য অপসারণ করতে হচ্ছে। ফলে বাড়ছে কারখানা পরিচালনা ব্যয়। বিসিক শিল্পনগরীর ভেতরের সড়কগুলো খানাখন্দে ভর্তি এবং বর্ষাকালে বা সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু সমান জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন ধরে নানান সংকট ও সীমাবদ্ধতায় থাকা এই শিল্পনগরীর সংস্কার এবং বিকাশের জন্য বিভিন্ন সময়ে একগুচ্ছ পরিকল্পনা তুলে ধরা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
বিসিক শিল্পনগরীতে থাকা কারখানার মালিকরা জানান, গ্যাস সংযোগ থাকলে উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পেত। অনেক সময় বিদু্যৎ না থাকলে উৎপাদন বন্ধ থাকে। নতুন শিল্পনগরী হলেও নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ হবে। রংপুরের ছোট-বড় শিল্পের বিকাশের সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে।
এদিকে, প্রতিদিনই নতুন নতুন শিল্পোদ্যোক্তারা এসে ঘুরে যাচ্ছেন পস্নটের জন্য। কিন্তু তাদের পস্নট দিতে পারছে না বিসিক কর্তৃপক্ষ।
নারী উদ্যোক্তা সামসী আরা জামান কলি এক ব্যক্তি বিসিক শিল্প এলাকায় চামড়া ও পাটপণ্য উৎপাদনে কোনো কারখানা স্থাপন করতে চান। কিন্ত সেখানে পস্নট না থাকায় তিনি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে পারছেননা। তার মতো অনেকেই এমন সমস্যায় রয়েছে। তারা দ্রম্নত দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তুলে নারী উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে জমি বরাদ্দের দাবি জানান।
রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আকবর আলী জানান, বিসিকের জায়গা না থাকায় যত্রতত্র অপরিকল্পিতভাবে শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠায় প্রতিনিয়ত কৃষিজমির ওপর চাপ বাড়ছে। তাই দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরীর প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।
রংপুর বিসিকের উপ ব্যবস্থাপক এহেছানুল হক জানান, বিসিক সর্বশেষ দ্বিতীয় শিল্পনগরী স্থাপনের শিল্পমন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব গতবছর এপিলে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে এই প্রস্তাবের ফাইলটি গবেষনা ও পরিকল্পনা শাখায় জমা রয়েছে। রংপুরে দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী স্থাপন করা হলে সম্ভাবনাময় কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলা গেলে রপ্তানি আয় বাড়বে। এঅঞ্চলে অর্থনীতি হবে সমৃদ্ধ ও সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান।