বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিদেশি সবজি স্কোয়াশ

স্বদেশ ডেস্ক
  ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিদেশি সবজি স্কোয়াশ
স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিদেশি সবজি স্কোয়াশ

স্কোয়াশ একটি সুস্বাদু ও জনপ্রিয় সবজি হিসেবে বিদেশিদের কাছে অনেক আগে থেকেই পরিচিত। বাংলাদেশে এই সবজি একটি উচ্চমূল্যের ফসল। কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই সবজির চাষ করছেন কৃষকরা। পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে তারা লাভবান হয়েছেন। তুলনামূলকভাবে কম উর্বর জমিতে এবং চরাঞ্চলে স্কোয়াশ চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকে। তাই নতুন করে কৃষকদের লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিদেশি সবজি স্কোয়াশ। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুর সদরের চেহেলগাজী ইউনিয়নের সালমাবাদ গ্রামের ২০ শতক জমিতে স্কোয়াশ চাষ করছেন মোহাম্মদ আলী। দিনাজপুর কৃষি অফিস থেকে বীজ ও প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার এবং মালচিং পেপার দিয়ে সহযোগিতা ও বিভিন্ন রকমের পরামর্শ নিয়ে এই স্কোয়াশ চাষ করছেন তিনি। প্রতিটি স্কোয়াশের ওজন দেড় কেজি থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত হচ্ছে। জমি থেকেই ব্যবসায়ীরা ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে কিনে নেন। এতে করে তার মাত্র ২০ হাজার টাকা খরচ হলেও ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা স্কোয়াশ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। এই প্রথম তিনি ২০ শতক জমিতে দুই প্রজাতের স্কোয়াশ চাষ করছেন। হলুদ জাতের স্কোয়াশ, আরেকটি সবুজ জাতের স্কোয়াশ। প্রতি সপ্তাহে একটি স্কোয়াশ গাছ থেকে দুই-তিনটি করে স্কোয়াশ হার্ভেস্টিং করছেন।

1

চাষি মোহাম্মদ আলী বলেন, 'এই প্রথম ২০ শতক জমিতে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে স্কোয়াশ চাষ করেছি। প্রতিটি গাছের সুন্দর চেহারা এবং পরিবেশ অনুকূল থাকায় মাত্র ৩৮ দিনের মাথায় স্কোয়াশ হারভেস্টিং করি। এখানে সবুজ জাতের স্কোয়াশ বেশি ফলন হচ্ছে। পাশাপাশি হলুদ জাতের স্কোয়াশ নতুন এবং দেখতে অনেক সুন্দর। এর ওজনও এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত হচ্ছে। বাজারে যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। তাই খুচরা ব্যবসায়ীসহ পাইকাররা জমি থেকেই স্কোয়াশ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আশা করছি মাত্র ৮০ থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত স্কোয়াশ হারভেস্টিং করা যাবে। এতে আমার মাত্র ২০ শতক জমিনের সব খরচ বাদ দিয়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ হবার সম্ভাবনা রয়েছে।'

শ্রমিক বাবু মিয়া বলেন, 'আমাদের এই ২০ শতক জমিতে জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে কয়েকবার পানির সেচ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি গাছে ফল এসেছে এবং কিছু কিছু গাছে আবার ফুল আসছে। একটি ফল আসার পর স্কোয়াশের অন্য ডালেই আরেকটি ফুল আসছে। এতে করে সপ্তাহে দুবার হারভেস্টিং করা যাচ্ছে। এতে করে আমরা অনেক লাভবান হব।'

দিনাজপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, দিনাজপুর সদরে ৪শ' হেক্টর জমিতে স্কোয়াশ চাষ করা হচ্ছে। চাষিদের স্কোয়াশ চাষে উদ্বুদ্ধ করে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এর বীজ সার মালচিং সরবরাহ করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আগামীতে এই স্কোয়াশ চাষের পরিধি আরও বৃদ্ধি পাবে।

চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়নে প্রকল্প কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় চিরিরবন্দর উপজেলায় চাষ হচ্ছে উচ্চমূল্যসম্পন্ন নিরাপদ ফসল স্কোয়াশ। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ বিদেশি সবজি চাষ করে সফল ও বাজিমাত করেছেন কয়েকজন কৃষক। নিজেদের গ্রামের জমিতে বিদেশি এ সবজির ফলন কেমন হয় তা দেখতে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ শুরু করেন তারা। ফলন ভালো হওয়ায় বিদেশি সবজি চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের। মাত্র তিন মাসেই স্কোয়াশ বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেছেন। আরও বৃহৎ পরিসরে স্কোয়াশ চাষ করবেন বলে আশা পোষণ করছেন তারা।

উপজেলার জয়পুর গ্রামের কৃষক লোকমান হাকিম জানান, 'আমি প্রতিবার ফুলকপি চাষ করি। এবার কৃষি অফিসের পরামর্শে নতুন সবজি স্কোয়াশ লাগিয়েছি। ফুলকপি চাষের থেকে স্কোয়াশ চাষে খরচ কম এবং লাভ বেশি। একটি স্কোয়াশ ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা বিক্রি করতে পারছি। এবার একটি ফুলকপি ৫ টাকা করেও বিক্রি করতে পারছেন না চাষিরা। সে হিসেবে স্কোয়াশ চাষ করে বেশ লাভবান হব।'

দক্ষিণ পলাশবাড়ী গ্রামের সিদ্দিক সরকার জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে ২০ শতক জমিতে এক্সএল সুপার জাতের স্কোয়াশ চাষ করেছেন। প্রথমবার ফলন খুব বাম্পার হয়েছে। প্রতি পিস স্কোয়াশ ১৫ টাকা পিচ বিক্রি করছেন। সামনে আরও বড় পরিসরে স্কোয়াশ চাষের পরিকল্পনা রয়েছে তার। স্কোয়াশ চাষে তার লাভ হওয়ায় স্থানীয় চাষিরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, তারাও স্কোয়াশ চাষ করতে আগ্রহী।

চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা জানান, উপজেলায় দুই একর জমিতে ৯ জন কৃষক স্কোয়াশ চাষ করে সফল হয়েছেন। স্কোয়াশ সবজি জাতীয় ফসল, যা কুমড়া ও ধুন্দল জাতীয় ফসলের ক্রস। দিনাজপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় আমাদের পরামর্শে কৃষকরা স্কোয়াশ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে কাজলী স্কোয়াশ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষকেরা। এ ধরনের সবজি অত্র অঞ্চলের মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। ১ বিঘা জমি থেকে উৎপাদন খরচ বাদে নূন্যতম একলাখ টাকা লাভ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। উপজেলার রুপবাটি ইউনিয়নের চরধুনাইল গ্রামের কৃষকেরা স্কোয়াশ চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভবান হতে শুরু করেছেন। তবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার বাজারমূল্য কম হওয়ায় হতাশ কৃষকরা। চর ধুনাইল গ্রামের স্কোয়াস চাষি ছোরমান মোলস্না জানান, তিনি এ বছর নিজের একবিঘা জমিতে স্কোয়াশ চাষ করেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে কাজলী জাতের স্কোয়াশ সবজির বীজ সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেছেন। খরচ বাদে বেশ ভালোই লাভ হয়েছে।

চরধুনাইল গ্রামের স্কোয়াস চাষি মজনু মিয়া জানান, তিনি প্রায় ২ বিঘা জমিতে স্কোয়াশ চাষ করছেন। বর্তমানে প্রতিটি গাছ ফলে ভরে গেছে। প্রতিদিন যে ফল সংগ্রহ করা হয় তা স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে ঢাকায় রপ্তানি করা হয়। প্রতি পিস স্কোয়াশ ১৫ টাকা করে কিনছেন তারা। তার আশা খরচ বাদে ১ বিঘা জমিতে একলাখ টাকা লাভ হবে। মজনুর মত আব্দুর রহমান, রেজাউল, আলিম, আব্দুল মজিদ তাদের আবাদী জমিতে বাণিজ্যিকভাবে স্কোয়াশ চাষ শুরু করেছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জেরিন আহমেদ বলেন, চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে শাহজাদপুর উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে স্কোয়াশের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আমরা শতভাগ জমিতে উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। স্কোয়াশ একটি উচ্চমূল্যের ফসল। আমরা প্রতি হেক্টর জমিতে ৩০ থেকে ৩৫ মেট্রিক টন স্কোয়াশ উৎপাদন করে থাকি। এখানে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শন স্থাপিত হয়েছে। একজন কৃষক জমি থেকে একটি গাছ থেকে তিন থেকে চারবার স্কোয়াশ আহরণ করতে পারেন। এক বিঘা জমিতে ২১শ' থেকে ২২শ' চারা রোপণ করতে পারে। যদি গড়ে চারটি করে ফল হিসাব করি তাহলে প্রায় ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার স্কোয়াশ উৎপাদন হচ্ছে। একবিঘা জমিতে কৃষক স্কোয়াশ আবাদ করে প্রায় দেড় লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করতে পারছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে