উর্ধমুখী আলুর বাজারে গত কয়েক বছরে আলোর মুখ দেখেছে বগুড়ার কৃষক। সেই নেশায় এবারো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বেশি আলু চাষ হয়েছে। অন্যদিকে গতবারের চেয়ে সরিষার আবাদ প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে কম হয়েছে। তবে বাজারে আলুর দাম নিম্নমুখী হলেও সরিষার বাজার রয়েছে উর্ধমুখী। এ কারণে কৃষকরা অনেকটাই হতাশাগ্রস্ত।
গত দুই বছর শেরপুর, সাজাহানপুর, কাহালু, নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া, আদমদীঘি, সোনাতলাসহ অন্য উপজেলাগুলোতে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সরিষার আবাদ ও হলুদ ফুলের ছিল সমারোহ। দূরদূরান্ত থেকে মৌয়ালীরা ভিড় জমিয়েছে মাঠে মাঠে। কিন্তু এবার মাঠে আলুর আবাদে ছেয়ে গেছে সবুজ প্রান্তর। তবে কোথাও কোথাও সবুজের মাঝে-মাঝে এক মুঠো হলুদ ফুল এনে দিয়েছে অস্বাভাবিক ভালো লাগার সৌন্দর্য।
এবার চরা দামে আলুর বীজ ক্রয় করতে হয়েছে কৃষকদের। প্রতি কেজি বীজ আলুর মূল্য ছিল ৬০-১২০ টাকা পর্যন্ত। শ্রমিক ও সারের দামও ছিল চরা। তবে এ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কীটনাশক ও ঠান্ডাজনিত নানা ধরনের রোগ বালাই কম দেখা গেছে। ফলে আলুর বেশ বাম্পার ফলন দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় আগাম জাতের আলু ইতিমধ্যে হারভেষ্ট শুরু হয়েছে। তবে পুরোদমে শুরু হতে আরও ১ মাস সময় লাগবে। এ পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকলে লোকশান থেকে কিছুটা মুক্তি পাবেন চাষিরা।
আলু চাষে এবার প্রতি বিঘায় খরচ পরেছে প্রায় থেকে ৪০-৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত। কৃষকদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী বিঘা প্রতি ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১২০ মণ পর্যন্ত আলু পাওয়া যায়। গত বছর এই সময় নতুন আলু প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা বাজার দর ছিল। কিন্তু এবার বর্তমানে ২০ টাকার নিচে নেমেছে। ধারণা করা হচ্ছে পুরোদমে আলু উত্তোলন শুরু হলে প্রতি কেজি আলু ১৫ টাকার নিচে আসতে পারে। এতে কৃষকের লাভ দূরের কথা চরম লোকশান গুনতে হবে। আবার হিমাগারে সংরক্ষণ করলে কি হবে তা নিয়েও ভাবনায় পড়েছেন কৃষকরা।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারো আলু বেশি চাষ হয়েছে শিবগঞ্জ উপজেলায়। এখানে এবার ১৯, ৪০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এছাড়া কাহালুতে ৭,৩০০ সদরে ৭,০২৫ শাজাহানপুরে ৬,০০০ দুপচাঁচিয়ায় ৫,৩৭০ নন্দীগ্রামে ৮,২৮৫ আদমদীঘিতে ৩,৫০০ শেরপুরে ২,৭৬৫ গাবতলীতে ১,৫৫০ সোনাতলায় ১,২৫০ সারিয়াকান্দিতে ৬২০ ধুনটে ৩৭০ মোট ৬০,৪৩৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে স্থানীয় জাতের আলু লাগানো হয়েছে ১১,৮২০ হেক্টর ও উন্নত জাত লাগানো হয়েছে ৪৮,৬১৫ হেক্টর।
সরেজমিনে বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, গত দু-বছরে দাম ভালো পাওয়ায় এবার আরোও বেশি জমিতে আলু লাগিয়েছিলাম। কিন্তু এখনই বাজারের যে অবস্থা তাতে লাভ দূরের কথা, চরম লোকশান গুনতে হবে। এর চেয়ে সরিষা কিংবা ভুট্টাতেই বেশি লাভ। কারণ আলুতে প্রচুর খরচ। এছাড়া রিস্কতো রয়েছেই।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মতলুবর রহমান বলেন, 'সরিষা একটি লাভজনক ফসল। প্রতিবছর আমদের বিদেশ থেকে সয়াবিন তেল আমদানি করতে হয়। দুই বছর আগে আমরা ৩০০ কোটি টাকার সয়াবিন সেভ করেছি। গত বছরও ৬০০০ কোটি টাকা সেভ হয়েছে। এতে জাতীয়ভাবে আমরা সয়াবিন আমদানি কমাতে সক্ষম হয়েছি। এবছরও আমরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সরিষা অর্জন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু গত দুইবছরে আলুতে বেশ ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা আলুতে ঝুঁকে পড়েন। এতে প্রায় ৫হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে। অপরদিকে ভুট্টা একটি লাভজনক ফসল হওয়ায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। এসব কারনে সরিষার আবাদে কমিয়ে আলু ও ভুট্টাতে চলে গেছে। তবে এবার আলুর বাজারের উপর অনেকটাই নির্ভর করবে আগামিতে সরিষার আবাদ।'
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আলুর দাম যদি কমে যায় সেক্ষেত্রে হিমাগারে সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া নিজ বাড়িতেও দেশীয় পদ্ধতিতে অন্তত ২-৩ মাস সংরক্ষণ করে রাখতে পারবে। তাতে দাম পাওয়ার সম্বাবনা রয়েছে।
উলেস্নখ্য, গতবছর আলু উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ১১ লাখ ৯৩ হাজার ৬১৬ মেট্রিক টন। এবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। তবে কৃষিবিভাগ মনে করছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জিত ফলন অনেক বেশি হবে। কারন গত বছরের চেয়ে এবার ৫ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে।