শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হত্যা মামলায় তিন জেলায় ৯ জনের মৃতু্যদন্ড

যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

পৃথক হত্যা মামলার রায়ে বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি, খুলনা ও বরিশালে নয়জনকে মৃতু্যদন্ড দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে স্বামী হত্যা মামলায় খাগড়াছড়িতে স্ত্রীসহ ৫ জন, খুলনায় এক ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে ৩ জন এবং বরিশালে আট বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে ১ জনকে মৃতু্যদন্ড দিয়েছেন আদালত। আমাদের খাগড়াছড়ি, খুলনা ও বরিশালের স্টাফ রিপোর্টারদের পাঠানো তথ্যমতে এ সংবাদ জানা গেছে।

খাগড়াছড়িতে ৫ জনের ফাঁসি : খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলায় স্ত্রী রাবেয়া বেগম কর্তৃক স্বামী মো. মোমিনুল হককে হত্যার দায়ে রাবেয়া বেগমসহ পাঁচজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে খাগড়াছড়ি জেলা ও দায়রা জজ রেজা মো. আলমগীর হাসান এ রায় দেন। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বিধান কানুনগো বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

দন্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন- রামগড় চৌধুরীপাড়ার মানিক মিয়ার ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৪), একই এলাকার মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে ফিরোজ (২৮), গুইমারা উপজেলার রেনুছড়া এলাকার শাহ আলমের ছেলে আবুল কালাম (২২) এবং একই এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে আবুল আসাদ ওরফে মিঠু (২০)। এদের মধ্যে আবুল আসাদ ওরফে মিঠু পলাতক। বাকিরা রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী মো. মোমিনুল হকের স্ত্রী রাবেয়া বেগম পরকীয়ার সম্পর্কের জেরে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া খুনি দিয়ে স্বামী মোমিনুল হককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন স্ত্রী। পরে জঙ্গলে মরদেহ রেখে পালিয়ে যায় খুনিরা। ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রম্নয়ারি সন্ধ্যায় স্থানীয়রা মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দেয়। এ ঘটনায় তদন্ত করে ৫ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। আদালত রাষ্ট্রপক্ষের ১২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে চার বছরের মাথায় এ রায় দেন।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বিধান কানুনগো বলেন, এ রায় সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ফাঁসি দেন। একইসঙ্গে তাদের পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

খুলনায় ৩ জনের মৃতু্যদন্ড

খুলনায় শ্রী এগ্রো লিমিটেডের কর্মী গোবিন্দ সানা হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃতু্যদন্ড দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার খুলনার জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইবু্যনালের বিচারক মো. সাইফুজ্জামান হিরো এ রায় ঘোষণা করেন। মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত তিনজনই পলাতক রয়েছে। আসামিরা হচ্ছে- বিবেক মন্ডল, সৌগত রায় ও অরুণা ভরায়।

আদালতের উচ্চমান বেঞ্চ সহকারী মো. ছায়েদুল হক শাহিন জানান, ৩০২/২০১/৩৪ ধারার অপরাধের বিচার শেষে বিচারক ৩০২/৩৪ ধারার অপরাধে আসামিদের মৃতু্য না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃতু্য কার্যকর করার আদেশ দিয়েছেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর রাত সাড়ে আটটা থেকে ২১ নভেম্বর বেলা দুইটার মধ্যে যেকোনো সময় প্রাইভেট কোম্পানিরকর্মী গৌতম গোবিন্দাকে হত্যা করা হয়। এরপর তার লাশ গলায় ও কোমরে ইট বেঁধে ঢাকি নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। ২২ নভেম্বর সকালে নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় গোবিন্দর লাশ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই কৃষ্ণ পদ সানা বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত শেষে সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক কাজী মোস্তাক আহমেদ ২০১৬ সালের ১৯ জুন আদালতে ৩ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৮ সালের ৫ জুলাই আদালতে এই মামলার শুনানির মধ্য দিয়ে চার্জ গঠন ও বিচার শুরু হয়। বিচার চলাকালে আদালত এই মামলায় ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। সব শেষে বৃহস্পতিবার বিচার করায় ঘোষণা করেন। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরিফ মাহমুদ লিটন ও আসামি পক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. মোরশেদ মামলাটি পরিচালনা করেন। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে নিহতের পরিবার।

বরিশালে শিশুধর্ষণ ও হত্যা মামলায় মৃতু্যদন্ড

ব?রিশা?লে আট বছ?রের শিশু?কে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে আবুল কালাম আজাদ ওর?ফে কালু? (৩৬) নামে এক ব্যক্তিকে মৃতু্যদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় অপহরণের দায়ে ওই ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও লাশ গুমের অপরাধে আরও সাত বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। বৃহস্প?তিবার ব?রিশা?ল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যনালের বিচারক মো. আবু শামীম আজাদ আসামির উপ?স্থি?তি?তে এ রায় দেন। কালু ব?রিশাল নগরের এয়া?রপোর্ট থানাধীন কা?শিপুরের গণপাড়া এলাকার মৃত ওয়াহাব খা?নের ছে?লে।

মামলা সূ?ত্রে জানা গে?ছে, ২০১৮ সা?লের ১১ মার্চ পূর্বগণপাড়া সরকা?রি প্রাথ?মিক বিদ্যাল?য়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সীমা আক্তার প্রতি?দি?নের মতো তার বিদ্যাল?য়ে যায়। বিদ্যাল?য়ের শৌচাগার বন্ধ হওয়ায় সে বিদ্যাল?য়ের পাশে অবস্থিত আসামি কালুর বা?ড়ির শৌচাগা?রে যায়। এ সময় কালু ওই শিশু?কে অপহরণ ক?রে ধর্ষণ ক?রে। প?রে হত্যা ক?রে লাশ বস্তাব?ন্দি ক?রে একই এলাকার হা?লিম মাস্টারের বা?ড়ির গোরস্থা?নে ফে?লে রাখা হয়। ঘটনার দুইদিন পর ১৩ মার্চ ওই গোরস্থান থে?কে লাশ উদ্ধার ক?রে পু?লিশ। এই ঘটনায় নিহ?তের মা মাহমুদা বেগম বাদী হ?য়ে আসামির নাম উ?লেস্নখ ক?রে এয়ারপোর্ট থানায় মামলা দা?য়ের করেন। তদন্তে সত্যতা পেয়ে ২০১৮ সা?লের ৩০ সে?প্টেম্বর এয়ারপোর্ট থানার ইন্স?পেক্টর আব্দুর রহমান মুকুল আসামির বিরুদ্ধে আদাল?তে চার্জশিট দেন।

রাষ্ট্রপক্ষ ১০ জ?নের সাক্ষ্য প্রদানে সক্ষম হয়। সাক্ষী প্রমাণে দোষী সাব্যস্ত হলে ধর্ষণ শেষে হত্যার অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃতু্যদন্ড কার্যকর করাসহ এক লাখ টাকা জরিমানা, অপহরণের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং লাশ গুম করার অপরাধে ৭ বছর কারাদন্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদন্ড দেন আদালত।

আদাল?তের পাব?লিক প্রসি?কিউটর ফয়জুল হক ফ?য়েজ জানান, আসামির সম্পদ বা?জেয়াপ্ত ক?রে ধার্যকৃত জরিমানার দেড় লাখ টাকা আদায় করে ভিক?টি?মের প?রিবার?কে দেয়ার জন্য বরিশাল জেলা কালেক্টরকে নি?র্দেশ দেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে