শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
কুষ্টিয়ার এসপিকে হাইকোর্ট

কথায় পটু হলে চলবে না, কাজে পটু হতে হবে

যাযাদি ডেস্ক
  ২৬ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসানের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় অনুতপ্ত হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম তানভীর আরাফাত। তার উদ্দেশে শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, পুলিশের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকের সুরক্ষা দেওয়া; সে যে-ই হোক না কেন। কুষ্টিয়ায় যে পরিবেশ বিরাজ করছে, পত্রপত্রিকায় যেভাবে এসেছে, তা যদি বাস্তব চিত্র হয়, এটি হবে ভয়ংকর।

২০ জানুয়ারি আদালতের নির্দেশ অনুসারে সোমবার সকালে এসপি তানভীর আরাফাত উপস্থিত হন। বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে গতকাল বেলা পৌনে ১১টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী শুনানি চলে। আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে পুলিশের এই কর্মকর্তা নিঃশর্ত ক্ষমার আরজি জানান।

আদালত কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারের উদ্দেশে আরও বলেন, 'কে কোন দল, মত, আদর্শের উত্তরাধিকার, এটা বিবেচ্য বিষয় আপনার নয়। কথায় পটু হলে চলবে না, কাজে পটু হতে হবে।'

হাইকোর্ট বলেন, 'পুলিশ কর্মকর্তা ও জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আপনার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আপনার কার্যক্রমের মাধ্যমে সব কিছুর সমন্বয় সাধন করে কুষ্টিয়ায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করবেন, যাতে পুলিশ ভীতিকর না হয়ে বন্ধু হয়। আপনাদের মূলমন্ত্র দুষ্টের দমন শিষ্টের লালন। আপনাকে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আপনি রাষ্ট্রপতি পদক পেয়েছেন। এর মর্যাদা রক্ষা করা আপনার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।'

পুলিশ সুপারের প্রতি হাইকোর্ট আরও বলেন, 'রাষ্ট্রের অঙ্গগুলোর (তিনটি বিভাগ) মধ্যে সমন্বয় সাধন করে কাজ করাকেই দক্ষতা বলে। এমন যাতে না হয়, একটি পুলিশি রাষ্ট্র কায়েম হয়ে গেছে, মানুষ সেই ধারণা করতে পারে। জাতি উৎকণ্ঠিত। এ অবস্থা নিরসনের দায়িত্ব আপনাদেরই। আপনারা অনেক ভালো কাজ করেন। তাই কথায় পটু না হয়ে কর্মে পটু হোন। তাতে উদ্দেশ্য সাধনে আপনি সফল হবেন।'

আদালতে পুলিশ সুপারের পক্ষে শুনানি করেন মুনসুরুল হক চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী শফিকুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাহিরুল ইসলাম।

শুনানিতে এসপির পক্ষে মুনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, 'ঘটনা ঘটে গেছে। সেখানে আমার (এসপির) ভুল হয়েছে স্বীকার করছি। অপরাধ করেছি। অতীতে তার (এসপির) এমন কোনো রেকর্ড নেই। এমন ভুল ভবিষ্যতে হবে না। ভবিষ্যতে দায়িত্ব পালনে আরও সতর্ক থাকব বলে অঙ্গীকার করছি।'

এসপিকে আদালত অবমাননা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আরজি জানানো হয়। আইনজীবী অনীক আর হক যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে আরজি জানান।

শুনানি নিয়ে আদালত আগামী ১৭ ফেব্রম্নয়ারি আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন। সে সঙ্গে এই সময় পর্যন্ত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা শাহজাহান আলীর পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুলিশ সুপারকে আপাতত ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসানের সঙ্গে এসপি এস এম তানভীর আরাফাত অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে