শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাবি উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে কঠোর আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

হ রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপির ঘোষণা হ প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তালা হ উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও হ প্রতিবাদী ফেস্টুন ও ব্যঙ্গচিত্র
ম শাবি প্রতিনিধি
  ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
ক্যাম্পাস ও হল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ভিসির পদত্যাগ চেয়ে সোমবার শাবি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন -ফোকাস বাংলা

শাহজলাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রীহলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রভোস্টের 'অসদাচরণে'র অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। পাঁচ দিনে নানা ঘটনার পর সেই আন্দোলন এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবির আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের এখন একটাই দাবি, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে পদত্যাগ করতে হবে। সোমবার সকাল ৮টা থেকে এই দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থীকে। এ বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ বলেন, আমাদের দাবি একটাই, উপাচার্যের পদত্যাগ।

তিনি জানান, 'উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। একই সঙ্গে ক্যাম্পাস ছেড়েও আমরা যাব না। আমাদের ক্যাম্পাসে আমরাই থাকব।'

একই সঙ্গে ভিসিকে অপসারণ দাবিতে রাষ্ট্রপতি বরাবর একটি স্মারকলিপি দেবেন বলেও তারা জানিয়েছেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদীন বলেন, 'আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। ভিসির অপসারণ দাবিতে বেলা আড়াইটা থেকে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করছি। এই গণস্বাক্ষরসহ রাষ্ট্রপতি বরাবর ভিসির অপসারণের জন্য স্মারকলিপি প্রদান করব।'

এর আগে সোমবার সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে বিক্ষোভ-মিছিল বের করে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শিক্ষার্থীরা। এরপর দুপুর ১২টার আগে হল ত্যাগের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান এবং ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের নিয়ন্ত্রণে নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি হলের প্রভোস্টের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। বেলা আড়াইটার দিকে সব প্রশাসনিক ভবন ও ৪টি একাডেমিক ভবনে তালা লাগিয়ে দেন তারা। এসময় ভিসি ভবনের সামনে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা যায়।

এরপর বিকাল ৩টায় উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করেন শিক্ষার্থীরা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরের রেলিং এ ঝুলিয়ে রাখেন।

পরে বিকাল ৪টা থেকে উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা 'ভিসি তুই স্বৈরাচার গদি থেকে সরে যা', 'স্বৈরাচারী বোমা মারে আমার ভাইয়ের রক্ত ঝরে', 'এক দফা এক দাবি, উপাচাযের্র পদত্যাগ', 'শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা কেন, সুষ্ঠু বিচার চাই', 'ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন, প্রশাসন জবাব চাই'সহ বিভিন্ন স্স্নোগান দেন।

এ ছাড়া 'হাতের সঙ্গে হাত মেলাও- একসঙ্গে ভিসি হটাও', 'শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সময় থাকতে এক হও নইলে হাতে পর কাচের চুড়ি', 'অবাঞ্ছিত ভিসি ও তার সিন্ডিকেটের অবিলম্বে পদত্যাগ চাই' লেখা সংবলিত পস্ন্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত ১০টা) শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে আন্দোলন করছেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান কি জানতে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন এবং বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডক্টর আনোয়ারুল ইসলাম।

সোমবার সকালে তিনি বলেন, রোববার রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এই কমিটি গঠন করা হয়। ফিজিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডক্টর মো. রাশেদ তালুকদারকে সভাপতি ও রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেনকে সদস্য সচিব করে এই কমিটি গঠন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদের ডিন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতিকে সদস্য করা হয়েছে।

উলেস্নখ্য, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হল প্রভোস্টের অসদাচরণের অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে আন্দোলনে নামেন বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা। রোববার সেই আন্দোলনের চতুর্থ দিনে দুপুর আড়াইটার দিকে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং শেষে রেজিস্ট্রার ভবন থেকে বের হলে উপাচার্যের পিছু নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দ্রম্নত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এমএ ওয়াজেদ মিয়া ভবনে এসে আশ্রয় নেন উপাচার্য। উপাচার্যকে মুক্ত করতে বিকাল ৪টায় পুলিশ উপস্থিত হয়।

এসময় 'ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন? প্রশাসন জবাব চাই' স্স্নোগানে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে বিকাল সাড়ে ৫টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, ককটেল, ফাঁকা গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। পুলিশের লাঠিচার্জে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ও পুলিশের নিজেদের গুলিতে কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করে তার বাসভবনে নিয়ে যায়।

এরূপ পরিস্থিতিতে শাবিপ্রবি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে প্রশাসন। রোববার রাতে সিন্ডিকেটের জরুরি সভা শেষ এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে সোমবার দুপুর ১২টার আগেই আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে