আনন্দ ও উৎসব মুখরতায় মেতেছেন লাখো মানুষ। তাদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ও উৎসাহ বিরাজ করছে। এ আনন্দমুখরতা ছড়িয়ে পড়ে অন্তত ২০ গ্রামে। এরই মধ্যে অধিকাংশ বাড়িতেই আত্মীয়-স্বজনদের আগমন ঘটেছে। ঘরে ঘরে বিভিন্ন রকম পিঠাপুলি তৈরিসহ ধুমধাম নানান আয়োজনও শুরু হয়ে গেছে। প্রতি বছরের বাংলা সনের ২৮ পৌষকে ঘিরে এই আয়োজন, উৎসব ও ব্যস্ততা চোখে পড়ে। এদিন উৎসবমুখর পরিবেশে মাগুরার মহম্মদপুরের বড়রিয়া গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় খুলনাঞ্চলের সর্ববৃহৎ ও শত বছরের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। অন্যান্য বছরের মতো এবারও চিরচেনা রূপে সেজেছে মেলা প্রাঙ্গণ।
খুলনা বিভাগের শতবর্ষী ও সর্ববৃহৎ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে। তবে মেলা বসেছে আরও তিনদিন আগে থেকেই। ঘোড়দৌড়ের আগে ও পরে মেলা চলে সপ্তাহ খানেক। এবার ১৫টি শর্তে তিনদিনের জন্য মেলার অনুমতি পাওয়া গেছে।
উপজেলার আর দশটি গ্রামের মতোই বড়রিয়া। উলেস্নখযোগ্য তেমন কোনো বৈশিষ্ট্য না থাকলেও গ্রামটি খুব বড়। এ গ্রামেরই সানু সরদার নামের এক আমুদে ব্যক্তি মেলার প্রতিষ্ঠাতা। শত বছর আগে মাগুরা সদর উপজেলার বাহরবা গ্রামে প্রতি বছরের ২৮ পৌষ অনুষ্ঠিত হতো ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। ওই মেলায় বড়রিয়া গ্রামের সানু সরদার তার ঘোড়া নিয়ে অংশ নিতেন এবং ছিনিয়ে আনতেন প্রথম পুরস্কার। এক বছর মেলা কমিটি জোরপূর্বক তার ঘোড়াকে পরাজিত করে। প্রতিবাদ করায় তিনি লাঞ্ছিত হন। ক্ষোভে-দুঃখে তিনি পরের বছর থেকেই নিজ গ্রামে ওই একই দিনে ঘোড়দৌড় মেলার আয়োজন করেন। কালক্রমে প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই ওই মেলাটি হয়ে উঠেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জমজমাট হয়ে উঠেছে মেলামাঠ। বিভিন্ন ধরনের হাজারও দোকান বসেছে। বিভিন্ন ধরনের নাগরদোলা স্থাপনের কাজও শেষ হয়েছে। বিভিন্ন স্টলে। নানা ধরনের খেলনা সামগ্রী ও প্রসাধনী থরে থরে সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। মিষ্টি-মিঠাই তৈরির চুলায় আগুন জ্বলেছে আরও কয়েকদিন আগে থেকেই। বছর ঘুরে বড়রিয়া গ্রাম ফিরে পেয়েছে চিরচেনা রূপ।
বিভিন্ন স্থানের লাখো মানুষের সমাগমে মহম্মদপুরের বড়রিয়া হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। ধনী-গরিব-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার মিলন কেন্দ্রে পরিণত হয় মেলা মাঠ। নবসাজে সজ্জিত হয় মেলা প্রাঙ্গণ। উপজেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে মেলা মাঠ অবস্থিত।
অসংখ্য দোকানপাট আর হাজার রকমের পণ্যের বিপুল সমাহারে গোটা মেলা প্রাঙ্গণ থাকে পরিপূর্ণ। লাখো মানুষের সমাগমে জনসমুদ্রে পরিণত হয় মেলা মাঠ। মাছ-মাংস, মিষ্টি-মিঠাই, খেলনা-প্রসাধনী, ঘর-গৃহস্থালি থেকে শুরু করে মানুষের নিত্য চাহিদার সব কিছুই পাওয়া যায় এ মেলায়। থাকে বিনোদনের হরেক ব্যবস্থা। মানুষের হাসি-কান্না, শিশু-কিশোরের কলকাকলি, বাঁশি ও ঝুনঝুনির শব্দে মেলার বিরাট প্রাঙ্গণ হয়ে উঠে মুখরিত।
মাগুরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাত হোসেন মাসুদ স্বাক্ষরিত এক পত্রে ১৫ শর্তে তিনদিনের (১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি) জন্য মেলার অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অসিত কুমার রায় বলেন, 'মেলা প্রাঙ্গণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে জোরদার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।'