সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ ব্রয়লার মুরগির মাংস, নেই স্বাস্থ্যঝুঁকি

গবেষণার ফল
বিশেষ প্রতিনিধি
  ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

ব্রয়লার মুরগির মাংসে, হাড়ে এবং কম্পোজিটে দু'টি এন্টিবায়োটিক (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও ডক্সিসাইক্লিন) এবং ৩টি হেভি মেটালের (আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম ও লেড) সামান্য উপস্থিতি রয়েছে, যা অস্বাভাবিক নয় এবং তা সর্বোচ্চ সহনশীল সীমার অনেক নিচে। খামার এবং বাজারে প্রাপ্ত ব্রয়লার মাংসের চেয়ে সুপারশপের ব্রয়লার মাংসে এন্টিবায়োটিক এবং হেভি মেটাল এর পরিমাণ কম রয়েছে। তাই ব্রয়লার মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই।

ব্রয়লার মুরগির মাংসে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে কি না, তা জানতে পরিচালিত গবেষণার ফলাফল থেকে এ তথ্য জানা গেছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ও উদ্যোগে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অধীনে গবেষণাটি গত জানুয়ারি-জুন ২০২২ সময়ে পরিচালিত হয়েছে।

গবেষণার ফল অনুযায়ী ব্রয়লার মাংসে গড়ে ৮.০ পিপিবি (পার্টস পার বিলিয়ন) অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, ৯.১ পিপিবি ডক্সিসাইক্লিন, ৬.২ পিপিবি আর্সেনিক, ১৯০.৭ পিপিবি ক্রোমিয়াম এবং ২৫৯.১ পিপিবি লেড রয়েছে, যা সর্বোচ্চ সহনশীল-অবশিষ্ট সীমার চেয়ে যথাক্রমে ১২.৫ গুণ, ১০.৯ গুণ, ৬.৫ গুণ, ৫.২ গুণ এবং ২৩.১ গুণ নীচে রয়েছে।

ব্রয়লার মুরগির হাড়ের নমুনা

পরীক্ষণের ফলাফলে দেখা যায়, গড়ে ৫৩.৭ পিপিবি অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, ২৭.০ পিপিবি ডক্সিসাইক্লিন, ৭.২ পিপিবি আর্সেনিক, ৪৩৯.৯ পিপিবি ক্রোমিয়াম এবং ৪৬৪.৬ পিপিবি লেড রয়েছে, যা সর্বোচ্চ অবশিষ্ট সীমার চেয়ে যথাক্রমে ১.৮ গুণ, ৩.৭ গুণ, ৫.৫ গুণ, ২.২৭ গুণ এবং ১২.৯ গুণ নীচে রয়েছে।

বাজার এবং খামার হতে সংগৃহীত ব্রয়লার মুরগির খাদ্যে গড়ে ০.৮ পিপিবি অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, ১৯.২ পিপিবি ডক্সিসাইক্লিন, ৪.১৯ পিপিবি টাইলোসিন, ৭.৬ পিপিবি আর্সেনিক, ২১৫৩.৩ পিপিবি ক্রোমিয়াম এবং ৪৭৮.৬ পিপিবি লেড রয়েছে, যা আর্সেনিক এর ক্ষেত্রে ১৮৪.২ গুণ, ক্রোমিয়াম এর ক্ষেত্রে ৯.২ গুণ এবং লেড এর ক্ষেত্রে ২০.৮ গুণ সর্বোচ্চ অবশিষ্ট সীমার চেয়ে নীচে রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার তথ্য প্রকাশ করে কৃষিমন্ত্রী জানান, ব্রয়লার মুরগির মাংস নিরাপদ খাদ্য এবং এতে জনস্বাস্থ্যের জন্য কোনো ঝুঁকি নেই।

'বাংলাদেশে সবচেয়ে সস্তা ও সহজলভ্য আমিষের উৎস ব্রয়লার মুরগি। এই মাংসে অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে, যা শরীর গঠন, মেধা বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

মন্ত্রী বলেন, 'পত্রপত্রিকা ও সামাজিক গণমাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের কারণে জনগণের মধ্যে অনেক সময় ব্রয়লার মাংস সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ ব্রয়লার মাংস খাওয়া কমিয়ে দেয়। এতে ব্রয়লার শিল্পে বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এ ছাড়া মুরগির খাবারে বর্জ্য ব্যবহার করা হয় বলে যা ধারণা রয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।'

গবেষণার তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, 'গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অধীনে ব্রয়লার মুরগির মাংসের ওপর এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও বরিশালের ব্রয়লার খামার, বাজার ও সুপারশপ থেকে মাংস, হাড় ও কম্পোজিট এবং ব্রয়লার মুরগির খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি ঢাকা জেলার তিনটি সুপার শপ থেকে ব্রয়লার মুরগির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত প্রায় ১২০০টি ব্রয়লার মুরগি এবং ৩০টি ব্রয়লার মুরগির খাদ্য হতে ৩১৫টি নমুনা প্রস্তুত করে বহুল ব্যবহৃত ১০টি এন্টিবায়োটিক এবং ৩টি ভারি ধাতুর অবশিষ্টাংশের পরিমাণ পরীক্ষা করা হয়।'

কৃষিমন্ত্রী বলেন, 'দেশে ব্রয়লার মুরগি খুবই সম্ভাবনাময় একটি খাত। চাহিদা বৃদ্ধি করতে পারলে দেশে যে পরিমাণ খামার ও অবকাঠামো রয়েছে, তার পুরোপুরি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন আরও বহুগুণে বৃদ্ধি করা সম্ভব। সেজন্য, মানুষের কাছে মুরগির মাংস জনপ্রিয় করতে হবে। এটি করতে পারলে একদিকে আমিষের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে সুস্থ, সবল ও মেধাবী জাতি গঠন সহজতর হবে। অন্যদিকে, ব্রয়লার মুরগির বাজার দ্রম্নত বিকশিত হবে, মুরগির মাংস প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন বৃদ্ধি পাবে, কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা সম্ভব হবে।'

এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব নাহিদ রশীদ ও কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, প্রধান তথ্য অফিসার মো. শাহেনুর মিয়া এবং গবেষণা টিমের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে