শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
বিশ্ব ক্যানসার দিবস পালিত

ক্যানসার প্রতিরোধে কর্মকৌশল বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই

জাতীয় নীতিমালা নেই, চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও বিক্ষিপ্ত জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়নে গুরুত্বারোপ
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

দেশে প্রাণঘাতী রোগ ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও জাতীয় কোনো নীতিমালা হয়নি। ক্যানসার প্রতিরোধে ২০০৯ সালে জাতীয় কর্মকৌশল তৈরির ১৪ বছর অতিবাহিত হলেও বাস্তবায়নে নেই অগ্রগতি। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার প্রতিরোধ এখনো সম্ভব হয়নি। ক্যানসারের চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও বিক্ষিপ্ত। এমন প্রেক্ষাপটে শনিবার দেশব্যাপী পালিত হয়েছে বিশ্ব ক্যানসার দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য 'ক্লোজ দ্য কেয়ার গ্যাপ' অর্থাৎ 'ক্যানসার চিকিৎসায় ঘাটতি কমাই।'

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিস্নউএইচও) 'দ্য গেস্নাবাল ক্যানসার অবজারভেটরি ২০২০'-এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৫ লাখ ক্যানসার রোগী ছিল। প্রতি বছর দুই লাখ রোগী ক্যানসারে আক্রান্ত হয় এবং দেড় লাখ মারা যায়। ডবিস্নউএইচওর হিসাবে ২০৩০ সাল নাগাদ ক্যানসারে বিশ্বে প্রায় দুই কোটি ২০ লাখ মানুষের মৃতু্য হবে

এবং বাংলাদেশে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।

সংস্থাটির তথ্য মতে, বিশ্বে ক্রমেই বাড়ছে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা। বর্তমানে বিশ্বে মৃতু্যর দ্বিতীয় প্রধান রোগে পরিণত হয়েছে ক্যানসার। প্রতি বছর এতে মারা যায় প্রায় এক কোটি মানুষ। রোগীর সঙ্গে মৃতু্যর সংখ্যাও বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, 'ক্যানসার নীতিমালার পূর্বশর্ত হলো সর্বজনীন ক্যানসার রেজিস্ট্রি। এর মাধ্যমে ক্যানসার রোগীর প্রকৃত সংখ্যা ও রোগের ধরন জানা যায়, যাতে সঠিক পরিকল্পনা নেওয়া সহজ হবে। এ ছাড়া এতে ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যয় কমানো সম্ভব হবে।

কিন্তু আমাদের দেশে এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার প্রতিরোধ সম্ভব হয়নি। ২০০৯ সালে তৈরি করা ক্যানসারবিষয়ক কর্মকৌশল ২০১৪ সালে হালনাগাদ করার কথা ছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত আর কিছুই হয়নি। নীতিমালা নীতিমালার জায়গায় পড়ে আছে। যিনি যেভাবে পেরেছেন, যার যার মতো বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করেছেন।'

ক্যানসার প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চের (সিসিপিআর) উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. হাবিবুলস্নাহ তালুকদার রাসকিনের দেওয়া তথ্য অনুসারে, কর্মকৌশলের লক্ষ্য ছিল- ১. প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিরোধের মাধ্যমেই ক্যানসারের প্রকোপ হ্রাস। ২. মৃতু্যহার কমাতে কার্যকর স্ক্রিনিং এবং প্রাথমিক শনাক্তকরণ। ৩. কার্যকর চিকিৎসা নিশ্চিত করা। ৪. ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারকে সহায়তার মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন। ৫. পুনর্বাসন এবং উপশমকারী যত্ন। ৬. ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে পরিষেবা সরবরাহের উন্নতি। ৭. সম্পদ এবং কার্যকলাপের পরিকল্পনা, সমন্বয় এবং একীকরণ, পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়ন। ৮. গবেষণা ও নজরদারির মাধ্যমে ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ।

এদিকে, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, 'জাতীয় ক্যানসার নীতিমালা এখনো যুগোপযোগী করা হয়নি। তবে আমাদের প্রস্তাবে তা রয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে একাধিক সভাও হয়েছে। এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ সভা এখনো হচ্ছে না।'

জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, 'অসংক্রামক রোগের মধ্যে ক্যানসার ভয়ানকতম সমস্যা। তিনি আরও বলেন, 'নিম্নবিত্তদের মধ্যে যারা ক্যানসারে আক্রান্ত তারা ক্যানসারের অপারেশন করাতে পারে না, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি নিতে পারে না। কারণ এতে অনেক বেশি অর্থের প্রয়োজন হয়। এ জন্য আমাদের জাতীয় কর্মকৌশল দরকার। যাদের টাকা নেই, তারাও যেন সুচিকিৎসা পায়। কারণ এটি সংবিধান স্বীকৃত অধিকার।'

বে-নজির আহমেদ বলেন, 'জাতীয় পরিকল্পনা থাকলে সেখানে ক্যানসার প্রতিরোধ, আক্রান্তদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, তাদের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা, যন্ত্রগুলো ঠিক রাখাসব কিছু থাকত। এখন মানুষ স্বল্পমূল্যে যে চিকিৎসা পাওয়ার কথা, তা পাচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালগুলো চিকিৎসা দিলেও ব্যয় অনেক। এ থেকে উত্তরণের একটা বড় পথ হলো ক্যানসার রোগীদের বীমার ব্যবস্থা এবং কর্মকৌশল ঠিক করা।'

প্রতি বছর ৪ ফেব্রম্নয়ারি দিবসটি উদযাপনের উদ্দেশ্য হলো মারাত্মক ও প্রাণঘাতী এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের সাহায্য করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করা। প্রতি বছর বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে বিপুলসংখ্যক মানুষ এই মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারায়। একই সঙ্গে বাংলাদেশে ক্যানসার ও এ রোগে মৃতু্যর হার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সচেতনতা ও শিক্ষার অভাব এবং অর্থনৈতিক অবস্থাকে বিবেচনা করেন তারা।

চিকিৎসকরা মনে করেন, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ক্যানসারের রোগ তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে এবং সেক্ষেত্রে চিকিৎসা সহজ হয়। ক্যানসারের লক্ষণগুলো নির্ভর করে ক্যানসারটি কোথায়, এটি কতটা বড় এবং এটি কাছাকাছি কোনো অঙ্গ বা টিসু্যকে কতটা প্রভাবিত করে। ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

ঢামেকে সচেতনতার্ যালি

'দূর হোক ক্যানসার চিকিৎসার সকল অন্তরায়' প্রতিপাদ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সচেতনতামূলক এক র?্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে প্রশাসনিক বস্নক থেকে পায়রা উড়িয়ে একটি র?্যালি বের হয়ে বহির্বিভাগে এসে শেষ হয়।

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, 'প্রথমত আমি বলব সরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবচেয়ে আধুনিক রেডিওথেরাপি মেশিন রয়েছে। এখানে রোগীদের বিনা পয়সায় ছয়টি ওষুধ দেওয়া হয়; যার একেকটি ওষুধের মূল্য ৯ হাজার টাকা করে। এছাড়া সরকারের যে প্রোগ্রাম আছে ক্যানসার রোগীদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার, সেটির কাগজপত্রসহ আমরা রেডি করে দেই। আমরা বলতে পারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলোজি বিভাগ রোগীদের অন্য যে কোনো জায়গা থেকে ভালো চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে।'

তিনি আরও বলেন, 'ক্যানসার মূলত দুটি প্রক্রিয়ায় চিকিৎসা দেওয়া হয়। একটি হলো ক্যানসার শুরু হওয়ার আগে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং একটি ক্যানসার হওয়ার পরে ডায়াগনোসিসের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেওয়া। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যানসার চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত। প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার রোগী দেশের বাইরে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার জন্য চলে যান। আমরা তাদের বলব ঢাকা মেডিকেল কলেজে আসুন, এখানে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।'

এ সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো শফিকুল আলম চৌধুরী, রেডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আলীয়া শাহনাজসহ অন্য চিকিৎসক ও নার্সরা উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে