সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

ডাইনিংয়ে খাবারের দাম বাড়লেও মান বাড়েনি

আহসান হাবীব
  ১২ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ডাইনিংগুলোতে এক কেজি মুরগির মাংস করা হয় ২০ থেকে ২৫ টুকরো। আর মাছের ক্ষেত্রে যত ছোট পিস করা যায়। ভাতের সঙ্গে এক টুকরো মাছ বা মাংস নিলে- তাতেই বিল আসে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সঙ্গে ডাইনিংয়ে খাবারের দাম বাড়লেও বাড়েনি মান। বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান। সকালে ক্লাস না থাকলে ঘুম থেকে ওঠেন দেরি করে, যাতে সকাল ও দুপুরের খাবার একবারেই সেরে নেওয়া যায়। সকালে ক্লাস থাকলে ক্লাস শেষে দুপুর ১২টায় সকাল-দুপুরের খাবার একবারেই সেরে ফেলেন। শুধু মশিউর নয়, মশিউরের মতো অনেক শিক্ষার্থীরই রুটিন এটি। খাবারের ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে তারা এই রুটিন অনুসরণ করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির অভ্যন্তরে খাবারের দামের খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এক টুকরো মাছ বা মুরগির মাংস এবং একটি ভর্তা দিয়ে এক পেস্নট ভাত খেতে সর্বনিম্ন্ন খরচ হয় ৪৮ টাকা। একটি ডিম ও ভর্তা দিয়ে খেতে খরচ ৩৮ টাকা। আলাদা হিসাব করলে ভাতের দাম বর্তমানে ৮ টাকা (প্রতি পেস্নট), সবজির দাম ২০ টাকা, মাছ ৩০ টাকা, মুরগি ৩০ টাকা। যেখানে

২০২০ সালে প্রতি পেস্নট ভাত ছিল ৬ টাকা, ডিম ১৫ টাকা, প্রতি পিস মাংস ২৫ টাকা এবং প্রতি পিস মাছের দাম ছিল ২৫ টাকা। খাবারের দাম বাড়লেও বাড়েনি মান। খাবারের মান আগে যেমন ছিল এখনো তেমনই আছে বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। তবে দোলনচাঁপা হলে মাছ বা মাংস নিলে ভাত বিনামূল্যে পাওয়া যায়। সেদিক থেকে একটু হলেও স্বস্তিতে রয়েছেন এই হলের শিক্ষার্থীরা।

এদিকে ডাইনিংয়ের খাবার দিয়ে শিক্ষার্থীদের পুষ্টি চাহিদা না মিটলেও অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা এই খাবার খাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবেল হোসেন বলেন, 'এই খাবারে আমার দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণ না হলেও এটি খাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। মাসে ৪ হাজার টাকার মধ্যে আমার চলতে হয়। আমিষসমৃদ্ধ খাবার খেতে চাইলে এক বেলায় সর্বনিম্ন্ন ৭০ টাকা খরচ করতে হয়। যেটি বহন করা আমার পক্ষে অসম্ভব।'

পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতি ৩০ গ্রামের একটি রুটিতে থাকে ৮০ ক্যালরি, একটি ডিমে ৯০ ক্যালরি, ১০০ গ্রাম মিক্সড সবজিতে ৫০ ক্যালরি, ৬০ গ্রাম ভাতে ৭৫ থেকে ৮০ ক্যালরি, ৩০ গ্রাম মাছে ৪০ ক্যালরি, ৩০ গ্রাম মুরগিতে ৪০ থেকে ৬০ ক্যালরি, ৩০ গ্রাম ডালে ১০০ ক্যালরি।

গবেষণা বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের শিক্ষার্থীরা দৈনিক যে খাবার খান তাতে পুষ্টির পরিমাণ গড়ে ১ হাজার ৮২১ ক্যালরি। অথচ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর দিনে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ক্যালরি গ্রহণ করা উচিত।

একজন পূর্ণবয়স্ক শিক্ষার্থীর দৈনিক সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হয় সাধারণত ১ হাজার ৩০০ গ্রাম। হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হাসান মাহমুদ জানান, এই পরিমাণ খাদ্য খেতে হলে আমাদের দৈনিক সর্বনিম্ন্ন ২৫০ টাকা ব্যয় করতে হবে, যেটি হলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পক্ষে প্রায় অসম্ভব। জয়ন্ত সাহা নামের অপর শিক্ষার্থী জানান, আমরা যে ধরনের খাবারগুলো গ্রহণ করছি সেটি আমাদের শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এটি আমরা এখন বুঝতে না পারলেও বয়স কিছুটা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রভাব আমাদের শরীরের ওপর পড়বে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৪টি আবাসিক হলেই ডাইনিং চালু আছে। ডাইনিংয়ের পাশাপাশি রয়েছে একটি ক্যাফেটেরিয়া। ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের দাম আরও বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হল, দোলনচাঁপা হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল মিলিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থী প্রায় আড়াই হাজার। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মেসগুলোতে থাকেন অনেক শিক্ষার্থী। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া কিংবা হলের ডাইনিংয়ে খাবারের ওপর নির্ভরশীল।

ডাইনিং ও ক্যাফেটেরিয়া ঘুরে দেখা গেছে, ছোট এক টুকরো মাছ বা মাংসের সঙ্গে পাতলা ডাল দিয়ে খাবার গ্রহণ করছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। যে ভাত পরিবেশন করা হচ্ছে সেটিও মোটা চালের। ডালের যে পাত্র থাকে, তাতে ডালের পরিমাণ সামান্যই।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডাইনিং মালিক জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আমাদের কোনো ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে না। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার ফলে ডাইনিং চালাতে আমাদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রশাসন থেকে কিছু ভর্তুকি পেলে আমরা খাবারের মান কিছুটা উন্নত করতে পারতাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে খাবারে ভর্তুকির দাবি জানিয়ে বঙ্গমাতা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান বলেন, দেশে দ্রব্যমূল্য লাগামহীন গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আমাদের ডাইনিংয়ের খাবারের দামও বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ভর্তুকি দিয়ে খাবারের মান ঠিক রাখা। বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইমরান বলেন, আমার পরিবারের অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরায়। কিছুদিন আগেও তিন হাজার টাকায় মাস চলে যেত। আর এখন একবেলা না খেয়েও চার হাজারে মাস পার হচ্ছে না। এখন সকাল-দুপুর মিলিয়ে এক বেলা খাচ্ছি। তবুও টাকা বেশি লাগছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অগ্নিবীণা হলের প্রভোস্ট কল্যাণাংশু নাহা হলের খাবারের পুষ্টিমান ঠিক আছে দাবি করে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে খাদ্যের কোনো ভর্তুকি নেই। হলের দায়িত্ব হচ্ছে খাবারের ব্যবস্থা করা এবং দাম ঠিক রাখা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ডক্টর মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ডাইনিংয়ে ভর্তুকি নেই- কথাটি ঠিক না। বাবুর্চির বেতন, রান্নার আসবাবপত্র, পেস্নট, গস্নাস- এগুলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তরফ থেকে। যদি ভর্তুকি না থাকত তাহলে এই খাবার আরও বেশি দামে খেতে হতো। খাদ্যের পুষ্টিমান নিশ্চিতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডাইনিং ব্যবস্থাপনায় যারা আছেন তারা এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে