সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

আট উন্নয়নে বৈদেশিক ঋণ ৮ হাজার ৯১২ কোটি টাকা

একনেকে অনুমোদন
যাযাদি ডেস্ক
  ১৩ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আটটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ থেকে ব্যয় মেটানো হবে আট হাজার ৯১২ কোটি টাকা। যেখানে একটি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ঋণ হিসেবে দেবে চার হাজার ২৭৫ কোটি টাকা।

রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা শেষে প্রকল্পগুলোর সার্বিক বিষয় উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ডক্টর শামসুল আলম।

একনেকে অনুমোদনের জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের আটটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়। এতে ব্যয় হবে ১৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। যার বেশিরভাগ বৈদেশিক অর্থায়ন।

একনেকে উপস্থাপন করা প্রকল্পগুলোর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের তিনটি, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি, বিদু্যৎ বিভাগের একটি, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের একটি, পরিকল্পনা বিভাগের একটি এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের একটি রয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের 'রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফর অ্যাডাপশন অ্যান্ড ভালনারাবিলিটি রিডাকসন প্রজেক্ট (রিভার)' শীর্ষক প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৩২৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। সরকারি এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। সরকারি খাতে ৪৮ কোটি ৪৭ লাখ এবং বিশ্বব্যাংক দেবে চার হাজার ২৭৫ কোটি টাকা।

প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে চলতি বছরে শুরু হয়ে ২০২৮ সালের জুনে কাজ শেষ হবে। প্রকল্পের উদ্দেশে বলা হয়েছে, নদীতীর বাসী ও আকস্মিক বন্যাকবলিত এলাকার জনগোষ্ঠীর বন্যার ঝুঁকি কমানো এবং দুর্যোগ প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদানে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। চারটি বিভাগের ১৪টি জেলার ৭৮টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

প্রকল্পের আওতায় ৫০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ১০০টি সৌর শক্তিচালিত ক্ষুদ্রাকার গ্রিড স্থাপন, ২৫০টি মাঠ উঁচুকরণ, ২৭৫ কিলোমিটার বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র সংযোগ সড়ক উন্নয়ন, ৫০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণ, এক হাজার ৩৩০ মিটার কালভার্ট নির্মাণ, ৬ হাজার ৬০০টি সৌরবাতি স্থাপন, এক হাজার ৪০০টি বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র স্থাপন, ১৫টি ল্যান্ডিং স্টেজ এবং ১১০ কিলোমিটার কমিউনিটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার সংযোগ সড়ক উন্নয়ন করা হবে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অধিকতর বন্যা ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে অধিক সহনশীল ও টেকসই অবকাঠামো নির্মাণের

মাধ্যমে দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যাবে। তাছাড়া অবকাঠামো নির্মাণকাজে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

দক্ষিণ চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে একটি প্রকল্প নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়ন শীর্ষক এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৭২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। যার বেশিরভাগ বৈদেশিক ঋণ। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা এই প্রকল্পে ঋণ দেবে দুই হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। বাকিটা বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন।

এ প্রকল্পের উদ্দেশে বলা হয়েছে, অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বৈষম্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা। তবে এ প্রকল্পের বিভিন্ন নির্মাণ খাতে অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। টয়লেট নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে অন্যান্য সংস্থার তুলনায় অতিরিক্ত খরচ ধরা হয়েছে প্রকল্পটিতে।

এলজিইডির প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এ প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ করে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন সড়ক অবকাঠামো এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার মানোন্নয়ন করা হবে।

এ ছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের 'ময়মনসিংহ জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন' শীর্ষক আরও একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প পুরোটাই সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন হবে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছর থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহ জেলার গ্রামীণ জনগণের জন্য গ্রাম, বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে যাতায়তের সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করা হবে।

বিদু্যৎ বিভাগের চার হাজার ৩২২ কোটি টাকা ব্যয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ট্রান্সমিশন গ্রিড সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয় একনেক বৈঠকে। এ প্রকল্পে ব্যয়ের অধিকাংশ ঋণ হিসেবে দেবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড।

এ ছাড়া কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের ১২৮ কোটি টাকা ব্যয়ের 'প্রমোটিং জেন্ডার রেসপনসিভ এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড টিভিইটি সিস্টেম' শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

এদিন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের এক হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কাস্টমস আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, পরিকল্পনা বিভাগের ৩২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন ও নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

'ফেব্রম্নয়ারিতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮.৭৮ শতাংশ'

এদিকে, একনেক সভা শেষে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ডক্টর শামসুল আলম সাংবাদিকদের জানান, ফেব্রম্নয়ারিতে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বাংলাদেশে চলতি বছরের ফেব্রম্নয়ারিতে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মুদ্রাস্ফীতির হার শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশে পৌঁছেছে। তবে এখন মূল্যস্ফীতির যেই বাজার আছে, সেখানে চাহিদা বৃদ্ধি ও উৎপাদন খরচ বাড়ায় মূল্যস্ফীতির ফেব্রম্নয়ারিতে কিছুটা বেড়েছে।

প্রতিমন্ত্রী জানান, খাদ্য খাতে ফেব্রম্নয়ারিতে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা জানুয়ারি মাসে ছিল ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ ছাড়া ফেব্রম্নয়ারি মাসে খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ, যা জানুয়ারিতে ছিল ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। উৎপাদন খরচ বাড়ায় মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে বলে জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির যেই বাজার আছে, সেখানে চাহিদা বৃদ্ধি ও উৎপাদন খরচ তাড়িত মূল্যস্ফীতির কারণেই ফেব্রম্নয়ারিতে কিছুটা বেড়েছে। এখন উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। আগে যেই ফিড কেনা হতো ২৮ টাকায়, এখন সেটা কেনা হচ্ছে ৭০ টাকায়। কৃষি খাতের জিনিসপত্রের দাম সেভাবে না বাড়লেও পোলট্রি ও মাছের ফিডের দাম বেড়েছে। এটা নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লাগবে। এসব জিনিসের দাম একবার বেড়ে গেলে কমতে সময় লাগে বলে জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে