সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁধ ভেঙে পস্নাবিত ফেনী ও কুড়িগ্রামের ২৫ গ্রাম

যাযাদি ডেস্ক
  ২৩ জুন ২০২৩, ০০:০০
পানিবন্দি হাজার হাজার পরিবার

টানা বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কুড়িগ্রাম ও ফেনী জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ২৫ গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। এতে দুই জেলার হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের তেলিয়ানী এলাকায় বাঁধ ভেঙে বুধবার দুধকুমার নদীর পানি তীরবর্তী ১০ গ্রামে ঢুকে পড়ে। এদিকে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় নদীরক্ষা বাঁধের চার স্থান ভেঙে পস্নাবিত হয়েছে ১৫ গ্রাম। ফেনীর কহুয়া ও মহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর, পাঁচগাছীয়া, মোগলবাসা, ঘোগাদহ ও ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চর ও নিম্নাঞ্চলের প্রায় সাত হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার এক হাজার পাঁচটি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। ওই ইউনিয়নের মুসার চর, পূর্ববালাডোবার চর, ফকিরের চর, পোড়ার চরসহ কয়েকটি চরের ঘরবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এসব চরে বসবাসকারী পরিবারগুলো পড়েছে চরম দুর্ভোগে। অনেকেই দিনের বেলা ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু জায়গায় অবস্থান করলেও বেশ কিছু পরিবারের দিন কাটছে নৌকায়। তবে এই পরিবারগুলো রাতের বেলা নিজ ঘরের উঁচু মাচানে অবস্থান করছেন। বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ

খাবার পানি ও শুকনো খাবারের প্রয়োজনীতা দেখা দিয়েছে।

পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আরও নতুন নতুন চর পস্নাবিত হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে পানিবন্দি পরিবারগুলোর শুকনো খাবারের প্রয়োজনের কথা জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের সিতাই ঝাড় এলাকার ইসমাইল হোসেন বলেন, 'বাড়ির চারদিকে পানি, বাড়ি থেকে বাইরে বের হতে পারছি না। যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, ২-১ দিনের মধ্যে ঘরের ভেতর পানি চলে আসবে। বর্তমানে বড় সমস্যা হচ্ছে গরু-ছাগলদের নিয়ে। তাদের খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।'

সদরের পাঁচগাছী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, 'আমার ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ডের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আনুমানিক তিন হাজার পরিবার হবে। বর্তমানে তাদের সমস্যা হচ্ছে- যোগাযোগ। এ ছাড়া তাদের গৃহপালিত গবাদিপশুর নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন তারা।'

যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, 'আমার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে প্রায় তিন হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। তাদের বাড়ির চারদিকে পানি, ঠিকমত বের হতে পারছে না। বর্তমানে তাদের সমস্যা হচ্ছে চলাচল ও গবাদিপশু নিয়ে।'

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশিদুল হাসান বলেন, 'কোনো চেয়ারম্যান এখনো আমাকে তালিকা দেননি। তবে পানিবন্দির পরিসংখ্যান এত হতে পারে না। এরপরও আমরা প্রস্তুত আছি, যে কোনো প্রয়োজনে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।'

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুলস্নাহ আল মামুন জানান, 'আগামী ২৪ জুন পর্যন্ত প্রধান নদ-নদীগুলোর পনি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি বন্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই।'

ইতোমধ্যে তেলিয়ানী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

স্থানীয়রা জানান, বাঁধ ভাঙায় বামনডাঙ্গা, তেলিয়ানী, মালিয়ানী, বড়মানি, ধনিটারী, অন্তাইপাড়, সেনপাড়া, পাটেশ্বরী, বোয়ালেরডারা ও পূর্ব সানজুয়ারভিটা এলাকা পস্নাবিত হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরের মাছ। এসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। লোকজনকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'বাঁধ ভেঙে নদীর পানি লোকালয়ে ঢোকার পর বালুভর্তি জিও ব্যাগ, জিও টিউব, বোল্ডার ফেলে পানির গতিরোধ করার চেষ্টা চলছে।'

এদিকে টানা ভারিবর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় নদীরক্ষা বাঁধের চার স্থান ভেঙে ১৫ গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে।

ঘনিয়ামোড়া এলাকার বাসিন্দা জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজি জামাল উদ্দিন বলেন, 'বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে নদীর ভাঙন দেখা দিতে পারে। তাই সতর্কতামূলক পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া অনেক জরুরি।

ফুলগাজী সদর ইউপি চেয়ারম্যান ফুলগাজী বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি মো. সেলিম বলেন, 'ফুলগাজীতে নিলামের মাধ্যমে নদীর বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে নদীর পলি মাটি সরে গিয়ে যে কোনো স্থানে ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া নদীর সরু পথ প্রশস্ত না করা ও বাঁশঝাড় না কাটলে নদী গতিপথ পরিবর্তন করলে ভাঙন রোধ অসম্ভব হয়ে পড়বে।'

জেলা পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফুলগাজী সদর এবং দরবারপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর ও উত্তর বরইয়া এলাকায় নদীর বাঁধ ভেঙে জনপদে পানি প্রবেশ করছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে একটা হটলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে ওই নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আকতার হোসেন জানান, মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীরক্ষা বাঁধের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১২২ কিলোমিটার এলাকায় পানির চাপ এখনো বাড়ছে।

পরশুরাম-ফুলগাজী-ছাগলনাইয়া উপজেলা নিয়ে ফেনী-১ সংসদীয় এলাকা গঠিত। প্রায় তিন লাখের বেশি মানুষের বাস এই জনপদে। বাংলাদেশ-ভারতের অভিন্ন মুহুরী নদী প্রবাহিত হয়েছে এই তিন উপজেলার বুকচিরে।

স্থানীয়রা জানান, নদীতে চর পড়ে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। মুহুরী নদী শাসন, অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে নদীর গতিপথ পরিবর্তন বন্ধসহ সিলোনীয়া, কহুয়া ও গথিয়া নদী ও খালের প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুনঃখনন এখন সময়ের দাবি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে