সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
এক লাখ হাজার টনের বেশি কয়লা নিয়ে পায়রা ও মাতারবাড়ী বন্দরে পৌঁছেছে দু'টি জাহাজ

কাল থেকে উৎপাদনে যাচ্ছে পায়রা তাপবিদু্যৎ কেন্দ্র

যাযাদি ডেস্ক
  ২৪ জুন ২০২৩, ০০:০০
৪১ হাজার ২০৭ টন কয়লা নিয়ে পায়রা বন্দরে ভিড়ল 'এমভি এ্যাথেনা' নামের একটি জাহাজ। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে জাহাজটি বন্দরের ইনার অ্যাঙ্করে নোঙর করে -ফোকাস বাংলা

জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের বৃহত্তম পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রটি আগামীকাল রোববার ফের উৎপাদনে যাচ্ছে। তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা নিয়ে ইতোমধ্যে পায়রা বন্দরে নোঙর করেছে মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আথেনা। জাহাজটি ইন্দোনেশিয়া থেকে ৪১ হাজার ২০৭ টন কয়লা নিয়ে এসেছে। এখন বন্দর থেকে কয়লা খালাস করে বিদু্যৎকেন্দ্রে পৌঁছানো এবং জ্বালানি লোড করে বিদু্যৎ উৎপাদন শুরু করতে ৪৮-৭২ ঘণ্টা সময় লাগবে। সে হিসাবে আগামী ২৫ জুন থেকেই কেন্দ্রটি থেকে বিদু্যৎ উৎপাদন শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদু্যৎকেন্দ্রের জন্য প্রায় ৬৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে বন্দরে ভিড়েছে আরেকটি কয়লাবাহী বিশাল জাহাজ। শুক্রবার বেলা ১১টায় পানামা পতাকাবাহী 'নাবিওস অ্যাম্বার' জাহাজটি কয়লা বিদু্যৎসংলগ্ন মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রের কৃত্রিম জেটিতে পৌঁছেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাতারবাড়ী কয়লা বিদু্যৎ প্রকল্পের সিকিউরিটি অফিসার আলফাজ আহমেদ। এ নিয়ে গত দুই মাসে এলো তিন লাখ টনের বেশি কয়লা।

শুক্রবার পায়রা তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহ আব্দুল হাসিব সংবাদমাধ্যমে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৩টা থেকে জাহাজটি ৪১ হাজার

২০৭ টন কয়লা নিয়ে পায়রা বন্দরের ইনার চ্যানেলে অবস্থান করছে। এ কয়লা খালাস করতে আরও ২-৩ দিনের মতো সময় লাগবে।

সূত্র জানায়, ইন্দোনেশিয়া থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ১৭টি জাহাজ প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে আসবে। এর মধ্যে প্রায় ৩৬ হাজার টনের প্রথম চালান বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সমুদ্র অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। ডলার সংকটে কয়লা আমদানি ব্যাহত হওয়ায় গত ২৫ মে পায়রা বিদু্যৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট এবং ৫ জুন দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদু্যৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতার বিচারেও দেশের অন্যতম সফল বিদু্যৎকেন্দ্র পায়রা। গড়ে দেশের দৈনিক মোট চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ বিদু্যৎ জোগান দেয় কেন্দ্রটি।

তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য অনেকটা বেড়ে যায়, বাংলাদেশ তখন উচ্চমূল্যের জ্বালানি আমদানি কমিয়ে দেয়। এর প্রভাবে দেশে বিদু্যৎ উৎপাদনে সংকট তৈরি হয়। বিদু্যতের এই ঘাটতি পূরণে পিডিবি তখন পায়রার সাশ্রয়ী বিদু্যতের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল ছিল। কারণ এটি একমাত্র বিদু্যৎকেন্দ্র যা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে পুরোমাত্রায় এমনকি সক্ষমতার অতিরিক্ত বিদু্যৎ সরবরাহ করে যাচ্ছিল।

বিদু্যৎকেন্দ্রটির মালিকানায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডবিস্নউপিজিসিএল) এবং চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান ৫০ শতাংশ করে অংশীদারত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) বিদু্যৎকেন্দ্রটি পরিচালনা করে। ডলার সংকটের কারণে আমদানি করা কয়লার প্রায় ৩৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বকেয়া জমে যাওয়ায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ইন্দোনেশিয়ার কোম্পানি। ওই কোম্পানিকে কয়লার দাম পরিশোধ করে সিএমসি।

চুক্তি অনুযায়ী, সিএমসি কয়লা ক্রয়ের ৬ মাস পরে বাংলাদেশ অর্থ পরিশোধ করতে পারে। তবে ৬ মাস পার হয়ে গেলেও ডলার সংকটে বকেয়া পরিশোধ করতে পারেনি পায়রা কর্তৃপক্ষ। বড় অঙ্কের বকেয়া হওয়ায় চীনের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কয়লা ক্রয়ে নতুন করে এলসি খুলতে সিএমসিকে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এ কারণে কয়লা আমদানিতে জটিলতায় পড়ে বিসিপিসিএল। সরকার দ্রম্নততার সঙ্গে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার বিল পরিশোধ করে পুনরায় কয়লা আমদানি শুরু করে।

পিডিবির একটি সূত্রে জানা যায়, আগামী ২৫ জুন পায়রা বিদু্যৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি চালু হওয়ার পর এটি থেকে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৫২৯ মেগাওয়াট বিদু্যৎ যুক্ত হবে। কারিগরি কারণে প্রথম ইউনিট থেকে বিদু্যৎ উৎপাদন শুরুর ৭ দিন পর আগামী ২ জুলাই কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটটি চালু হবে। ওইদিন থেকে ৭৪৬ মেগাওয়াট বিদু্যৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।

বিদু্যৎকেন্দ্রটির একটি ইউনিট পূর্ণ সক্ষমতায় চালাতে দৈনিক প্রায় ৬ হাজার টন কয়লা লাগে। আর দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে লাগে আরও ৬ হাজার টন। তবে পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন কমবেশি হয়। চাহিদা বেশি থাকলে পূর্ণ সক্ষমতায় বিদু্যৎ উৎপাদন করে পায়রা।

বিদু্যৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই পর্যন্ত ১৩টি শিপমেন্টে যে পরিমাণ কয়লা আসবে তা দিয়ে ৩১ জুলাই পর্যন্ত পায়রার দু'টি ইউনিট থেকে বিদু্যৎ উৎপাদন করার পরও ২ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা মজুত থাকবে। এরপর ৯ আগস্ট পর্যন্ত আসবে আরও ৪টি শিপমেন্ট।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে