সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

সিগারেটের ফিল্টারের সূত্র ধরে হত্যার রহস্য উদঘাটন

বিদেশ যাওয়ার টাকা জোগাড় করতেই এ হত্যাকান্ড
যাযাদি রিপোর্ট
  ২৬ জুন ২০২৩, ০০:০০

সিগারেটের ফেলা দেওয়া ফিল্টারের সূত্র ধরে ঢাকার আশুলিয়ায় বিমল চন্দ্র মন্ডল হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তার হয়েছে একমাত্র হত্যাকারী মোহাম্মদ হাফেজ। গ্রেপ্তার আসামি আদালতে বিচারকের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে।

রোববার ধানমন্ডি পিবিআই সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানালেন পিবিআইয়ের ঢাকা জেলার বিশেষ পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা। তিনি আরও জানান, চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন জামগড়া এলাকার মনির মার্কেট সংলগ্ন আবুল হোসেন ভূইয়ার ভাড়া বাসা থেকে বিমল চন্দ্র মন্ডল (৫৫) নামে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পরদিন ১৭ এপ্রিল নিহতের স্ত্রী পারুল বিশ্বাস আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

পুলিশ সুপার জানান, গত ৪ জুন পর্যন্ত মামলাটি থানা পুলিশ তদন্ত করে। কূলকিনারা করতে না পারায় পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। কিন্তু মামলার

তদন্তে কাপড় কাটার কাঁচি ছাড়া হত্যাকারী সম্পর্কে তেমন কোনো আলামত মিল ছিল না। পিবিআই প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার ঘটনাস্থল ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে আরও আলামত সংগ্রহের নির্দেশ দেন। ঘটনাস্থল তলস্নাশিকালে ঘরের কোণায় দুটি ডার্বি সিগারেটের ফিল্টার বা অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়। পিবিআই প্রধান বিমল ধূমপান করতেন কিনা তা নিশ্চিত হতে বলেন। বিমল ধূমপায়ী নন, জানার পর তিনি বিমলের পরিচিত ধূমপায়ীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও নজরদারি করার নির্দেশনা দেন।

পুলিশ সুপার বলেন, তদন্তের ধারাবাহিকতায় জানা যায়, পারুলের পিতার নাম নিরাপদ বিশ্বাস। মায়ের নাম দেবরানী বিশ্বাস। জীবিকার তাগিদে পরিবারটি দুই কন্যাকে নিয়ে ওই ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন। বিমলের স্ত্রী একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। বিমল শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। ৬ মাস আগে তার স্ট্রোক হয়েছিল। স্ট্রোক হওয়ার পর তিনি ধুমপান ছেড়ে দেন। এবার তদন্তের মোড় ঘুরে যায়। ঘটনাস্থলে পাওয়া ডার্বি সিগারেট কে পান করেছেন, সে বিষয়ে তদন্ত আর অনুসন্ধান শুরু হয়। এক পর্যায়ে বিমলের পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ হাফেজ ধুমপায়ী বলে জানা যায়। তিনি ডার্বি সিগারেটের ভক্ত। এই ব্র্যান্ডের সিগারেট পান করতেই হাফেজ অভ্যস্ত। শুরু হয় হাফেজের উপর নজরদারি।

গত ২২ জুন রাতে হাফেজকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে আশুলিয়া থানাধীন জিরানী বাজার থেকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বেরিয়ে আসে বিমল হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য। হাফেজ বিমল হত্যার দায় স্বীকার করে। পরে হাফেজ আদালতে বিচারকের কাছে বিমল হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দি মোতাবেক, ঘটনার দিন অর্থাৎ ১৬ এপ্রিল বিমলের স্ত্রী ও কন্যা কর্মস্থলে চলে যায়। বিমল একাই বাসায় ছিলেন। অফিস শেষে বিমলের মেয়ে পুর্ণিমা রানী মন্ডল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বাসায় ফিরে পিতাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরে পড়ে থাকতে দেখেন। তার মুখে তাদের বাসার কাপড় কাটার বড় কাঁচি ঢুকানো। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।

জবানবন্দির ভাষ্য অনুযায়ী, হাফেজের পিতার নাম মৃত ছাত্তার মন্ডল। বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর থানাধীন দড়িসাড়া গ্রামে। তিনি আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার মনির মার্কেট সংলগ্ন ইউনুছ হাজীর বাড়ির ভাড়াটিয়া। হাফেজ ও বিমলের স্ত্রী একই গার্মেন্টসে চাকরি করেন। সেই সুবাদে হাফেজের সঙ্গে বিমলের সখ্য। পাশাপাশি বসবাসের সুবাদে তাদের ঘনিষ্ঠতা ও নিবিড় পারিবারিক যোগাযোগ ছিল।

ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হাফেজ বিমলের বাসায় যান। বাসায় একাই ছিলেন বিমল। বাসায় বসে তারা গল্প করেন। খাওয়া দাওয়া করেন। খাওয়ার পর হাফেজ বিমলকে দুটি ডার্বি সিগারেট কিনে আনতে টাকা দিয়ে নিচে পাঠান। বিমল সিগারেট আনতে যান। বাসায় ফিরে দেখেন ঘরের জিনিসপত্র সব এলোমেলো। বিমলের স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা বের করেছে হাফেজ। বিমল হাফেজের চুরি করার বিষয়টি বুঝতে পারেন। এ নিয়ে বিমলের সঙ্গে হাফেজের বাকবিতন্ডা হয়। এ সময় হাফেজ বাসায় থাকা কাপড় কাঁটার বড় কাঁচি দিয়ে বিমলের গলার ডান পাশে ঢুকিয়ে দেয়। বিমল পড়ে গেলে হাফেজ মুখে কাঁচি ঢুকিয়ে দিয়ে বিমলকে হত্যা করে। এরপর বিমলের বাসা থেকে একজোড়া স্বর্ণ দিয়ে বাঁধানো শাখা বালা, দুই জোড়া কানের দুল, দুই জোড়া চুড়ি ও নগদ সাড়ে ৯ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।

পুলিশ সুপার আরও জানান, হাফেজ মূলত বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকা জোগাড় করতেই বিমলের বাসায় চুরি করতে গিয়েছিল। কিন্তু বিমল ঘটনাটি দেখে ফেলায় হাফেজ তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ঢাকা জেলার এসআই মো. আনোয়ার হোসেন জানান, বিমল হত্যায় আর কারও জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ আপাতত পাওয়া যায়নি।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই সদর দপ্তরের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আবু ইউসুফসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে