সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুই বছরে মামলা নিষ্পত্তি বৃদ্ধির হার আশাব্যঞ্জক

যাযাদি ডেস্ক
  ২৭ জুন ২০২৩, ০০:০০

প্রতি বছরই পালস্না দিয়ে বাড়ছে মামলা দায়েরের সংখ্যা। দেশের উচ্চ ও অধস্তন আদালতগুলো দীর্ঘদিন ধরে মামলার ভারে ভারাক্রান্ত। আইনজ্ঞরা মনে করেন, বিভিন্ন আইনে আপসযোগ্য মামলায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা যেমন মধ্যস্থতা, সালিশ ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পক্ষগণের বিরোধ নিষ্পত্তি করে মামলার প্রবণতা থেকে মানুষকে সুবিধা দিতে পারলে লাখ লাখ মামলাই আর আদালতে আসবে না। তবে গত বছর ও চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত মামলা দায়েরের তুলনায় নিষ্পত্তির হার বেড়েছে।

আর এই নিষ্পত্তির হার সারা দেশের বিচারিক আদালতের পাশাপাশি হাইকোর্টেও বেড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে চলতি বছরের ১ম কোয়ার্টার অর্থাৎ মার্চ পর্যন্ত ৩০ জেলা জজ কোর্টে দায়েরের তুলনায় মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়েছে। গেল বছর ২০২২ সালে ২৪ জেলায় মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়েছে।

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মামলা নিষ্পত্তিতে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর অধস্তন আদালত মনিটরিংয়ের জন্য প্রতিটি বিভাগের জন্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে দেন। মনিটরিং কমিটি অধস্তন আদালতগুলোতে সফর করে বিচারিক কার্যক্রম তরান্বিত করার উদ্যোগ নেন। ফলে অধস্তন আদালতে মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, মামলা দায়েরের তুলনায় নিষ্পত্তির হার আশাব্যঞ্জক হারে বাড়ছে। গত কয়েক বছর ধরেই ক্রমান্বয়ে মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়ে চলেছে। বছর শেষে এ বছরও আশাব্যঞ্জক মামলা নিষ্পত্তি হবে বলে তিনি মনে করেন।

আদালত সূত্র জানায়, চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ৩০ জেলা জজ কোর্টে দায়েরকৃত মামলার চেয়ে বেশিসংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। সেসব জেলা কোর্টগুলো হলো- গাজীপুরে ১৬২.৬১ ভাগ, পাবনায় ১৩৬.৪৩ ভাগ, মাদারীপুরে ১২৮.৯৪, ময়মনসিংহে ১২৮.২৬ ভাগ, নেত্রকোনায় ১২৭.০০ ভাগ, সিলেটে ১২৪.৯০ ভাগ, দিনাজপুরে ১২৪.৫৩ ভাগ, সাতক্ষীরায় ১২৪.৪৮ ভাগ, বগুড়ায় ১১৮.৬৪ ভাগ, জামালপুরে ১১৮.৩৩ ভাগ, মানিকগঞ্জে ১১৭.২৯ ভাগ, রংপুরে ১১৭.০৬ ভাগ, কিশোরগঞ্জে ১১৫.১৭ ভাগ, চাঁদপুরে ১১৫.০৮ ভাগ, নড়াইলে ১১২.৯৬ ভাগ, ঢাকায় ১১২.২২ ভাগ, শরীয়তপুরে ১১১.০০ ভাগ, শেরপুরে ১০৯.৩০ ভাগ, সিরাজগঞ্জে ১০৬.৭২ ভাগ, নাটোরে ১০৪.৪৫ ভাগ, হবিগঞ্জে ১০৩.৩১ ভাগ, নওগাঁয় ১০৩.১১ ভাগ, গোপালগঞ্জে ১০৩.০৬ ভাগ, রাজবাড়ীতে ১০২.৫৭ ভাগ, কুষ্টিয়ায় ১০২.৪৬ ভাগ, বরগুনায় ১০২.২৩ ভাগ, বাগেরহাটে ১০২.২৩ ভাগ, রাঙ্গামাটিতে ১০১.৫৬ ভাগ, বরিশালে ১০১.৩৬ ভাগ এবং মৌলভীবাজারে ১০১.২৫ ভাগ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।

অপর এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, গত বছর মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়ছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা ৯১ হাজার ৪৯৮। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৭ হাজার ৪৭৪টি মামলা। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ লাখ ১৬ হাজার ৬৭৪টি। গত এক বছরে হাইকোর্ট বিভাগে মামলা দায়েরের তুলনায় নিষ্পত্তির হার ছিল ৯৫.৬০ ভাগ।

একইভাবে অধস্তন আদালতগুলোতেও মামলা নিষ্পত্তি বেড়েছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশের অধস্তন আদালতগুলোতে মামলা হয়েছে মোট ১৪ লাখ ৭০ হাজার ৯৫৭টি। এর মধ্যে দেওয়ানি মোকদ্দমার সংখ্যা ৩ লাখ ৬২ হাজার ৩০৬টি এবং ফৌজদারি মামলার সংখ্যা ১১ লাখ ৮ হাজার ৬৫১। ২০২২ সালে দেশের অধস্তন আদালতগুলোতে মামলা নিষ্পত্তির পরিমাণ আশাব্যঞ্জক হারে বেড়েছে বলে উলেস্নখ করা হয়।

২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অধস্তন আদালতের বিচারক ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা সর্বমোট ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ৫২২টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। এর মধ্যে নিষ্পত্তিকৃত দেওয়ানি মোকদ্দমার সংখ্যা ৩ লাখ ৩২ হাজার ৮২৩টি এবং নিষ্পত্তিকৃত ফৌজদারি মামলার সংখ্যা ১০ লাখ ৪৮ হাজার ৬৯৯টি। এ বছর অধস্তন আদালতে নতুন দায়েরকৃত মামলার সংখ্যার তুলনায় নিষ্পত্তির হার ৯৩.৭২ ভাগ। দেওয়ানি মোকদ্দমার ক্ষেত্রে নিষ্পত্তির এই হার ৯১.৮৬ ভাগ এবং ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে এই হার ৯৪.৩২ ভাগ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে