সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ড্রোন দিয়ে জাতীয় ঈদগাসহ আশপাশে নজরদারি

প্রবেশ পথে বসানো হচ্ছে আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর মাঠের চারপাশের উঁচু ভবনের ছাদে বসানো হচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার হ ডগ স্কোয়াড ও বম্ব ডিসপোজাল টিমের মাধ্যমে দফায় দফায় তলস্নাশি চালানো হচ্ছে
যাযাদি রিপোর্ট
  ২৮ জুন ২০২৩, ০০:০০
আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আজহা। মঙ্গলবার জাতীয় ঈদগাহ মাঠের প্রস্তুতি দেখতে যান ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস -ফোকাস বাংলা

মুসলিম উম্মাহ সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হবে। এ উপলক্ষে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত জাতীয় ঈদগা মাঠ সেজেছে নতুন সাজে। প্রথম নামাজের জামাত সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে। মাঠটিতে প্রায় ৪০ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলিস্ন পবিত্র ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন। ঈদগা মাঠসহ সারা দেশেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ঢাকার গুরত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকছে বিশেষ নিরাপত্তা

বলয়ের মধ্যে। পুরো এলাকাজুড়ে বসানো হয়েছে অসংখ্য সিসি ক্যামেরা। পুলিশ ওর্ যাবের পক্ষ থেকে পৃথক কন্ট্রোল স্থাপন করে তা মনিটরিং করা হচ্ছে। নামাজ শুরুর আগেই কয়েক দফায় পুরো মাঠ ডগ স্কোয়াড ও বম্ব ডিসপোজাল টিম দিয়ে তলস্নাশি করা হবে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, মাঠের চার দিকের উঁচু ভবনগুলোর ছাদে বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। সেখান থেকে শক্তিশালী বাইনু্যকুলার দিয়ে পুরো এলাকার ওপর নজর রাখা হচ্ছে। এবার ওয়াচ টাওয়ারের দায়িত্ব পালন করছেন অত্যাধুনিক স্নাইপার রাইফেল চালনায় পারদর্শীরা। ওইসব রাইফেল দিয়ে অন্তত এক থেকে দুই কিলোমিটার দূরের লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত হানা সম্ভব। বাড়তি সর্তককর্তা হিসেবে ভিভিআইপি, ভিআইপি ও সাধারণ মুসলিস্নদের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।

সূত্রটি বলছে, মাঠে প্রবেশের জন্য দু'টি প্রবেশ পথ রাখা হচ্ছে। যার একটি প্রবেশ পথ হাইকোর্টের সামনে। অপরটি হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত মাজারের দিকে। প্রবেশ পথে বসানো হচ্ছে আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর। এছাড়া হ্যান্ড মেন্টাল ডিটেক্টর দিয়ে সন্দেহভাজনদের দেহ তলস্নাশি করা হবে। এসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া বৈধ অস্ত্র বহন করাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বুধবার মধ্যরাত থেকে মাঠের চারদিকের রাস্তায় যানবাহন চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। আশপাশের সব আবাসিক হোটেল, মেস ও প্রয়োজনে বাসাবাড়িতে তলস্নাশি চালানো হচ্ছে। হোটেলগুলোর রেজিস্টার চেক করা হচ্ছে। হোটেলে আগতদের যাবতীয় তথ্য সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। বুধবার মধ্যরাতে ও বৃহস্পতিবার ভোরে পুরো মাঠ ডগ স্কোয়াড ও বম্ব ডিসপোজাল টিম দিয়ে তলস্নাশি করা হবে।

র্

যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন যায়যায়দিনকে বলেন, এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিশেষ করের্ যাব ঈদগা মাঠসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও হেলিকপ্টার প্রস্তুত রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রয়োজনে হেলিকপ্টার দিয়ে টহল দেওয়া হবে।

সূত্রটি বলছে, জাতীয় ঈদগা মাঠে ঈদের নামাজের জামাতে অংশ নিচ্ছেন নবনিযুক্ত রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধান বিচারপতি, বিচারক, বিদেশি কূটনৈতিক, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিশিষ্ট নাগরিকসহ সর্বস্তরের মুসলিস্নরা। যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় মাঠের বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যকে সশস্ত্র অবস্থায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন রাখা হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে ঢাকাবাসীর সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ঈদগা মাঠসহ আশপাশের এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া এবং কোরবানির কারণে এবার জাতীয় ঈদগা মাঠে প্রথম নামাজের জামাত সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

আজ বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম,র্ যাব মহাপরিদর্শক এম খুরশীদ হোসেনসহ পুলিশ ওর্ যাবের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা জাতীয় ঈদগা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন।

এছাড়া ঈদ উপলক্ষে হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করে সদরঘাট, মাওয়া, পোস্তগোলা, মেঘনা ব্রিজ, গাবতলী, আরিচাঘাট, চন্দ্রা, বঙ্গবন্ধু সেতু, ভালুকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, ঘোড়াশাল, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকার ওপর নজর রাখছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরো মাঠ সমতল করা হয়েছে। অনেক জায়গায় ঘাস লাগানো হয়েছে। বৃষ্টি ও রোদের জন্য পুরো মাঠ ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। বিদু্যৎ সংযোগ, সিলিং ও স্ট্যান্ড ফ্যানসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। জেনারেটর রাখা হয়েছে। মাঠের চারদিকে থাকা গ্রিলের বেড়া নতুন করে রং ও মেরামত করা হয়েছে। যাতে কেউ মূল গেট ছাড়া মাঠের ভেতরে ঢুকতে না পারেন। মাঠের চারদিকের প্রতিটি রাস্তার মোড়ে বসানো হবে চেকপোস্ট।

সূত্রটি বলছে, ঈদ উপলক্ষে বঙ্গভবনসহ আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ঈদের দিন থেকে শুরু করে টানা কয়েক দিন বঙ্গভবনের আশপাশের এলাকার রাস্তায় যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ইতোমধ্যেই গাড়ি পার্কিং ও পার্কিংসহ চলাচলের রাস্তা নির্ধারণ করে দিয়েছে।

পার্কিং এলাকা : সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জাতীয় ঈদগা ময়দানের আশপাশের নিম্নবর্ণিত স্থানগুলো পার্কিং এলাকা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় ঈদগা ময়দানের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে সুপ্রিম কোর্টের অভ্যন্তরে গোল চত্বরের কাছে রাষ্ট্রপতির গাড়িবহর (ভিভিআইপি অ্যালাইটিংয়ের পশ্চিম পার্শ্ব)। সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে দক্ষিণ-পশ্চিম কর্নারে (মাজারসংলগ্ন উত্তর পার্শ্বে) বিচারপতিদের গাড়ি পার্কিং। জাতীয় ঈদগা ময়দানের প্রধান গেটের উত্তর-পশ্চিম দিকে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যসহ ভিআইপিদের গাড়ি পার্কিং। গণপূর্ত ভবনের আঙিনা ও অভ্যন্তরে সরকারি কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের গাড়ি পার্কিং। জিরো পয়েন্ট ও ইউবিএল ক্রসিংয়ের (মুক্তাঙ্গন) উভয় পার্শ্বে সাধারণ মানুষের গাড়ি পার্কিং। দোয়েল চত্বরের দক্ষিণ-পশ্চিম-উত্তর পার্শ্বে সাধারণ পার্কিং। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল থেকে বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেট ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার উভয় পার্শ্বে সাধারণ পার্কিং। মৎস্য ভবন ক্রসিংয়ের পূর্ব দিকে সেগুনবাগিচা কার্পেট গলি রোড ক্রর্সিং পর্যন্ত রাস্তার উভয় পার্শ্বে সাধারণ পার্কিং।

পার্কিংসহ চলাচলের রাস্তা : জাতীয় ঈদগা ময়দানের নিকটবর্তী নির্ধারিত পার্কিংয়ে শুধুমাত্র ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের গাড়ি মৎস্য ভবন হয়ে প্রবেশ করবে। অন্য ব্যক্তিদের গাড়ি এবং বাণিজ্যিক যানবাহনগুলো সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল মোড়-প্রেস ক্লাব লিংক রোড-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পেছনের গলি-সাবকন্ট্রোলরুম গ্যাপ-ইউবিএল ক্রসিং-দোয়েল চত্বর ক্রসিং-মৎস্য ভবন ক্রসিং এ স্থাপিত ব্যরিকেডের বাইরে পার্কিং ও চলাচল করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে