সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও পদক প্রদান অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা

বঙ্গমাতার সহযোগিতাতেই জাতির পিতার সাফল্য

যাযাদি ডেস্ক
  ০৯ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সবসময় সাহস নিয়ে চলতেন উলেস্নখ করে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমার মায়ের মুখে কোনো দিন অভাব-অনটনের কথা শুনিনি। আব্বা দুইটা বছর একটানা জেলের বাইরে ছিলেন কি না আমি জানি না। '৬০ সালে বের হলেন, আবার '৬২ সালে গ্রেপ্তার হন, '৬৪ সালে আবার গ্রেপ্তার হন, আবার '৬৬ সালে। কিন্তু মাকে দেখেছি কখনো হতাশ হতেন না। জেলখানায় মা যখন আব্বার সঙ্গে দেখা করতে যেতেন; তখন বলতেন, তোমার ঘর-সংসার নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না, সেটা আমি দেখব। আব্বা কারাগারে থাকলে দলের কাজও তিনি করতেন। সবসময় ঘর-সংসার সামাল দিতেন।

তিনি বলেন, 'একবার দলের ভেতরে সমস্যা দেখা দেয়। মওলানা ভাসানী দল ছেড়ে চলে যান। তখন দলের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আমার বাবা মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। আম্মা এ ব্যাপারে কোনো দিন অভিযোগ-অনুযোগ করেননি। তিনি হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন। সবসময় স্বামীর পাশে থাকতেন। চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে জীবনে মাকে কখনো ভেঙে পড়তে দেখিনি। বাবার সংগ্রামের ভেতরে ছিল দেশের স্বাধীনতা। এটা পৃথিবীর কেউ না জানুক, মা কিন্তু জানতেন। কারণ, আব্বা মার সঙ্গে সব সময় কথাগুলো বলতেন।'

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও পদক প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমার মাকেও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। মামলায় মাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। একটা পর্যায়ে পাকিস্তানের কিছু নেতা ও আওয়ামী লীগের কিছু নেতা আসেন ৬ দফার পরিবর্তে ৮ দফার প্রস্তাব নিয়ে। আমার মায়ের অদ্ভুত স্মরণশক্তি ছিল। তিনি শুনতে এবং জেলখানায় গিয়ে আব্বার কাছে সেই কথাগুলো বলতেন। আব্বা যে নিদের্শনা দিতেন সেটা নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে দিতেন।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'আইয়ুব খান আব্বাকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে আলোচনা করার কথা বলে। আমার মা সেখানেও বলেন, প্যারোলে না। আইয়ুব খান মামলা প্রত্যাহার করবে। সবাইকে ছেড়ে দেবে। মুক্ত মানুষ হিসেবে যাবে। যখন আব্বা প্যারোলে গেলেন না, আমাদের নেতারা বাড়িতে এসে বললেন, আপনি জানেন? তারা (পাকিস্তানিরা) তো মেরে ফেলবে, আপনি তো বিধবা হবেন। তখন মা বলেছিলেন, আরও তো নেতা আছে, তাদের স্ত্রীরাও বিধবা হবে। আমি একা সধবা থাকার চেষ্টা করব তাদের বাদ দিয়ে? আপনারা একটু চিন্তা করেন, কত দৃঢ় মনোবল ছিল আমার মায়ের।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমার বাবার সাফল্য যদি আপনারা দেখেন, সেই ছাত্রজীবন থেকে মা পাশে থাকাতে তার (বঙ্গবন্ধু) জীবন কিন্তু সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওঠে। শুধু ছাত্রজীবন থেকে নয়, রাজনৈতিক জীবনে তিনি সবসময় আমার বাবার পাশে ছিলেন।'

'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' বইতে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, 'আব্বা-আম্মা ছাড়াও সবসময় রেণু (বঙ্গমাতা) আমাকে কিছু টাকা পয়সা দিয়েছে। রেণু যা কিছু জোগাড় করত, বাড়ি গেলে এবং দরকার হলেই আমাকে দিত, কোনো দিন আপত্তি করেনি। নিজে মোটেই খরচ করত না, গ্রামের বাড়িতে থাকত। আমার জন্য সব রাখত।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমার বাবা যখন বিএ পরীক্ষা দেন, কলকাতায় তখন দাঙ্গা হচ্ছিল। বাবা দাঙ্গা দমনে ঝাঁপিয়ে পড়েন, কিন্তু সে সময় তার মা চলে আসেন তার বাবার লেখাপড়ার সহযোগিতা করার জন্য। মার ধারণা হয়েছিল, তিনি যদি বাবার পাশে থাকেন, বাবা লেখাপড়া করবেন এবং পাস করবেন, যা করেছিলেনও তিনি। এটাও জাতির পিতা তার ''অসমাপ্ত আত্মজীবনী''তে লিখে গেছেন।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গমাতা জাতির পিতাকে বলতেন, 'রাজনীতি করো আমার আপত্তি নেই, কিন্তু পড়াশোনা করতে হবে'। দাদাও বলেছিলেন 'যে কাজই করো, তোমাকে পড়াশোনা করতে হবে'।

'বাবা টানা দুই বছর কখনো জেলের বাইরে না থাকলেও মা সবসময় ঘর-সংসার সামাল দিতেন এবং কখনো হতাশ হননি।'

বঙ্গমাতার ৯৩তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণসহ জাতির বিভিন্ন সন্ধিক্ষণে বঙ্গমাতার সময়োচিত পদক্ষেপ তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, '১৫ আগস্ট ঘাতকের দল শুধু রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবকে হত্যা করেনি, হত্যা করেছে আমার মা, ভাই ও তাদের নববধূদের। পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।'

তিনি বলেন, এ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ দরিদ্র ছিল। প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। তাদের ক্ষুধার অন্ন যোগাতে পারত না। চিকিৎসা পেত না। তাদের থাকার কোনো ঘর ছিল না। এই বঞ্চিত মানুষগুলোর ভাগ্য গড়ে তোলা, এটাই ছিল জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য ও সাধনা।

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক পেলেন যারা

এ বছর চারজন নারী ও জাতীয় নারী ফুটবল দলকে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক দেওয়া হয়েছে। পদকপ্রাপ্ত চারজন হলেন- রাজনীতিতে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন (মরণোত্তর), শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় নাসিমা জামান ববি ও অনিমা মুক্তি গোমেজ এবং গবেষণায় ডা. সেঁজুতি সাহা (মলিকুলার বায়োলজিস্ট)।

বঙ্গমাতার অবদানকে স্মরণীয় রাখার জন্য আটটি ক্ষেত্রে নারীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতি বছর সর্বোচ্চ পাঁচ নারীকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

পদক প্রদান অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর তানিয়া হক বঙ্গমাতার জীবন ও কর্মকান্ডের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান বেগম চেমন আরা তৈয়ব। পুরস্কারপ্রাপ্তদের পক্ষে বক্তব্য দেন জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত একটি অডিও-ভিজু্যয়াল প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আর্থিক অনুদান ও সেলাই মেশিন বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এছাড়া দেশের সাড়ে ৪ হাজার দুস্থ নারীকে সেলাই মেশিন এবং ৩ হাজার জনকে এমএফএসের মাধ্যমে ২ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে