সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

আখাউড়া স্থলবন্দর রপ্তানি আয় কমেছে ৩০৪ কোটি টাকা, আমদানিও অনিয়মিত

মো. বাহারুল ইসলাম মোলস্না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  ০৯ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
বগুড়া শহরের করতোয়া নদীর ওপরে বিকল্প বাঁশের সাঁকো পানি ও কচুরিপানার চাপে হুমকির মুখে পড়ায় (বামে) জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেল ব্রিজের ওপর দিয়ে পারাপার হচ্ছে পথচারীরা -যাযাদি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে গত অর্থবছরে রপ্তানি আয় কমেছে। এক সময় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মাছসহ অর্ধশতাধিক পণ্য ভারতে রপ্তানি হলেও এখন রপ্তানি হচ্ছে হাতেগোনা কয়েকটি পণ্য। মূলত হিমায়িত মাছের ওপরই অনেকাংশে নির্ভর করে এই বন্দরের রপ্তানি বাণিজ্য। তবে মাছ রপ্তানি কমার কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছে ৩৭৬ কোটি ২৩ লাখ টাকার পণ্য। যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩০৪ কোটি টাকা কম।

বন্দর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য চললেও ২০০৮ সালে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় আখাউড়া স্থলবন্দর। মূলত আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে পণ্য রপ্তানি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত প্রায় ৫ বছর আগেও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্যের তালিকায় ছিল- হিমায়িত মাছ, পাথর, রড, সিমেন্ট, তুলা, ভোজ্যতেল, এলপি গ্যাস, পস্নাস্টিক, শুঁটকি ও বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীসহ অর্ধশতাধিক পণ্য। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছোট হয়ে এসেছে সেই তালিকা। বর্তমানে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে হিমায়িত মাছ, রড, সিমেন্ট ও পস্নাস্টিকসহ হাতেগোনা কয়েকটি পণ্য যাচ্ছে ভারতে।

রপ্তানিকৃত পণ্যের অর্ধেকই হিমায়িত মাছ। আর মাছের মধ্যে রয়েছে রুই, পুঁটি, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, পাবদাসহ সব ধরনের চাষের মাছ। প্রতি কেজি মাছের রপ্তানি মূল্য আড়াই মার্কিন ডলার। প্রতিদিন (ছুটির দিন ব্যতীত) গড়ে এক থেকে দেড় লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয় ভারতে।

তবে গত কয়েক মাস ধরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে মাছ রপ্তানি কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। আগে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ টন মাছ রপ্তানি হলেও বর্তমানে তা কমে অর্ধেকে নেমেছে। ফলে সামগ্রিকভাবে বন্দরের রপ্তানি আয় কমেছে। মূলত সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে তাজা মাছ পাচারের কারণে রপ্তানি ক্রমেই কমছে বলে অভিযোগ মাছ রপ্তানিকারকদের।

এ ব্যাপারে আখাউড়া স্থলবন্দরের মাছ রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মিয়া বলেন, আখাউড়া উপজেলার সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে প্রতিনিয়ত তাজা মাছ পাচার হচ্ছে। এর ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা হিমায়িত মাছের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। বিষয়টি বিজিবি, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এটি বন্ধ না করতে পারলে যে কোনো মুহূর্তে হিমায়িত মাছের রপ্তানি বন্ধ হয়ে পড়বে।

এদিকে ভারত থেকে পণ্য আমদানিও এখন অনিয়মিত। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে গম, ভুট্টা, পাথর ও পেঁয়াজ। নিজেদের চাহিদা মতো পণ্য আমদানির সুযোগ না পাওয়ায় আমদানি বাণিজ্যে খুব একটা আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। এতে করে বন্দরের রাজস্ব আদায়ও কমেছে।

আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে, বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি হয়েছিল ৬৮০ কোটি ১১ লাখ ৯৯ হাজার ১৭৪ টাকার পণ্য। ওই অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ২৮৮ কোটি ৪১ লাখ ১৩ হাজার ৪৬৮ টাকার পণ্য।

সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ৩৭৬ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার ৯১১ টাকার পণ্য। আর ভারত থেকে আমদানি হয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ৯৩ লাখ ৬১ হাজার ৫২৮ টাকার পণ্য। আমদানি পণ্য থেকে শুল্ক কর্তৃপক্ষ রাজস্ব পেয়েছে ৫৫ লাখ ৭৮ হাজার ৬৯৮ টাকা।

স্থলবন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় অনেক পণ্য এখন নিজ দেশ থেকেই সংগ্রহ করেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। ফলে রপ্তানি বাণিজ্য ফের বাড়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। তবে আমদানি বাণিজ্যের মাধ্যমে এখনো বন্দরটির ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে। সে জন্য যখন যে পণ্যের চাহিদা, সেটি আমদানির সুযোগ দিতে হবে ব্যবসায়ীদের।

আখাউড়া স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফোরকান আহমেদ খলিফা বলেন, 'কখন কোন পণ্যের চাহিদা তৈরি হবে- সেটি আগে থেকে বলা যায় না। সে জন্যই আমরা সব পণ্য আমদানির জন্য বন্দর খুলে দেওয়ার দাবি করে আসছি। কিন্তু আমাদের সেই দাবি পূরণ হচ্ছে না। সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে কিছু পণ্যের তালিকা দিয়ে আমদানির অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটির এখনো সুরাহা হয়নি।'

ফোরকান আহমেদ খলিফা বলেন, একমাত্র

আমদানি বাণিজ্যের মাধ্যমেই বন্দরে আবারও কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে আসতে পারে। যার মাধ্যমে সরকারও বিপুল অঙ্কের রাজস্ব পাবে।

এ ব্যাপারে আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, 'বন্দরগুলো থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণের বিষয়টি অনেকাংশেই আমদানি বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি অনিয়মিত হওয়ায় রাজস্ব আদায় হচ্ছে কম। আমদানি বাড়াতে ব্যবসায়ীরা যেসব পণ্য আমদানির জন্য তালিকা দিয়েছেন- সেটি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও চিঠি চালাচালি হচ্ছে। অচিরেই এ বিষয়টি সমাধান হবে বলে আশা করছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে