সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ

চক্রের প্রধান হোতাসহ চারজন গ্রেপ্তার, ওয়্যারলেস সেটসহ নানা সরঞ্জাম জব্দ
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৭ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় মূলহোতাসহ চারজনর্ যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের কাছে পাওয়া গেছে কাস্টমস কর্মকর্তাদের নকল পোশাক, ওয়্যারলেস সেট, সিলসহ নানা সরঞ্জাম।

বুধবার ঢাকার কারওয়ান বাজারের্ যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকাল আল মঈন। তিনি বলেন, সম্প্রতি কয়েকজন ভুক্তভোগীর্ যাব-১০ এর কাছে ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তাদের বিষয়ে অভিযোগ দাখিল করেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ আগস্ট রাতের্ যাব-১০ একটি দল নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে গ্রেপ্তার হয় চক্রের মূলহোতা মো. নজরুল ইসলাম (২৯) এবং তার সহযোগী ওয়ায়েশ করোনী ওরফে সেলিম (৪৭), নাসির উদ্দিন (২৬) ও সৈয়দ মোহাম্মদ এনায়েত (৪৮)।

তাদের কাছে পাওয়া যায় ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা সাজার কাজে ব্যবহৃত ইউনিফর্ম, আইডি কার্ড, ওয়্যারলেস সেট, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সিল, স্টিকার, ভিজিটিং কার্ড, নগদ টাকা, বিভিন্ন ব্যাংকের এটিম কার্ড, চেক বই, মোবাইল, একটি প্রাইভেটকার ও ২টি মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ে বলেন, গ্রেপ্তাররা বিলাসী জীবন যাপন করতে এমন প্রতারণার পথ বেছে নেয়। তারা দুই বছর আগে গড়ে তোলে ভুয়া কাস্টমস প্রতারক চক্র। চক্রের সদস্য মোট ৮ জন।

চক্রটি কাস্টমসে চাকরি প্রত্যাশীদের টার্গেট করত। তাদের চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিত। ইতোমধ্যে চক্রটি বহু চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা তাদের গাড়িতে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্টিকার ব্যবহার করত। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন রিসোর্ট ব্যবসায়ীদের রাজস্ব কমিয়ে দেওয়ার কথা বলেও টাকা হাতিয়ে নিত। চক্রটির স্থায়ী কোনো অফিস ছিল না। তারা ওয়ায়েশ করোনির নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার ভাড়া বাসাকে অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করত।

জানা গেছে, গ্রেপ্তার নজরুল স্থানীয় একটি কলেজ থেকে বিবিএ পাস করে। ২০১২ সালে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি পেতে ১১ লাখ টাকা দিয়ে এক নারীর কাছ থেকে প্রতারিত হন। ২০১৩ সালে নৈশপ্রহরী ও ২০১৭ সালে উচ্চমান সহকারী হিসেবে চাকরির জন্য টাকা দিয়ে আবার প্রতারিত হন। বিভিন্ন সময়ে কাস্টমসে চাকরির পরীক্ষায় অংশ নেন। কাস্টমস অফিসে ঘোরাফেরার সময় বিভিন্ন কর্মচারীর বিলাসবহুল জীবন যাপন দেখে তিনি প্রলুব্ধ হন। এরপর নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কাস্টমস প্রতারক চক্র গড়ে তোলেন। কাস্টমসে পিওন, ঝাড়দার ও অন্য পদে চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তা আত্মসাৎ করত। তিনি নিজেকে কাস্টমসের সহকারী কমিশনার ও রেভিনিউ অফিসার আবার কখনো সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে পরিচয় দিতেন। বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে আসা অবৈধ স্বর্ণের চালান ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিতেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় বাজারে একটি রাইস এজেন্সি পরিচালনা করতেন। একই সঙ্গে তিনি মানবসম্পদ রপ্তানির ব্যবসা করতেন। প্রতারণার টাকায় তিনি ফ্ল্যাট বুকিং, জমি ক্রয়, বাড়ি ও বিভিন্নভাবে সম্পদ গড়ে তুলেছেন।

গ্রেপ্তার সেলিম বহু বছর প্রবাসে ছিলেন। নজরুল তার পূর্ব পরিচিত। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রতারণা চক্রে জড়িয়ে পড়েন। বিদেশে লোক পাঠানো ও পাসপোর্ট তৈরির কাজ করতেন তিনি।

এনায়েত মূলত পাঠাও চালক। এক বছর আগে নজরুলের সঙ্গে পরিচয়। নজরুলের পরামর্শে তিনি মাসিক ২০ হাজার টাকায় একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করেন। তিনি কাস্টমসে চাকরি প্রত্যাশীদের নজরুলের অফিসে আনা-নেওয়ার কাজ করতেন। নাসির উদ্দিন মূলত একটি চালের দোকানের কর্মচারী। তিনি মোটর সাইকেল চালাতেন। তিনিও চাকরি প্রত্যাশীদের নজরুলের অফিসে আনা-নেওয়ার কাজে জড়িত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে