সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
জলবায়ু পরিবর্তন

ভারতের চাল রপ্তানি বন্ধে বিশ্বে 'তীব্র' হচ্ছে সংকট

যাযাদি ডেস্ক
  ৩০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
রাজধানীর লালবাগের জগন্নাথশাহ রোডে ওএমএসের ট্রাকসেল থেকে মঙ্গলবার ন্যায্যমূল্যে চাল কিনছেন ক্রেতারা -ফোকাস বাংলা

বিশ্বের চাল রপ্তানিতে শীর্ষ ভারত। দেশের ভেতরে চালের চড়া দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সাদা চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে দেশের সরকার। এরপর চাল রপ্তানিতে আরও কিছু বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন- আধাসিদ্ধ চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

এই কড়াকড়ি বিশ্বব্যাপী খাদ্য মূল্যস্ফীতির শঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। কৃষকের জীবিকাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ফলে চালনির্ভর বেশ কয়েকটি দেশ এই নিষেধাজ্ঞা জরুরি ভিত্তিতে তুলে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। বিশ্বের ৩০০ কোটির বেশি মানুষের প্রধান খাদ্য চাল। বিশ্বব্যাপী চাল রপ্তানির ৪০ শতাংশই করে ভারত।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার সর্বশেষ কারণ হলো ভারতের এই নিষেধাজ্ঞা। ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এল নিনোর মতো বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এমনিতেই গত কয়েক বছর ধরে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক অবস্থায় নেই।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ববাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। তাতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে পারে গেস্নাবাল সাউথের দরিদ্র দেশগুলো।

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের কৃষক সতীশ কুমার সিএনএনকে বলেন, 'এই নিষেধাজ্ঞায় আমাদের সবার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে যাচ্ছে। রপ্তানি না হলে আমরা দাম বেশি পাব না। এই বন্যা আমাদের কৃষকদের জন্য মরণ আঘাত। আর এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের শেষ করে দেবে।'

এদিকে, হঠাৎ করে ভারতের চাল রপ্তানির নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রেও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসেবে, যুক্তরাষ্ট্রের চালের দাম এক যুগের মধ্যে এখন সর্বোচ্চ।

মান ও খ্যাতির দিক থেকে ভারতের সেরা চাল বাসমতি। এ চালের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। তবু যে সাদা চালের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তা দেশের মোট চাল রপ্তানির ২৫ শতাংশের মতো।

অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে কেবল ভারতই খাদ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে- বিষয়টি এমন নয়। তবে রাশিয়া কৃষ্ণ সাগর শস্য চুক্তি প্রত্যাহারের এক সপ্তাহ পর চাল রপ্তানিতে ভারতের ওই নিষেধাজ্ঞা বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। কৃষ্ণ সাগর শস্য চুক্তি অনুযায়ীই ইউক্রেন শস্য রপ্তানি করত। ওই চুক্তি প্রত্যাহারের ফলে বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের খাদ্য সংকটের উদ্বেগে পড়ে।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডবিস্নউএফপি) প্রধান অর্থনীতিবিদ আরিফ হুসাইন সিএনএনকে বলেন, 'এখানে প্রধান বিষয় হলো চালই কেবল একমাত্র খাদ্যপণ্য নয়। ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের দরিদ্র মানুষের সিংহভাগ খাদ্যের যোগান দেয়।'

নেপালি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ভারতের নিষেধাজ্ঞার পর তাদের দেশে চালের দাম বেড়ে গেছে। ভিয়েতনামে এক দশকের মধ্যে এখন চালের দাম সর্বোচ্চ। বিশ্বে চাল রপ্তানিতে দ্বিতীয় থাইল্যান্ড। কিন্তু থাই চাল রপ্তানি সংস্থার মতে, কয়েক সপ্তাহ ধরে সেখানেও চালের দাম বাড়তি। ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে সিএনএন জানিয়েছে, চাল রপ্তানি ফের চালু করতে দিলিস্নর কাছে আবেদন জানিয়েছে সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্স। বিষয়টি নিয়ে ভারতের কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে কোনো মন্তব্য জানতে পারেনি সিএনএন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়েরে-অলিভিয়ের গৌরিঞ্চাস জানান, এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে ভারতে অনুরোধ করছেন তারা।

এদিকে, সরকারি হিসেবে, ভারতের মোট শ্রমশক্তির অর্ধেক কৃষক। দেশটির মধ্য, দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে বেশি ধান চাষ হয়। রয়টার্স জানিয়েছে, গ্রীষ্মের চাষাবাদ সাধারণত জুনে শুরু হয়। ওই সময় বর্ষার বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। ভারতের মোট চাল উৎপাদনের ৮০ শতাংশই হয় গরমের সময়ে। কিন্তু চলতি বছর বর্ষা শুরু হয়েছে দেরিতে। ফলে মধ্য জুন পর্যন্ত পানির ঘাটতি ছিল অনেক বেশি। এরপর অবশেষে যখন বৃষ্টি শুরু হলো, তখন গোটা দেশকে ভাসিয়ে দিল। বন্যা শুরু হলো, ধ্বংস করে দিল ফসলের ক্ষেত।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা গত মাসে সতর্ক করে বলেছে, আরও চরম আবহাওয়া ও রেকর্ড তাপমাত্রার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, কারণ এল নিনো এখন সক্রিয়।

এল নিনো চলাকালে নিরক্ষরেখা বরাবর পশ্চিমমুখী বায়ুপ্রবাহ ধীর হয়ে যায় এবং পানির উষ্ণ স্রোতগুলোর পূর্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়, এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। উষ্ণায়নের এই প্রভাব ভারতের হাজারও কৃষক টের পাচ্ছে। ফলে ধান বাদ দিয়ে অন্য ফসল ফলানোর কথাও এখন ভাবছেন তারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে