সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

জাল টাকা তৈরি চক্রের সন্ধান, ৫ জন গ্রেপ্তার

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

জাল টাকা তৈরি ও সারা দেশে বিক্রির সঙ্গে জড়িত বিশাল একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছের্ যাব। চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারদের একটি ছোট আকারের জাল টাকা তৈরির কারখানারও সন্ধান মিলেছে। গ্রেপ্তারদের কাছে পাওয়া গেছে প্রায় ৪৬ লাখ টাকার জাল নোট। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের সন্ধান চলছে।

র্

যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সারা দেশেই জাল টাকা তৈরি ও বিক্রির বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠার তথ্য পাওয়া যায়। প্রায় এক বছর ধরে জাল টাকা তৈরি ও বিক্রির বিশাল এই নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। বিশাল এই নেটওয়ার্কে রয়েছে বহু সদস্য। চক্রগুলো জাল টাকা তৈরির পর তা সারা দেশেই ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা, গাজীপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী ও বরিশালসহ দেশের অনেক জেলায় জাল টাকা বেচাকেনার সঙ্গে জড়িতরা ব্যাপকভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। চক্রগুলো জাল নোটের ব্যবসা করে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত

করছে। হাতিয়ে নিচ্ছে আসল টাকা। এমন তথ্য জানানো হয়র্ যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়নকে।

র্

যাব-১০ জানায়, এমন তথ্যের সূত্র ধরেই গত ১ সেপ্টেম্বর বিকালে ঢাকার আশুলিয়ায় এবং রাতে ময়মনসিংহের ভালুকা এলাকায় অভিযান চালানো হয়। পৃথক দুইটি অভিযানে গ্রেপ্তার হয় জাল টাকা তৈরি চক্রের মূলহোতা সাইফুল ইসলামকে (২২)। তার পিতার নাম আলী মিয়া। বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর থানাধীন কান্দিগাঁও চড়ারপাড়ায়। তার তথ্য মতে তারই সহযোগী ও জাল টাকা চক্রের সদস্য বরিশাল জেলার উজিরপুর থানাধীন রাজাপুর গ্রামের মোতাহার খানের ছেলে শাহিন খান (২৪), ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানাধীন বাশারুক গ্রামের মৃত শহিদুল ইসলামের ছেলে রনু মিয়া (৩৫), সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থানাধীন ধানগড়া গ্রামের আব্দুস সালাম শেখের ছেলে আল-আমিন শেখ (২৫) ও নীলফামারী জেলার ডিমলা থানাধীন দক্ষিণ সুন্দরখাতা গ্রামের আবু হানিফের ছেলে লাজু আহম্মেদকে (২৭) গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের তথ্য মতে একটি মিনি জাল টাকা তৈরির কারখানাও আবিষ্কৃত হয়। সেই কারখানা থেকে জব্দ হয় ৪৫ লাখ ৫০ হাজার ৮০০ টাকার জাল নোট। নোটগুলো ১ হাজার, ৫০০ ও ২০০ টাকা মূল্যমানের। জব্দ হয় জাল টাকা তৈরিতে ব্যবহৃত ১টি ল্যাপটপ, ২টি প্রিন্টার, ৬ বোতল স্পিরিট, ৯টি টোনার ও কার্টিজসহ নানা সরঞ্জাম।

র্

যাব বলছে, গ্রেপ্তাররা প্রায় এক বছর ধরে জাল নোট তৈরি করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছিল। গ্রেপ্তাররা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পেইজ ও গ্রম্নপে জাল টাকা তৈরি ও ব্যবসার প্রতি আকৃষ্ট করতে বিজ্ঞাপন দিত। জাল টাকা বিক্রির জন্য সাইফুল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি গ্রম্নপ খুলেছিল। চক্রটির একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রম্নপ ছিল। সেই গ্রম্নপেই জাল টাকা সংক্রান্ত নানা বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করত। গ্রম্নপটির অ্যাডমিন ছিল শাহিন।

র্

যাব বলছে, সাইফুল অত্যন্ত নিখুঁত জাল টাকা তৈরিতে সিদ্ধহস্ত। জাল টাকা তৈরির পর সাইফুল তা রনু মিয়াকে দিত। রনু চক্রের সদস্য আল-আমিন ও লাজুকে সঙ্গে নিয়ে কাটিং ও বান্ডিল করত। এরপর তা সারা দেশে ছড়িয়ে দিত। প্রতিদিন তারা ২ থেকে ৩ লাখ টাকার জাল নোট বিক্রি করত। এক লাখ টাকার জাল নোট বিক্রি করত ২৫ হাজার টাকায়। ক্রেতারা এসব জাল টাকা অধিক জনসমাগমস্থল, বিভিন্ন অনুষ্ঠান, উৎসবসহ যেখানে বেশি জনসমাগম হয়, সেখানে চালিয়ে দিত।

গ্রেপ্তার সাইফুল অষ্টম শ্রেণি পাস। ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা এলাকার একটি সু্যয়েটার তৈরির কারখানার শ্রমিক। শ্রমিকের পেশার আড়ালে জাল টাকা তৈরি করত। গ্রেপ্তার শাহিন অনার্স তৃতীয় বর্ষ সম্মান শ্রেণির ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি স্বল্প সময়ে বিশাল টাকার মালিক হতেই জাল টাকার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। রনু মিয়া নবম শ্রেণি পাস। গাজীপুর জেলার কাশেমপুর এলাকায় ডিমের ব্যবসা করত। বেশি লাভের জন্য জাল টাকার ব্যবসায় নামে। আল-আমিন ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি ঢাকার আশুলিয়ার একটি সু্যয়েটার তৈরির কারখানায় চাকরি করত। অল্প দিনে বড় লোক হতেই জাল টাকার ব্যবসায় নেমেছিল। লাজু পঞ্চম শ্রেণি পাস। ঢাকার আশুলিয়া এলাকার একটি সু্যয়েটার তৈরির কারখানায় কাজ করত। চাকরির সূত্র ধরে একই কোম্পানিতে চাকরি করা আল-আমিনের সঙ্গে পরিচয়ে সুবাদে জাল টাকার ব্যবসায় নামে। এক বছরে চক্রটি বিপুল অঙ্কের জাল টাকা সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে