রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

সিরাজগঞ্জ ও জামালপুরে চরম দুর্ভোগে বানভাসি মানুষ

পদ্মা ও যমুনায় পানি বৃদ্ধি ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির আশঙ্কা
যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
বসতবাড়ি পস্নাবিত হওয়ায় গবাদি পশু নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে বানভাসি মানুষ -ফোকাস বাংলা

উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও উজানে অবিরাম বর্ষণে যমুনা ও পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে যমুনার পানিতে পস্নাবিত হয়েছে সিরাজগঞ্জের প্রায় ৪২টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল। একই সঙ্গে তলিয়ে গেছে এসব অঞ্চলের আবাদি জমি। পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন শত শত পরিবারের মানুষ। যমুনার পানি জামালপুর পয়েন্টে কিছুটা কমেছে। তবে জেলায় ১৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার আংশিক বন্যাকবলিত হয়েছে। এতে ৪২ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন। এদিকে, রাজবাড়ীতে হু-হু করে বাড়ছে পদ্মার পানি। জেলার তিনটি গেজ স্টেশন পয়েন্টের মধ্যে একটি পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-

রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ সেন্টিমিটার বেড়ে এখন পদ্মার পানি জেলার গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার সকাল সোয়া ৯টার দিকে দৌলতদিয়ার পানি পরিমাপক (গেজ রিডার) সালমা খাতুন জানান, পদ্মা নদীর পানি পরিমাপের জন্য রাজবাড়ী জেলা সদরের মহেন্দ্রপুর, পাংশার সেনগ্রাম ও গোয়ালন্দের দৌলতদিয়ায় গেজ পয়েন্ট রয়েছে। এর মধ্যে গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া পয়েন্টে শনিবার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এছাড়া মহেন্দ্রপুর ও সেনগ্রাম পয়েন্টে পদ্মার পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।

এদিকে, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুল হক জানান, এখন পর্যন্ত জেলার কোথাও বন্যা দেখা দেয়নি। এমনকি কোনো নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হওয়ার খবরও তাদের কাছে নেই। প্রস্তুতি হিসেবে ফ্লাড সেন্টার প্রস্তুতের পাশাপাশি সাড়ে চারশ' টন চাল ও নগদ ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা রয়েছে। এছাড়া তারা সব সময় এ বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখছেন।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পস্নাবিত হয়েছে সিরাজগঞ্জের প্রায় ৪২টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল। একই সঙ্গে তলিয়ে গেছে এসব অঞ্চলের আবাদি জমি ও পানিবন্দি হয়ে পড়ছে শত শত পরিবার। রোববার দুপুরে সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, শনিবার পর্যন্ত জেলার ৪২টি ইউনিয়নে প্রায় এক হাজার ৬৫৭টি পরিবার পানিবন্দি হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে সেটা আজ বেড়ে হয় তো দুই হাজারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিৎ কুমার সরকার বলেন, 'যমুনা নদীর পানি সকালে সিরাজগঞ্জের হার্ড পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে কাজীপুর মেঘাই পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে স্বল্পমেয়াদি বন্যাপরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। তবে পরবর্তীতে উন্নতি লাভ করবে।'

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলাউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, 'যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে শনিবার পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ সদর ও কাজীপুর উপজেলার ৪৪৫ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে রোপা আমন ২৮৫ হেক্টর, সবজি ৪৩ হেক্টর, আউশ ৪০ হেক্টর, বীজতলা ৩২ হেক্টর, কলা ৫ হেক্টর ও আখ ২৫ হেক্টর।

জামালপুর প্রতিনিধি জানান, জেলায় কমতে শুরু করেছে যমুনা নদীর পানি। রোববার বিকাল ৩টার দিকে দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার পানি কমে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এখনো জেলার ৪২ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক আবদুল মান্নান বলেন, 'শনিবার রাত থেকে ২১ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। এখন বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।'

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার আংশিক বন্যাকবলিত হয়েছে। ২৫টি বিদ্যালয় পস্নাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ২৫ কিলোমিটার রাস্তা।'

ইসলামপুর উপজেলার পাথশী ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইফতেখার আলম বলেন, 'পানি কমতে শুরু করেছে। এখনো আমার ইউনিয়নে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এই ইউনিয়নে ৩০০ লোকের জন্য ১০ কেজি করে চাল এসেছিল। আমরা ৩০০ লোককে ত্রাণ সহায়তা দিতে পেরেছি।'

এদিকে সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জের যমুনা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষ। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। তবে বেশ কিছু এলাকায় পৌঁছায়নি সরকারি ত্রাণ সহায়তা?।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, 'যমুনার পানি কমতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত এলাকায় ৩৯ টন চাল ও ৫৪৯ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।'

অন্যদিকে দেশের কোথাও হালকা ও মাঝারি, আবার কোথাও ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

তাপমাত্রার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

এদিকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সন্দ্বীপে ৮৮ মিলিমিটার।

শনিবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ঈশ্বরদীতে ৩৭ দশমিক ৫, রোববার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে টাঙ্গাইলে ২১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে